যদিও ট্রেলার দেখেই সিনেমা কেমন হবে, তা বলা মোটেও সমীচীন না। তবে ট্রেলারের এই ব্রিলিয়ান্ট প্রেজেন্টেশন যদি মূল সিনেমাতেও ধরে রাখা যায়, তাহলে যে 'শান' দুর্দান্ত কিছুই হতে যাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই তিলমাত্রও। সেজন্যেই তাই আশা রাখি- পোস্টার, প্রমোশন, ট্রেলারের এই ক্রিয়েটিভিটি বজায় থাকবে মূল সিনেমাতেও। নির্মাতা এম রহিমের অভিষেক হবে মনে রাখার মতন৷ পাশাপাশি সিয়াম, পূজা, তাসকিনের মিশেলও হবে খোলতাই!

দিগন্তবিস্তৃত জলরাশির বুক চিরে ভেসে যাচ্ছে এক জাহাজ। চারপাশে থৈথৈ জল। সূর্যের আলো পিছলে যাচ্ছে সবুজাভ নীরে। কোথাও কেউ নেই। কিছুটা রোমান্টিক দৃশ্যই যেন। প্রেমময় এ দৃশ্যে খানিকটা কাব্য মগজে উথলে উঠবে উঠবে করছে, এরকম এক সময়ে সমুদ্রের নীরবতা ভেঙ্গে ভেসে এলো বেরসিক মাইকের কর্কশ স্বর-

ভাসমান কাঠের ট্রলার, আপনাদেরকে সতর্ক করছি। বাংলাদেশ নৌবাহিনী টীম আপনাদেরকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে।

বোঝা গেলো, জলরাশির মাঝখান দিয়ে ছুটে চলা এ জাহাজ নৌবাহিনীর জাহাজ। বিশেষ এক ট্রলারকে সমুদ্রপথে ধাওয়া করেছে সে। পর্দায় ক্রমশ আসতে লাগলো আরো কিছু বাহন। হেলিকপ্টার, স্পিড বোট এবং নৌবাহিনীর সেই জাহাজ চারদিক থেকে ঘিরে ফেললো কাঠের সেই ট্রলারকে। যে ট্রলারে বোঝাই হয়ে অজানার দিকে যাচ্ছে কিছু ভাগ্যাহত তৃণমূল মানুষ। তাদের ইচ্ছে, সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে গিয়ে ভাগ্য পাল্টাবে তারা। কিন্তু তাদের জানা নেই, তাদেরকে প্রবোধ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক বিশেষ উদ্দেশ্যে। বিশেষ জায়গায়। যেখানে একে একে তাদের দেহ থেকে অপসারণ করা হবে ফুসফুস, কিডনি, চোখ, লিভার। এরপর লাশ ফেলে দেয়া হবে ভাগাড়ে। শকুন, কাকের খাবারে রূপান্তরিত হওয়াই হবে তাদের অন্তিম পরিণতি!  

ভাগ্যাহত মানুষজন! 

মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের এ চক্র বেশ শক্তিশালী। বাংলাদেশ, ভারত সহ বেশ কিছু দেশ জুড়ে বিস্তৃত এদের নেটওয়ার্ক। এদের যে এজেন্ট কাজ করে বাংলাদেশে, তাকে ধরার দায়িত্ব দেয়া হলো বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীর চৌকষ অফিসার 'শান'কে। যদিও 'শান' এর এই প্রতিপক্ষ শুধু ভয়ঙ্করই না, অপ্রতিরোধ্যও। এখন প্রশ্ন এটাই,  এই পিশাচ-চক্রের জারিজুরি কি ফাঁস করতে পারবে শান? এই চক্রের যিনি পালের গোদা, তার বিষদাঁত ভাঙ্গার দুরূহতম কাজটি সফলভাবে সমাপ্ত করতে যে দক্ষতা দরকার, সেটাও কি আছে শানের? সেটাই সাসপেন্স। তা নিয়েই পুরো গল্প! 

