নির্মাণের মুন্সীয়ানায় আয়নাবাজিকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে অমিতাভ রেজার রিকশা গার্ল?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
অমিতাভ রেজার নির্মাণ নিয়ে এমনিতেই আশাবাদী হতে হয়। তাঁর 'রিকশা গার্ল' সিনেমার ট্রেলার দেখেও প্রত্যাশা বেড়ে গেলো বহুগুণ। কালার, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, ফ্রেমের মুন্সিয়ানা; সবকিছু মিলিয়ে যেন সাররিয়ালিস্টিক এক ট্রিটমেন্টই পেলাম...
আমাদের যাপিত জীবনে আমরা সবাই-ই বুকপকেটে একটা করে রঙিন খাম যত্নে লুকিয়ে রাখি। এই খামগুলোর মধ্যে থাকে আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সব স্বপ্ন। কিন্তু এই রঙিন খামগুলো অনেক সময়েই আমাদের আর খুলে দেখা হয় না। জীবনের নানা সমীকরণে ক্রমশ পর্যুদস্ত হতে হতে একটা সময়ে হঠাৎ লক্ষ্য করি, সেই খাম আর রঙিন নেই। বিবর্ণ হতে হতে সে হয়ে গিয়েছে ধূসর, বিবর্ণ, ছেঁড়াখোড়া কোনো কাগজ। মোটা দাগে, এটাই অনেকের জীবন-গল্প।
একটি মেয়ে, সে ছবি আঁকতে চায়। সে পেইন্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন দেখা দোষের কিছু না। তবে সময়ভেদে, পরিবেশ ভেদে, এই স্বপ্ন দেখাও দোষের হতে পারে, যখন আমরা জানতে পারি, মেয়েটির বাবা রিক্সাচালক। যখন জানতে পারি, মেয়েটির মা মেয়েটিকে বলছে-
তোর এই অর্থহীন আঁকাআঁকি, ঘরে একটা পয়সাও আনে না।
তখন মেয়েটির চোখ থেকে রঙিন চশমা খসে পড়ে। বুকপকেটে ভাঁজ করে রাখা রঙিন খামটিও হয়তো কুঁকড়ে যায় খানিকটা। এরপরেই আসে আরেক হতাশার বার্তা। মেয়েটির রিক্সাচালক বাবা অসুস্থ হয়ে যায় রিক্সা চালানোর সময়ে। মেয়েটি বাবার রিক্সার হ্যান্ডেল ধরতে চায়। দায়িত্ব নিতে চায় পরিবারের। কিন্তু, তখনই আসে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাধা। রাখঢাক না রেখেই বলে তারা-
রিক্সা চালাতে গেলে পুরুষ হতে হবে।
মেয়েটি কী করবে? সে তখন তার সত্তাই পরিবর্তন করে ফেলে। ছেলেদের পোশাক পড়ে নেমে যায় রিক্সা চালানোর কাজে। নিজের নারী-সত্তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে রিক্সাচালক হলেও সে তার আরেক সত্তা, শিল্পীসত্তাকে বিসর্জন দিতে চায় না। সে বলে-
ছবি আমি আঁকবোই।
একদিকে বাস্তবের 'লাল' চোখরাঙানি, আরেকদিকে 'রঙিন' তুলি, রঙ, ক্যানভাস...মেয়েটির জীবন কোন বাঁকে যাবে শেষতক?
ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের লেখিকা মিতালি পারকিনসের কিশোর সাহিত্য ‘রিকশা গার্ল’ অবলম্বনে অমিতাভ রেজা চৌধুরীর 'রিকশা গার্ল' সিনেমা নিয়ে অপেক্ষা অনেকদিন ধরেই। গতকাল মুক্তি পেলো ট্রেলার৷ যারপরনাই মুগ্ধ হলাম ট্রেলার দেখে। ফ্রেমের ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা তো ছিলোই, নতুনত্ব পেলাম ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরেও।
ফ্রেমের চমৎকারিত্ব আর ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের মিশেলে সাররিয়ালিস্টিক ফ্লেভার পাচ্ছিলাম ট্রেলারের বিভিন্ন অংশে। সে সাথে ডায়লগগুলোও একটু ভিন্নরকম। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গড়পড়তা কথা। কিন্তু তলিয়ে দেখলে ভাবনার নুড়িপাথর যাচ্ছে অনেকদূর। ট্রেলারের শেষে এসে মনে হলো, রঙের কারুকার্যও বেশ ভালো পরিমানেই থাকবে সিনেমায়।
'রিকশা গার্ল' সিনেমার প্রোটাগনিস্ট চরিত্রে অভিনয় করেছেন নভেরা রহমান। পর্দায় দুর্দান্ত উপস্থিতি তার। তার মায়ের চরিত্রে মোমেনা চৌধুরী ও বাবার চরিত্রে নরেশ ভুঁইয়া'র অভিনয়ও ভালো লাগলো। অ্যালেন শুভ্রকেও এক ঝলক দেখা গেলো ট্রেলারের এক অংশে। সোয়া দুই মিনিটের ট্রেলার দেখে চরিত্রেরা কেমন করেছে তা বলা কষ্টকর। তবে ছিমছামই লাগলো সবকিছু।
অমিতাভ রেজা চৌধুরীর 'আয়নাবাজি' নিয়ে তো এখনো কথা হয়। সেই সিনেমারও পাঁচ বছর পেরিয়েছে। এবার আসছে 'রিকশা গার্ল।' ট্রেলার দেখে একটা জিনিস স্পষ্ট, পরিচালক এক্সপেরিমেন্টাল অনেক কিছুই রেখেছেন সিনেমায়। যা খোলাসা হবে সিনেমা মুক্তির পরেই৷ তবে ট্রেলার দেখার পরে চোখের ও মনের প্রশান্তি এসেছে অনেকটুকুই, এজন্যে পরিচালককে ধন্যবাদ৷
দুর্দান্ত এক ট্রেলারের পরে 'রিকশা গার্ল' এর জন্যে অপেক্ষাও বেড়ে গেছে বহুগুণ। দেখা যাক, মূল সিনেমা সে মুগ্ধতা বজায় রাখতে পারে কী না।