শার্ক ট্যাংক ইন্ডিয়া: উদ্যোক্তাদের ক্রিয়েটিভ প্ল্যাটফর্ম!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

গৃহপালিত পশুকে ডিভাইসের মাধ্যমে কানেক্ট করে ফার্ম পরিচালনা, লেদারলেস প্রোডাক্টস, স্কলারশিপের ডিজিটাল ফরম্যাট; ভাবনার অভিনবত্ব যে এই উপমহাদেশেও কম নেই মোটেও, সেটাই যেন এই শো এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো৷ যারা জীবনে আসলেই কিছু করতে চান, তাদের জন্যে এ রিয়েলিটি শো'র গুরুত্ব তো বিস্তর, কিন্তু যারা জীবনের কোনো লক্ষ্য, উদ্দেশ্য কিংবা বিধেয় খুঁজে পান না, তাদের জন্যেও 'শার্ক ট্যাংক ইন্ডিয়া'র এপিসোডগুলো হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণার ছোট ছোট ক্ষেত্র।
জাপানে ২০০১ সালের দিকে এক রিয়েলিটি শো হতো 'দ্য টাইগারস অব মানি' নামে। এই রিয়েলিটি শো গড়পড়তা আর পাঁচটা শো এর চেয়ে ছিলো অনেকটাই অন্যরকম। বেশ কিছু বিজনেস টাইকুন 'দ্য টাইগারস অব মানি' এর প্যানেলিস্ট হতেন। এবং নতুন উদ্যোক্তারা এই প্রোগ্রামে এসে বিজনেস টাইকুনদের সাথে তাদের বিজনেস প্ল্যান শেয়ার করতেন। যদি ব্যাটে-বলে মিলতো, তাহলে উদ্যোক্তাদের বিজনেস মডেলের সাথে যুক্ত হতেন বিজনেস টাইকুনেরা। উদ্যোক্তা, যাদের বিস্তীর্ণ এক চৌহদ্দি দরকার এবং সে সাথে ব্রাণ্ডভ্যালুও দরকার, তাদের জন্যে বেশ কার্যকর ছিলো এ প্ল্যাটফর্ম। বেশ ক্রিয়েটিভ এ রিয়েলিটি শো'র মডেল জাপানে জনপ্রিয় হওয়ার পরে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে আরো অন্যান্য দেশে। নানা নামে। লায়নস ডেন, লায়ন মাউথ, ফিকর ওয়া তালাশ, এল মাশরুয়া, শার্ক ট্যাঙ্ক... নানা অবয়বে।
তবে সব দেশের সব ভার্সনের মধ্যে আমেরিকান 'শার্ক ট্যাংক' হয় সবচেয়ে জনপ্রিয়। ২০০৯ সাল থেকে আমেরিকাতে সম্প্রচারিত হওয়া 'শার্ক ট্যাংক' এখন পর্যন্ত বহু উদ্যোক্তাকে দেখিয়েছে সম্ভাবনার পথ। এবং বেশ তথ্যবহুল রিয়েলিটি শো হওয়ায় গড়পড়তা সাধারণ মানুষের মধ্যেও বেশ সাড়া ফেলেছে এটি। প্রাইমটাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ড সহ এই রিয়েলিটি শো জিতেছে বিস্তর পুরস্কারও। বেশ সফলতার সাথে নিয়মিত সম্প্রচারিত হওয়া অনুষ্ঠানটি বেশ কিছুদিন হলো শাখা বিস্তার করেছে ভারতেও। সম্প্রতি ভারতের সনি লিভে এই 'শার্ক ট্যাংক' এর একটি ভার্সন প্রচারিত হচ্ছে নিয়মিত। যেটির নাম- শার্ক ট্যাংক ইন্ডিয়া।

পাঁচজন বিচারকের প্যানেল (যারাই মূলত উদ্যোক্তাদের বিজনেসে ইনভেস্ট করবেন এবং যাদেরকেই ডাকা হচ্ছে 'শার্ক' নামে), তাদের সামনে একের পর এক অভিনব বিজনেস মডেল নিয়ে আসা উৎসাহী উদ্যোক্তা, বিজনেস প্রপোজাল নিয়ে প্রশ্ন-পাল্টা প্রশ্ন, লাভ-ক্ষতি নিয়ে তুলোধুনো বিশ্লেষণ, আচমকা একের পর এক বাউন্সার... 'শার্ক ট্যাঙ্ক ইন্ডিয়া'র এই ভার্সনটাও বেশ জমাটি। আমেরিকান 'শার্ক ট্যাঙ্ক' এর সাথে তুলনা করলে ইন্ডিয়ান ভার্সন অনেকটাই কালারফুল, এই সাব কন্টিন্টেন্ট এর জন্যে অনেক বেশি রিলেটেবল, খানিকটা ড্রামাটিকও। যারা বিচারক প্যানেলে আছেন, তারাও প্রতিষ্ঠিত সব মানুষজন৷ শাদি ডট কম, ভারত পে কিংবা লেন্সকার্ট এর ফাউন্ডার, সিইও রা এখানের বিচারক। এই বিচারকেরা শুধুমাত্র বিজনেস মডেল শুনছেন এবং পছন্দ না করলে বাতিল করে দিচ্ছেন, বিষয়টাও সেরকম না। তারা বিজনেস মডেলের লুপহোলস গুলোও ধরিয়ে দিচ্ছেন ঠিকঠাক। আরো কী কী জায়গায় কাজ করা যেতে পারে, কথা বলছেন সেসব নিয়েও।

এমনিতে সারাবছরই বিচিত্র রকমের নানা রিয়েলিটি শো চলে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে। সেসবের মধ্যে ইনসাইটফুল শো যে খুব একটা নেই, তাও সবারই জানা। ঠিক এ কারণেই, 'শার্ক ট্যাংক ইন্ডিয়া' স্বকীয় এক অবতার হিসেবেই অডিয়েন্সের কাছে ধরা দেয় যেন। পাশাপাশি, অজস্র রকম বিজনেস আইডিয়ার যে চমৎকারিত্ব, মুগ্ধতা বাড়ে সেখানেও। গৃহপালিত পশুকে ডিভাইসের মাধ্যমে কানেক্ট করে ফার্ম পরিচালনা, লেদারলেস প্রোডাক্টস, স্কলারশিপ অ্যাপ্লিকেশনের ডিজিটালাইজেশন.. ভাবনার অভিনবত্ব যে এই উপমহাদেশেও কম নেই মোটেও, সেটাই যেন এই শো এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় আরেকবার৷ যারা জীবনে আসলেই কিছু করতে চান, তাদের জন্যে এ রিয়েলিটি শো'র গুরুত্ব তো বিস্তর, কিন্তু যারা জীবনের কোনো লক্ষ্য, উদ্দেশ্য কিংবা বিধেয় খুঁজে পান না, তাদের জন্যেও 'শার্ক ট্যাংক ইন্ডিয়া'র এপিসোডগুলো হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণার ছোট ছোট ক্ষেত্র। গণ্ডি বাড়িয়ে পুরো পৃথিবীকেই যে এখন বানাতে হবে পাখির চোখ... প্রছন্নে সেটার বার্তাও দিয়ে যায় 'শার্ক ট্যাংক' এর এই ভারতীয় সংস্করণ। এবং সেখানেই সফল এ উদ্যোগ।