বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ, সেই সময়ের কিছু তরুন এবং দেশ স্বাধীনের পরে বর্তমান সময়ের একটি তরুন ব্র্যান্ডের সদস্যদের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়েই সিনেমার গল্প...
নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা তৌকীর আহমেদ। তবে দেশের এই জনপ্রিয় অভিনেতা টেলিভিশনের গন্ডি ছাড়িয়ে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমার পরিচালক হিসেবেও নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অন্য উচ্চতায়৷ নির্মাতা হিসেবে তার প্রথম সিনেমা ‘জয়যাত্রা’ দিয়েই তিনি প্রমান করেছেন যে একজন দক্ষ এবং শক্তিশালী নির্মাতার আগমন ঘটেছে আমাদের সিনেমা জগতে। প্রথম সিনেমা দিয়েই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বগলদাবা করেন তিনি সেরা পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে।
পরবর্তীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬ তে সেরা চলচ্চিত্র ও সেরা গল্পের পুরস্কার পায় তার পরিচালিত ‘অজ্ঞাতনামা’। তৌকীর আহমেদ পরিচালিত সর্বশেষ সিনেমা ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ২০১৯ সালের সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে। সিনেমাটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯ এ মোট তিনটি বিভাগে পুরস্কার জয় করে নিয়েছে।
এবার নিজের পরিচালিত নতুন সিনেমা নিয়ে আবারো বড় পর্দায় ফিরছেন তিনি। সিনেমার নাম ‘স্ফুলিঙ্গ’। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ সিনেমাটি প্রযোজনা করছে। এই সিনেমা সম্পর্কে তৌকীর আহমেদ জানান, ‘অবশেষে আমার নতুন সিনেমার কাজ শুরু করতে পারছি। করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের সবকিছু উল্টেপাল্টে গিয়েছিলো। তবুও আমরা এরকম পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সিনেমার কাজ সম্পন্ন করেছি।
তিনি আরও জানান, ‘বঙ্গবন্ধুর কর্মজীবন, তার আদর্শ এবং তিনি যে জাতির স্থপতি এই বিষয়টি আরেকবার তরুণ সমাজের কাছে তুলে ধরতে চাই।’ বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি ব্যান্ড দল ও তাদের সদস্যদের গল্পে নির্মিত হয়েছে ‘স্ফুলিঙ্গ’ নামক সিনেমাটি। কিছুদিন আগেই প্রমোশনের অংশ হিসেবে পোষ্টার, ট্রেলার রিলিজ দেয়া হয়েছে। দুই মিনিট বিশ সেকেন্ডের এই ট্রেলারে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ, সেই সময়ের কিছু তরুন এবং দেশ স্বাধীনের পরে বর্তমান সময়ের একটি তরুন ব্র্যান্ডের সদস্যদের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়েই সিনেমার গল্প।
তৌকির আহমেদ সবসময়ই ভিন্নধর্মী গল্প নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। জয়যাত্রা, রূপকথার গল্প, হালদা, অজ্ঞাতনামা বা ফাগুন হাওয়ায় প্রতিটি সিনেমাই ভিন্ন ভিন্ন গল্প বলেছে। এবারো তার নির্মানের মুন্সিয়ানা আমাদের হতাশ করবে না বলেই আশা করা যাচ্ছে।
‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমার মধ্যে দিয়ে প্রায় ১৩ বছর পরে আবারো তৌকির আহমেদের পরিচালনায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন আমাদের দেশের আলোচিত এবং দক্ষ অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। ২০০৭ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হবার পরে মম ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমাতে অভিনয় করেন। ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমায় পরিচালক হিসেবে তৌকীর আহমেদের সাথে কাজ করেই তিনি অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। মাঝে ‘ছুয়ে দিলে মন’ এবং ‘দহন’ সিনেমায় তার অভিনয় প্রশংসা পায়। এতো লম্বা সময়ের পরে আবারো তৌকির আহমেদের সাথে কাজ করা নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বসিত তিনি। জাকিয়া বারী মমকে একটি নেতিবাচক চরিত্রে দেখা যাবে বলে গুঞ্জন থাকলে ট্রেলারে সেভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।
মম ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন এই সময়ের আরেক আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার সাফল্যের পরে এই সিনেমাতে তাকে দেখা যাবে গায়িকা হিসেবে। এই প্রথমবার তৌকির আহমেদের পরিচালনায় কাজ করা নিয়ে তিনিও ব্যাপক আশাবাদী। ট্রেলারে দুই সময়ে দুই রকম চরিত্রে পরীমনির ঝলক আগ্রহ জাগিয়েছে। সামনে প্রীতিলতা, অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন সহ বেশ কয়টি আলোচিত সিনেমায় দেখা যাবে তাকে।
‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমার মূল ভূমিকায় আছেন ছোট পর্দার গুনী অভিনেতা শ্যামল মাওলা। সাম্প্রতিক সময়ে বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বেশ কটি ভিন্নধর্মী কনটেন্টে অভিনয় করে বেশ আলোচনায় তিনি। জি-ফাইভের ‘মাইনকার চিপায়’ অসাধারণ অভিনয় করে নতুন করে আলোচনায় শ্যামল। এর আগেও সিনেমায় তার দেখা মিললেও এবারই প্রথম সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তৌকির আহমেদের পরিচালনায় সেলুলয়েডে এক ভিন্ন শ্যামল মাওলার দেখা মিলবে তা বলা যায় নিঃসন্দেহে। ‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমার মধ্য দিয়ে অভিনেতা হিসেবে শ্যামল মাওলার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ধরা হচ্ছে।
এছাড়া সিনেমায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন দেশের অন্যতম আলোচিত এবং দক্ষ অভিনেতা রওনক হাসান। আমাদের দেশের এই গুনী অভিনেতাকে এর আগেও তৌকির আহমেদের পরিচালনার ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমায় দেখা গেছে। ‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমাতেও তার চরিত্রটি আলাদাভাবে দর্শকদের মনে দাগ কাটবে বলে মনে করা হচ্ছে। নাটক বা সিনেমা দুই মাধ্যমেই যেকোনো চরিত্রে নিজের সেরাটা দিতে কার্পন্য করেননি তিনি। এছাড়া এই সিনেমায় আরও অভিনয় করবেন মামুনুর রশীদ, শহীদুল আলম সাচ্চু, ফজলুর রহমান বাবু, আবুল হায়াত সহ দেশের দক্ষ এবং শক্তিশালী অভিনেতারা। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে গায়ক এবং সুরকার পিন্টু ঘোষকেও এই প্রথম অভিনেতা হিসেবে দেখা যাবে এই সিনেমার মধ্য দিয়ে।
পরিচালনার পাশাপাশি ‘স্ফুলিঙ্গ’র গল্প লিখেছেন তৌকীর আহমেদ নিজেই। এনামুল হক সোহেলের সিনেমাটোগ্রাফি, অমিত দেবনাথের এডিটিং, পিন্টু ঘোষ এবং রোকন ইমনের সংগীত, অমিত দত্তর সাউন্ড ডিজাইন এবং দক্ষ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের শক্তিশালী অভিনয় ‘স্ফুলিঙ্গ’কে জনপ্রিয়তা এবং প্রশংসা এনে দেবে এটাই সিনেমা সংশ্লিষ্ট সকলের কামনা।
এর আগে নিজের পরিচালিত সিনেমা নিয়ে তেমনভাবে প্রচারণার ব্যাপারে তৌকির আহমেদকে সরব দেখা যায়নি। তবে সব শ্রেনীর দর্শকদের কাছে পৌছানোর জন্য প্রচার-প্রচারণার বিকল্প নেই। তাই হয়তো এবার আগের ধারনা থেকে কিছুটা সরে এসেছেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৯শে মার্চ মুক্তি পাচ্ছে ‘স্ফুলিঙ্গ’। তবে ১৭ই মার্চ একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে বলে জানা গেছে। শুভ কামনা রইলো পুরো টিমের জন্য।