২০০৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল তৌকীর আহমেদের পরিচালিত সিনেমা দারুচিনি দ্বীপ। তারপর দীর্ঘ একটা বিরতি দিয়ে ২০১৬ সালে এসেছিল অজ্ঞাতনামা। কেন মেধাবী একজন পরিচালক সিনেমা নির্মাণ থেকে দূরে ছিলেন এতগুলো বছর? সিনেগল্পকে সেই গল্প শুনিয়েছেন তৌকির নিজেই...

"দারুচিনি দ্বীপ সিনেমার পর আমি একটা দীর্ঘ বিরতি নিয়েছিলাম। বিরতি নেয়ার কারণ ছিল। যে ধরনের সিনেমা বানাতে চাচ্ছিলাম, সে ধরনের সিনেমায় অর্থলগ্নি করার জন্য প্রোডিউসার পাচ্ছিলাম না। সবাই আমাকে বলে- তৌকির আহমেদ তো চমৎকার সিনেমা বানান। কিন্তু কেউ আমার সিনেমা প্রোডিউস করতে চান না। এ এক অদ্ভুত জটিলতা। পরিচালনা থেকে এক অর্থে অনেকটাই মন উঠে গেল।

পরিচালনা থেকে দূরে থাকলেও, অভিনয় থেকে দূরে থাকলাম না। অনেক বছর পর সিনেমায় অভিনয় করলাম, নাম 'জালালের গল্প',পরিচালক আবু শাহেদ ইমন। এই সিনেমা নিয়ে আমরা বেশ কয়েকটা ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যালে গেলাম। এরকম একটা ফেস্টিভ্যালে আমার বিখ্যাত  ইরানিয়ান ফিল্মমেকার মহসেন মাখমালবফের সাথে দেখা হল। জালালের গল্পে তিনি আমার কাজের প্রশংসা করলেন। আমার পরিচালিত সিনেমা 'রূপকথার গল্প' দেখেছিলেন তিনি, সেটারও প্রশংসা করলেন। সামনে কী সিনেমা বানাচ্ছি, জিজ্ঞাসা করলেন। আমি উত্তর দিতে পারলাম না। 

সেরাতে আমি ঘুমাতে পারলাম না। সারারাত ছটফট করলাম। মহসেন মাখমালবফের কথাগুলো বারবার মনে পড়ছিল আর মনে হচ্ছিল আমার সিনেমা বানানো দরকার আবারও।

বেশ সময় নিয়ে একটা স্ক্রিপ্ট লিখে ফেললাম।গল্পটা বেসিক্যালি একটা মঞ্চনাটক ছিল, সেটাকে আমি সিনেমার স্ক্রিপ্টে রূপ দিলাম। বিপাশা পর্যন্ত বলল- 'কী দরকার এটাকে সিনেমা করার? এটা মঞ্চ নাটক হিসেবেই ঠিকঠাক আছে!' আমি কর্ণপাত করলাম না।

তৌকীর আহমেদ

রাজস্থানে একটা ফেস্টিভ্যালে যাওয়ার সময় আবু শাহেদ ইমনকে স্ক্রিপ্টটা শোনালাম। ইমন বলল- চমৎকার স্ক্রিপ্ট হয়েছে তৌকির ভাই, এটা থেকে ভাল সিনেমা সম্ভব। আপনার সাথে থাকতে চাই। 

চ্যানেল আইয়ের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পেলাম। বাজেট খুব একটা বেশি না। কিন্তু আমার কাছে যা ছিল, তাই নিয়েই আমি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। এই টাকায় যে ক্যামেরা নেয়া সম্ভব, সেটাই নিলাম। রিয়েল লোকেশনে, পরীক্ষিত শিল্পীদের নিয়ে শুটিং করলাম। আর এভাবেই তৈরি হল অজ্ঞাতনামা।

দারুচিনি দ্বীপের পর সিনেমা থেকে এত দীর্ঘ বিরতি নেয়াটা আমার আসলে ঠিক হয়নি। এত বড় বিরতি আর নিচ্ছি না। মার্চে আসবে আমার পরবর্তী সিনেমা স্ফুলিঙ্গ৷ এখন থেকে প্রতিবছর একটি করে হলেও সিনেমা বানাব আমি। আর ঠিকঠাক  প্রোডিউসার পেলে, সিনেমার সংখ্যাটা বছরে একটির বদলে দুটিও হতে পারে।"

-তৌকির আহমেদ


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা