করোনাকাল পেরিয়ে আবার ব্যস্ত শুটিং পাড়া। প্রতিবছরের মতো এবারেও টিভি, ইউটিউব মিলে বিশাল আয়োজন ভালোবাসা দিবসের নাটক এবং শর্টফিল্ম নিয়ে। শত শত কাজের ভিড়ে কোন কোন নাটক বা শর্টফিল্মগুলো মনোরঞ্জন করতে পারলো দর্শকের, চলুন জেনে নেয়া যাক...
১. কমলা রঙের রোদ: এক ডাক্তার দম্পতির গল্প, দুইজন দুইজনকে পছন্দ করেই বিয়ে। কিন্তু বিয়ের তিন বছর পরেও সন্তান না হওয়ায় পারিপার্শ্বিক যে চাপ দিয়ে যেতে হয়, সেটার বাজে অভিজ্ঞতা নিয়েই এ নাটক। সেটাকেই বা তারা কিভাবে সামলে নিবেন! জনপ্রিয় নির্মাতা শিহাব শাহীনের পরিচালনার এই নাটকের গল্প তাদেরই, যারা সন্তানের আকাঙখায় অপেক্ষা করেন বহু বছর। গল্পের শেষে চমকপ্রদ কিছু ঘটেনি, বাস্তবিকই রাখা হয়েছে। অভিনয়ে তাসনিয়া ফারিন ও তাহসান এত ভালো করেছেন, সাথে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়শিল্পী খালেকুজ্জামান, সাবিহা জামান, মিলি বাশার। এককথায় অনবদ্য নাটক।
২. অথবা প্রেমের গল্প: গ্রামে আসা এক শহুরে তরুণী ফোনের জন্য ব্যতিকব্যস্ত। কিন্তু তাকে ফোন দেয়া হয় না। লুকিয়ে একটা দোকান থেকে ফোন করতে যায় নিয়মিত, তাকে ভালো লেগে যায় সেই দোকানের মালিকের ছেলের। এরপরই এগিয়ে যায় গল্প, যেটার শেষ হয়েছে মুগ্ধতা ছড়িয়ে। শুরুর দিকটা অনেকেই ভাবতে পারেন ভারতের একটা জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের সাথে মিলের কথা, তবে এটার চিত্রনাট্য পুরোই ভিন্ন। অভিনয়ে শাওন সবসময়ই চমৎকার, তরুণ তুর্কির মধ্যে তাকে অভিনয়ে নিলে নির্মাতারা নির্ভার থাকতে পারেন। নাজিফা তুষিকে অনেকদিন বাদে দেখা গেল। ভালোই করেছেন, তবে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লেগেছে।
রায়হান রাফির অন্যতম সেরা নির্মাণ, ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে উনার নির্মাণে এটাই বেশি ভালো লেগেছে। তবে সবচেয়ে বেশি বাহবা পাবেন চিত্রগ্রাহক রাজু রাজ, উনার অনিন্দ্যসুন্দর সিনেমাটোগ্রাফি এই শর্টফিল্মের মূল প্রাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর নিশ্চিত এই শর্টফিল্মের পর সুনামগঞ্জের শহীদ সিরাজ লেকের (নীলাদ্রি লেক নামে পরিচিত) জনপ্রিয়তা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। অনেকগুলো সুন্দর দৃশ্য দেখা হয়েছে আমাদের।
৩. রেশ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'হঠাৎ দেখা'র মতো এক প্রাক্তনের দেখা নিয়ে এই শর্টফিল্ম। বেশ কয়েক বছর পর দুইজনের দেখা। প্রেমিক এখন প্রতিষ্ঠিত, প্রেমিকা তার নতুন সংসার নিয়ে সুখী। প্রেমিকের মনে একটাই প্রশ্ন, প্রথম প্রেমকে সে আদৌ ভুলে গেছে কিনা! রোমান্টিক গল্প বলার ক্ষেত্রে মিজানুর রহমান আরিয়ানের জুড়ি মেলা ভার, এই শর্টফিল্মটাও দারুণ। অভিনয়ে শ্যামল মাওলা ও তাসনুভা তিশার ফ্রেশ জুটি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
৪. একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে: উবারে চালানো গাড়ি ড্রাইভারের সঙ্গে এক কস্টিউম ডিজাইনের কাছে আসার গল্প এটি। বাকি দুটোর চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল গল্প লাগলেও অনম বিশ্বাস উনার বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্যে বেশ আগ্রহ জাগানিয়া করেছেন। অভিনয়ে খায়রুল বাশার খুবই ভালো করেছেন, গতবারের মতো এবারেও তার উপস্থিতি আগ্রহ বাড়িয়েছে, বেশ চার্মিং লেগেছে। টয়া চলনসই, তবে বিরক্তিকর লেগেছে টয়ার এসিস্ট্যান্ট রুপী চরিত্রটাকে। আজকের যুগে এসে হাসির পাত্র বানানোর জন্য এমন চরিত্র রাখা হতাশাজনক। অনেকগুলো দৃশ্যের মধ্যে শাপলা ফুল দেয়ার দৃশ্যটা অনেকদিন মনে থাকবে।
৫. শূন্য থেকে শুরু: শঙখ দাশগুপ্তের নির্মাণে বছর চারেক পর এই সিরিজে ফিরলেন কাছে এক সময়ের আসার গল্পের নিয়মিত তারকা তাহসান। গল্পে তিনি একজন লেখক, তবে সামাজিকতায় থাকেন না। দূরে পাহাড়ে বসবাস, সেখানকার ছেলেদের পড়ান। তার ইন্টারভিউ নিতে আসে এক তরুণী সাংবাদিক। এরপর এগিয়ে যায় গল্প। শুরুটা ধীরলয়ে বলা যায় পরিচিত গল্প। তবে শেষটা ভালোভাবে হওয়ায় নাটকটা প্রশংসা পাবে। তাহসানের পরিশীলিত অভিনয়ের সঙ্গে সুনেরাহ প্রথমদিকে তাল মিলাতে না পারলেও শেষে ভালো করেছেন।
৬. বেস্ট ফ্রেন্ড ৩: প্রবীর রায় চৌধুরীর জনপ্রিয় সিরিজ বেস্ট ফ্রেন্ড এর সর্বশেষ পর্ব ছিল এটি। মূল চরিত্র জোভানকে কেন্দ্র করে ওঠা এই পর্বে এসেছেন প্রথম পর্বের নায়িকা মেহজাবীন। তাদের দুইজনের কাছে আসার গল্পই ছিল এটি। আদর আজাদের পাশাপাশি তাসনিয়া ফারিণ ছিল বিশেষ চরিত্রে। বলা যায় একটা সুন্দর আয়োজন ছিল।
৭. সিদ্ধান্ত: গানচিলের প্রযোজক আসিফ ইকবালের কাহিনীতে এই নাটকে দেখা যায় এক সদ্যজাত শিশুর কঠিন রোগ নিয়ে বাবা-মায়ের কী ধরনের অনুভূতি হয়, সেটি। মাহমুদুর রহমান হিমির পরিচালনায় আফরান নিশো ও মেহজাবীনের পরিশীলিত অভিনয় ও তাদের সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য প্রশংসার দাবিদার।
৮. মাজনু: বাংলাদেশে থাকা এক বিহারী ছেলের গল্প ছিল ভিকি জাহেদের এই নাটকে। ছোটবেলা থেকেই ভালোবেসে এসেছে বাংলাদেশি মেয়েকে, কিন্তু সে ভালোবাসে আরেকজন৷ তাদের দুইজনকে মিলাতে গিয়ে অনেক বাজে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আফরান নিশোর ভালো অভিনয়, মেহজাবীন যদিও আরো ভালো করার সুযোগ ছিল। স্বল্প সময়ে খায়রুল বাশার চমৎকার করেছেন।
৯. হাফ হানিমুন: নিজের অনিচ্ছায় তিশাকে বিয়ে করেছে তাহসান। কিন্তু হানিমুন করতে এসে জানতে পারে তিশার পূর্বপ্রেমিক আছে, এখানে নিতে আসবে! মাবরুর রশিদ বান্নাহ র পরিচালনায় এই নাটকটি উপভোগ্য, বিশেষ করে তিশার অভিনয় দারুণ হয়েছে।
১০. প্রান ফ্রুটো শর্ট ফিল্ম: গেল বেশ কয়েকবারের মতো এবারেও ভালোবাসা দিবসের জন্য প্রান ফ্রুটো বানিয়েছে পাঁচটি শর্টফিল্ম। গতবারের মতো কাজল আরেফিন অমিই ছিলেন নির্মাণের দায়িত্বে, পাঁচটিই বেশ ভালো কাজ হয়েছে। এর মধ্যে বেশি ভালো লেগেছে ইয়াশ রোহান, খালেকুজ্জামান, পাপিয়া অভিনীত 'হোম'। মনোজ, অথৈ ও মনিরা মিঠু অভিনীত 'উইশ', তামিম মৃধা, বৃষ্টি, পাভেল অভিনীত 'স্ট্যাটাস', মাসুম বাশার, শিল্পী সরকার অপু, পারসা ইভানা অভিনীত 'ডিস্টেন্স' ও পলাশ, রিয়া অভিনীত 'প্রোপোজ ২'। পাঁচটিই সম্পর্কের নানান গল্প বলেছে।
এছাড়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কাজলরেখা বিলোপ, ভুলজন্ম, বাসায় কি মানবে?, ফিমেল,লতা অডিও অন্যতম।