
শর্টফিল্ম আর বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু, নাটক দিয়ে আলোচনায় আসা, আর ওয়েব সিরিজ বানিয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে ওঠা- শাওকীর গল্পটা চাইলে এভাবেও বলা যায়। কিন্তু শাওকী এখানেই থামছেন না, এগিয়ে চলেছেন দীপ্ত গতিতে। তাকদীরের পর হইচইয়ে এবার আসছে তার নতুন ওয়েব সিরিজ 'কারাগার'...
তরুণ নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী। সংখ্যার হিসেবে মাত্র একটি ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’ নির্মাণ করেই প্রশংসায় ভেসেছেন তিনি। গত বছর ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-এ মুক্তি পাওয়া এই থ্রিলার ঘরানার ওয়েব সিরিজটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ওয়েব ফিকশন বলেই স্বীকৃত। বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওটিটিতে দেশীয় কনটেন্ট এর রূপরেখা বা স্ট্যান্ডার্ড বদলে দেয়া এই দক্ষ এবং নন্দিত নির্মাতা এবার হাজির হচ্ছেন ‘কারাগার’ নামের নতুন একটি ওয়েব সিরিজ নিয়ে।
এক কারাগারের রহস্যময় একটি সেল হচ্ছে ৫০১, বহুদিন ধরে সেই সেলটি বন্ধ পড়ে আছে। এই ৫০১ নাম্বার সেলে হঠাৎ করেই একজন কয়েদী হাজির হলো, দাবি করলো, সে অমর এবং ২০০ বছর ধরেই সে এই রহস্যময় সেলে বন্দী। এই রহস্য বা মিস্ট্রির সাথে ইতিহাস বা হিস্ট্রির যোগসূত্রে এক গা ছমছম করা গল্পই নিজস্ব মুন্সিয়ানা দিয়ে সেলুলয়েডে হাজির করতে যাচ্ছেন সৈয়দ আহমেদ শাওকী। এমনই এক বার্তা পাওয়া গেলো হইচই এর অফিশিয়াল পেইজে।
তামিম নূরের পরিচালনায় ‘ফিরে এসো বেহুলা’ সিনেমার সহকারী হিসাবে ২০০৯ সালে মিডিয়ায় পথচলা শুরু করেন শাওকী। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে কয়েকটি শর্টফিল্ম বানিয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ থেকে বিজ্ঞাপন নির্মাণ শুরু করেছিলেন এই মেধাবী তরুন।
২০১৭ সালে প্রজন্ম টকিজ নামে একটা প্রডাকশন শুরু করেন কাছের মানুষদের নিয়ে। সেখান থেকে ১০টা শর্টফিল্ম নির্মাণ করে প্রশংসা পায় প্রজন্ম টকিজের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। এরপর অমিতাভ রেজা ও মেজবাউর রহমান সুমনের তত্ত্বাবধানে ‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’র প্রজেক্টে মনোজ ও নাবিলাকে নিয়ে ‘কথা হবে তো’ নামের ফিকশন নির্মাণ করে তিনি বেশ ভালোভাবেই নজর কাড়েন।

এরপর অ্যান্থোলজি ফিল্ম ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ সিনেমায় ‘চিয়ার্স’ নামের গল্পটির নান্দনিক উপস্থাপন তাকে নির্মাতা হিসেবে আরো খানিকটা পথ এগিয়ে দেয়। তারপর তো ‘তাকদীর’ দিয়ে ইতিহাসই গড়লেন। এবার আসছেন ‘কারাগার’ নিয়ে। যদিও শিল্পী তালিকা বা অন্যকিছু সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি, তবুও গুণী এই নির্মাতা যে হতাশ করবেন না দর্শকদের, তা বলা যায় নিঃসন্দেহে।
ভারতীয় জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’ গতকাল তাদের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বেশকিছু আপকামিং সিরিজের ঘোষণা দিয়েছে। এর মাঝে বাংলাদেশের বেশ কিছু জনপ্রিয় এবং আলোচিত নির্মাতাদের নাম এবং তাদের সিরিজের ঘোষণাও এসেছে। অমিতাভ রেজা চৌধুরী, আশফাক নিপুন, তানিম নূর, শঙ্খ দাসগুপ্তের সাথে সৈয়দ আহমেদ শাওকীও হাজির হচ্ছেন হইচইয়ের পর্দায়, নিজ নিজ প্রজেক্টগুলো নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হবার পর পরই বিনোদনপ্রেমী দর্শকদের মাঝে আলাদা একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শাওকীর আগের নির্মান ‘তাকদীর’ নিয়ে এখনো আলোচনা বা প্রশংসা শুনতে পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো সিনেমা বা সিরিজ বিষয়ক গ্রুপগুলোতে প্রায়ই এই নিয়ে পোষ্ট লক্ষ্য করা যায়।

নির্মানের স্বকীয়তা হোক বা তাকদীর এবং ভাইছার বন্ধুত্ব বা এতো সুনিপুণ ভাবে একটি থ্রিলার ড্রামার উপস্থাপন প্রতিটি দৃষ্টিকোন থেকেই ‘তাকদীর’ একটি মাইলফলক সেট করে দিয়েছিল। শুধু আমাদের দেশের সমালোচক, তারকা অথবা সাধারণ দর্শকদের থেকেই যে এটি প্রশংসা পেয়েছে ব্যাপারটা শুধু তাই না, কাঁটাতারের ওপারে বাংলাভাষী তো বটেই হিন্দিভাষীদের কাছেও প্রশংসা এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘তাকদির’। এই ওয়েব সিরিজ দেখার পরে আমাদের দেশের নির্মাতা, গল্পকার এবং শিল্পী ও কলাকুশলীরাও নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয়েছেন যে, ফিকশনে মূল নায়ক হলো কনটেন্ট বা গল্প এবং তার যথাযোগ্য চিত্রায়ণ। হ্যাঁ, অবশ্যই অভিনয়, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বা সিনেমাটোগ্রাফির বিষয়গুলোও ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ; তবে সব মিলিয়ে টিম ওয়ার্ক একটি প্রোডাকশনে সফলতার অন্তরায়।
এক সাক্ষাৎকারে সৈয়দ শাওকী নিজেই বলেছিলেন- ‘দিন শেষে আসলে গল্পটাই সবকিছু। তাকদীরের গল্পটায় অনেক ধরনের লেয়ার আছে। এটা শুধু একটা থ্রিলারের গল্প না। এখানে শুধু সাসপেন্স বা দৌড়াদৌড়ি অথবা মারামারিরই কিন্তু মূল বিষয় না। তাকদীরে যে জার্নি আমরা দেখিয়েছি, সেটা শুধু একটা ক্যারেক্টারের জার্নি নয়। সাথে সাথে ফ্রেন্ডশিপ, ফ্রেন্ডের সমস্যা, তাদের মধ্যকার বন্ধন, একটা লাশের সাথে সাথে তার ব্যাকস্টোরি, খুনের উদ্দেশ্য, সেই উদ্দেশ্যের সাথে কে কে কিভাবে জড়িত সবকিছুই তুলে ধরা হয়েছে। দর্শকদের সামনে একটা গল্প তার শাখাপ্রশাখা নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে তুলে ধরাটাই একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো। আমরা ভাগ্যবান যে দর্শক এটার সাথে রিলেট করতে পেরেছে এবং এটার ক্রেডিট আমাদের পুরো টিমের।’
২০২১ সালে এসেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটু অনিয়মিত এবং প্রচারবিমুখ সৈয়দ আহমেদ শাওকী কিছুটা অন্তরালে থেকেই নিজের কাজটি করে যাচ্ছেন অসাধারণ নৈপুণ্যতায় সততা এবং ভালোবাসার মিশেলে। সামনের দিনগুলোতে তার নির্মানের মুন্সিয়ানা বা গল্পের নান্দনিক উপস্থাপন তাকে নির্মাতা হিসেবে নিয়ে যাবে একটি স্বকীয় স্থানে- এই কামনা রইলো।