শান: এমন কমার্শিয়াল সিনেমাই তো চাই!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

শান কমার্শিয়ালি খুব ভালো সিনেমা। এমন সিনেমা দরকার আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য। শান অবশ্যই রিসেন্ট অনেক কমার্শিয়াল সিনেমার চেয়ে ভালো। শুধু ভালো না খুবই ভালো। ঈদের জন্য পারফেক্ট সিনেমা, সিনেমা হলগুলোতে মধ্যবিত্ত এডুকেটেড দর্শককে নিয়ে যাবার মতো সিনেমা...
‘শান’ দেখতে গিয়েছিলাম খুব লো এক্সপেকটেশন নিয়ে। যদিও ঈদে আমার দেখা শেষ বাংলা সিনেমাও সিয়ামের ছিল,সেটির নাম পোড়ামন-২। পোড়ামন-২ আমি অনেক ইঞ্জয় করেছি এমন না, কিন্তু শেষে গিয়ে অন্যরকম একটা ভালোলাগা ছিল। টুইস্টটাই এতো ডিফারেন্ট ছিল যে হুট করে অফগার্ড হয়ে গিয়েছিলাম। সাথে গানগুলোও সিনেমাহলে শুনতে বেশ ভালো লেগেছিল। সেদিক থেকে শান একেবারেই ভিন্ন। নিটোল প্রেমের গল্প নয়, মানবপাচারকারীদের নিয়ে পুরোদস্তুর কপ থ্রিলার। সাথে গান, কমার্শিয়াল ইলেমেন্ট মিলিয়ে বেশ আগ্রহ জাগানোর মতোই সিনেমা। কতোটুকু প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলো শান?
শানের শুরুটা খুবই দারুণ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সিনেমায় বাংলাদেশ নেভির চৌকস এক অপারেশন প্রত্যক্ষ করলাম। সাথে সাথে যেন পরিচালক এম রাহিম সিনেমার টোনও সেট করে দিয়ে গেলেন। নো ননসেন্স কপ থ্রিলারই দেখাতে চান তিনি। তবে বাংলাদেশের কন্টেক্সট মাথায় রাখলে সেটা অসম্ভব ব্যাপার। রাহিমও পারেন নি নো ননসেন্স রাখতে। একটু হিউমার, একটু রোমান্স রাখতেই হয়েছে। তবে এতো কমও যে থাকবে সেটা আশা করিনি।
এম রাহিম গল্প বলাতেই বেশি মন দিয়েছেন। এই গল্প শানের, এসি শান। যে কীনা দায়িত্ব পায় হিউম্যান ট্রাফিকিং র্যাকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত করার। তার তদন্তে একের পর এক তথ্য দর্শকের সামনে আসতে থাকে। সাথে এগুতে থাকে সিয়াম ও পূজার লাভ এঙ্গেলও। গল্পের সাথেই রোম্যান্টিক এঙ্গেল যুক্ত থাকায় বিরক্ত লাগেনি তেমন। গানগুলো খুবই দারুণ লেগেছে সিনেমা হলের পর্দায় দেখতে। এতো দারুণ পিকচারাইজেশন মনে হয় না বাংলাদেশে এর আগে হয়েছে।

তবে গানের চেয়েও দারুণ ছিল শান সিনেমার একশন। বলিউডের আব্বাস আলী মুঘলকে নিয়ে এসেছিলেন পরিচালক এম রাহিম। সেটির ছাপ পাওয়া গেছে একশনে। এরকম বিশাল সেট ডিজাইন, স্টান্ট,চেজিং সিকুয়েন্স বাংলা সিনেমায় খুব কমই দেখা গেছে। একমাত্র তুলনা হতে পারে ঢাকা অ্যাটাক, তবে সেখানেও একশনগুলো শানের মতো কনভিন্সিং মনে হয় নি।
সিয়াম 'শান' চরিত্রে বেশ ভালো করেছেন। তার ট্রান্সফরমেশন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সবকিছুই শান চরিত্রের জন্য পারফেক্ট ছিল। তবে তার কিছু সিন আছে যেখানে সে বহুরূপী সাজে, সে সিনগুলোতে সিয়াম জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছেন। পূজা চেরি পর্দায় সাবলীল,এখানেও সাবলীল লেগেছে। গানগুলোতে তাকে ভীষণ সুন্দর লেগেছে। এই সিনেমার সারপ্রাইজ প্যাকেজ হচ্ছে তাসকিন। তাকে নিয়ে বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না। নাদের চৌধুরী আর মিশা সওদাগরকে অদ্ভুতভাবে খুবই ভালো লেগেছে। বাকিরা এভারেজ ছিল।

এম রাহিম কমার্শিয়াল বানানোতে ওস্তাদ সেটি প্রথম সিনেমা দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন। কোনভাবেই বোঝা সম্ভব না এই সিনেমা তিন বছর ধরে আটকে ছিল। তিন বছর আগে যদি রাহিম এরকম সিনেমা বানাতে পারেন সামনে আরও অনেক 'কমার্শিয়ালি স্মার্ট' সিনেমা তার কাছ থেকে আশা করা যায়।
সব মিলিয়ে শান কমার্শিয়ালি খুব ভালো সিনেমা। এমন সিনেমা দরকার আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য। এখনো হয়তো বলিউড লেভেলে যাবার মতো কাজ হয়নি, গল্প-টেকনিক্যাল দুইদিক থেকেই। কিন্তু শান অবশ্যই রিসেন্ট অনেক কমার্শিয়াল সিনেমার চেয়ে ভালো। শুধু ভালো না খুবই ভালো। ঈদের জন্য পারফেক্ট সিনেমা, সিনেমা হলগুলোতে মধ্যবিত্ত এডুকেটেড দর্শককে নিয়ে যাবার মতো সিনেমা।