'শান' সিনেমা শুরু থেকেই একের পর এক চমক দিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের কোনো সিনেমার থিম হিসেবে 'মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার' এর এই বিষয়টি আসেনি কখনো। সিনেমার থিম সিলেকশনে প্রথমেই তাই পেয়েছি অভিনবত্ব। 'শান' তাদের প্রমোশনও শুরু করেছে ভীষণ থটফুল এক পোস্টার দিয়ে। মানব পাচার, ভাগ্যাহত মানুষের দুর্ভোগসহ নানা বিড়ম্বনা খুব স্মার্টলি উঠে এসেছে সে পোস্টারে। মুগ্ধতা বেড়েছে। ক্রমশ আসা আরো একাধিক স্মার্ট পোস্টারের পাশাপাশি ইনোভেটিভ প্রমোশনাল স্ট্রাটেজি, অ্যাকশন সিকোয়েন্সের জন্যে বলিউডের সিদ্ধহস্ত অ্যাকশন কোরিওগ্রাফারদের সংযুক্তি...সবশেষে এই টানটান ট্রেলার! এবং ট্রেলারের শুরু থেকে শেষতক কোনো বিচ্যুতি ছাড়াই বজায় থাকা রাফ অ্যান্ড টাফ প্রেজেন্টেশনেই হয়েছি সবচেয়ে বেশি বিস্মিত! 

সিনেম্যাটোগ্রাফীও দারুণ! 

সিয়াম যে তার 'কোমল-পেলব' অবয়ব ভেঙ্গে রূক্ষ-কঠোর এক অবতারে ফিরেছেন, সেটা ট্রেলারেই দৃশ্যমান। ডায়লগ ডেলিভারি, অ্যাকশন সিন...সবখানেই পালটে যাওয়া সিয়ামের অবয়ব। অন্যদের স্ক্রিন প্রেজেন্সও আশাব্যঞ্জক। পাশাপাশি ট্রেলারের মেদহীন প্রেজেন্টেশন, খেদহীন কালার গ্রেডিং, ছেদহীন ডায়লগ, রোলার-কোস্টার সাসপেন্স সবই ইতিবাচক। অনেক সিনেমার ট্রেলারেই যেরকমটা দেখা যায়- অ্যাকশনের মধ্যে হুট করে গান ঢুকিয়ে দেয়া হয়, অনেকটা বিরিয়ানির মধ্যে এলাচির মতন সে কাজটি যে এখানে আসেনি, সে জন্যে খানিকটা স্বস্তিও পেলাম৷ গানের দৃশ্য যে ট্রেলারে একেবারেই আসেনি, তাও না। কিন্তু খুব সাটলভাবে সেগুলোকে যুক্ত করা হলো কাট কাট শটে৷ বাংলাদেশের অধিকাংশ সিনেমার ট্রেলারের যে মূল সমস্যা, ট্রেলারের মধ্যেই পুরো গল্প বলে দেয়া...সেটা এখানে সজ্ঞানে এড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এমনভাবে ট্রেলারের ভাঁজ খোলা হয়েছে, রহস্যের খাঁজ মোটেও উন্মোচিত হয়নি। জমাটিই রয়ে গিয়েছে সব! 

সিয়ামের রাফ অ্যান্ড টাফ অবতার বজায় ছিলো শুরু থেকেই! 

ভাবতে ভালো লাগছে, এরকম দুর্দান্ত ট্রেলার বাংলাদেশেও হচ্ছে। ট্রেলার দেখেই সিনেমা কীরকম হবে, তা বলা মোটেও সমীচীন না। তবে ট্রেলারের এই ব্রিলিয়ান্ট প্রেজেন্টেশন যদি মূল সিনেমাতেও ধরে রাখা যায়, তাহলে যে 'শান' দুর্দান্ত কিছুই হতে যাচ্ছে, তাতে মোটেও সন্দেহ নেই। সেজন্যেই তাই আশা রাখি, পোস্টার, প্রমোশন, ট্রেলারের এই ক্রিয়েটিভিটি বজায় থাকবে মূল সিনেমাতেও। নির্মাতা এম রহিমের অভিষেক হবে মনে রাখার মতন৷ পাশাপাশি সিয়াম, পূজা, তাসকিনের মিশেলও হবে খোলতাই। হয়তো এভাবেই মুহুর্মুহু পালাবদলে ক্রমশ ফিরবে বাংলা সিনেমার সুদিন! ঠিক সে কারণেই, 'শান' এর জন্যে শুভকামনা। বাংলা সিনেমার জন্যে শুভকামনা! 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা