লাইফের রুক্ষতাকে ফেইস করে, শীতের রুক্ষতাকে কোমলতায় রূপান্তরিত করতে হবে। আর সেই সাথে নিজ নিজ জীবনে, নিজ নিজ পছন্দের কাজকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলতে হবে। এই এগিয়ে চলার গল্পগুলোকে এভাবে উপস্থাপন করার জন্য বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাতেই হবে। আমার তো মনেই পড়ছে না, এমন স্বয়ংসম্পূর্ণ বিজ্ঞাপন শেষ কবে দেখেছি!

বিজ্ঞাপন নিয়ে নতুনত্ব আনাটাই এজেন্সিগুলোর মূল টার্গেট থাকে। মেসেজের আড়ালে অনেক সময় হারিয়ে যায় প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট। বিজ্ঞাপন দেখে ভালো লাগে ঠিকই কিন্তু কোনভাবেই রিলেট করা যায় না যেন বিজ্ঞাপনের শেষে দেখানো পণ্যের সাথে। আবার সবকিছুতে ইমোশনাল এঙ্গেল টানতে টানতে এই ‘মেসেজ নির্ভর’ বিজ্ঞাপনগুলো একঘেয়ে হয়ে গেছে অনেকটাই। সেদিক থেকে রিভাইভের ‘রুক্ষতাকে Face করো লাইফটাকে Chase করো’ বিজ্ঞাপনটি একেবারেই আলাদা ও স্বয়ংসম্পূর্ণ লেগেছে। দুটো শব্দবন্ধ ব্যবহার করলাম কারণ এখন অনেক বিজ্ঞাপনই আসে যেগুলো আলাদা মনে হয় কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ লাগে এমন বিজ্ঞাপনের সংখ্যা একেবারেই কম।

স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে হবার জন্য বেশ কিছু ক্রাইটেরিয়ায় এই বিজ্ঞাপনটাকে উতরাতে হয়েছে।

* মেসেজ ক্লিয়ার করা
* অভিনয়
* প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট

ম্যাসেজ ক্লিয়ার করার ক্ষেত্রে রিভাইভের এই এডটা আমার মনে হয়েছে সার্থক। শুরুতেই আমরা দেখতে পাই চুইংগাম চিবুতে চিবুতে চোয়াল শক্ত করে একটা মেয়ে বের হচ্ছে দিন শুরুর যুদ্ধে। ব্যাকগ্রাউন্ডে শোনা যায়-

তোমার সকাল মানেই নতুন একটা দিন না, পেছনে টেনে ধরার পুরনো লাগাম।

একজন রাইডশেয়ারিং এপে কাজ করা মেয়েকে এখানে দেখানো হয় যার বাবা বলে ওঠেন- অন্য কিছু তো করতে পারো। কিন্তু কেন সে অন্য কিছু করবে? পরিবারের সবচেয়ে আপন মানুষটাও কেন বিপক্ষে কথা বলবে তার? এমন মেয়েদের জন্য সকাল মানে নতুন কিছু না বরং পুরনো সে লাগাম থেকে ছিঁড়ে বের হবার চেষ্টা। যে লাগাম বারবার মনে করিয়ে দিতে চায় তুমি মেয়ে, তুমি এমন কিছু করতে পারো না।

চার রাস্তার মোড়ে নয়, সবাই চায় আটকে থাকো চার দেয়ালে।

ফুডকোর্টে উনুনের গরমে টপ টপ করে ঘামতে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে উপহাস করা পুরুষগুলো মানতে পারে না যেন তাকে। চায় সে আটকে থাকুক চার দেয়ালের ভেতর। কিন্তু কেন আটকে থাকবে সে ঘরের ভেতর, কেন নিজের পছন্দের কাজে সেরাটা দিতে পারবে না?

ওরা পেলে হাততালি, আর তুমি পেলে ফিসফাস। 

বাংলাদেশের কর্পোরেট অফিস কালচারে এটা নিয়মিত প্র্যাকটিস হয়ে গেছে যে মেয়েরা প্রমোশন পেলে সেটা চেহারা দেখিয়ে পায়, পুরুষরা কষ্ট করেও প্রমোশন পায় না। অনেক সফল কর্পোরেট নারীকেই তাই সহ্য করতে হয় এসব ফিসফাসের। নিজের কাজ দিয়ে প্রমাণ করে এই পর্যায়ে আসা এক নারীকে কেন শুনতে হবে এসব অযথা অভিযোগ।

ডিফেন্সে মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়েও আছে অনুযোগ, অভিযোগ। মেয়েরা এসব পারে নাকি, মেয়েদের গায়ে শক্তি নেই। অথচ নিজেদের প্রুভ করে তারা এসেছে এই পর্যায়ে। নিজেদের প্রুভ করেই এগিয়ে যেতে হবে। ‘পারে না’ বলা মানুষগুলোকে পেরে দেখানোর জন্য না, নিজের জন্যই তারা নিজেকে প্রুভ করে এগিয়ে যায় দৃঢ় প্রত্যয়ে।

রিভাইভের এই বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করেছেন পিপলু আর খান

কলঙ্কের কাটতি বেশি, অনেক তার দাম; তোমার জয় কখনোই হয় না শিরোনাম।

বাংলাদেশে যেকোনো নারী সেলেব্রিটির ক্ষেত্রেই এটা সত্য। তাদের নিয়ে যেকোনো নেগেটিভ খবরের স্থান হয় শিরোনামে অথচ তাদের সাফল্যের সময় পাওয়া যায় না কোন খবর। সবকিছুকে কাটতির আড়ালে ফেলে নারীদের সাফল্যকে আড়াল করে রাখা সমাজকে তাই মোক্ষম জবাব দিতে হয় নিজের কাজ দিয়েই।

এই সব বাধার একটাই উত্তর দিয়েছে এই বিজ্ঞাপন- গায়ে মেখো না। ‘মেখো’ শব্দটা দিয়ে একদিকে যেমন সমাজের এসব বাঁধাকে বুড়ো আঙুল দেখানো হয়েছে তেমনি একই শব্দ তাদের প্রোডাক্টের সাথেও রিলেটেবল। সমাজের এসব কটূক্তিকে না মেখে তাদের প্রোডাক্ট মাখার ‘Inner Message’ দিয়েছে রিভাইভ। তাই উচ্চারণ না করেও বারবার উচ্চারিত হয়েছে তাদের প্রোডাক্টের নাম।

অভিনয়ের দিক থেকে বলতে গেলে যে ৫জন নারী অভিনয় করেছেন, প্রত্যেকেই একটা করে ডায়লগ বলার সুযোগ পেয়েছেন। ডায়লগ ডেলিভারি, চাহনি, কনফিডেন্স সবদিক থেকে ঐ এক ডায়লগেই নিজেদের অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন তারা। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ক্যারেক্টারে থেকে সুঅভিনয় করতে এখন খুব কমই দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আনকোরা মডেলদের দিয়ে কাজ চালানো হয় আবার ভালো অভিনেতা থাকলেও অভিনয় দক্ষতা দেখানোর সুযোগ থাকে না। এখানে কপিটা এমনভাবেই লেখা হয়েছে যেন প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে বডি ল্যাংগুয়েজ দিয়ে হোক, চাহনি দিয়ে হোক বাড়তি কিছু দেখানোর সুযোগ পায়।

রুক্ষতাকে Face করো, লাইফটাকে Chase করো- এই ট্যাগলাইন দিয়ে প্রোডাক্টের থিমটাকেও দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে দিতে পেরেছে বলে মনে হয়েছে।

লাইফের রুক্ষতাগুলো গায়ে না মেখে প্রতিদিন এগিয়ে চলাটাই তো তোমার সবচেয়ে বড় সাফল্য, সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য।

এই সৌন্দর্যকে ফোকাস করেই মূলত রিভাইভের প্রয়োজনীয়তাকে কঞ্জ্যুমারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। লাইফের রুক্ষতাকে ফেইস করে, শীতের রুক্ষতাকে কোমলতায় রূপান্তরিত করতে হবে। আর সেই সাথে নিজ নিজ জীবনে, নিজ নিজ পছন্দের কাজকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলতে হবে। এই এগিয়ে চলার গল্পগুলোকে এভাবে উপস্থাপন করার জন্য বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাতেই হবে। আমার তো মনেই পড়ছে না, এমন স্বয়ংসম্পূর্ণ বিজ্ঞাপন শেষ কবে দেখেছি!

(বিজ্ঞাপনটি দেখুন এই লিংকে ক্লিক করে)


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা