রওনক হাসান: স্বতন্ত্র ও নান্দনিক এক অভিনেতা
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বিশাল ফ্যানবেজ নেই তার, নাটকে নেই মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ। তার মধ্যে আছে মেধা, আছে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার তীব্র চেষ্টা। অথচ এই অভিনেতাকে নিয়ে যতটা এক্সপেরিমেন্ট হবার কথা ছিল, তার সিকিভাগও হয় না বলতে গেলে...
বিশাল ফ্যানবেজ নেই তার, নাটকে নেই মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ। তবে তার মধ্যে আছে মেধা, আছে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার তীব্র চেষ্টা। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই অভিনেতাকে নিয়ে যতটা এক্সপেরিমেন্ট হবার কথা ছিল, তার সিকিভাগও হয়নি বলতে গেলে। তবুও তার দক্ষতা বা মেধা চেপে রাখা যায়নি, আসলে মেধা বা প্রতিভা চেপে রাখাও যায়না। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ আমাদের দেশের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় এবং দক্ষ অভিনেতা রওনক হাসান।
এটা ভিন্ন বিষয় যে, মেধাবী এই অভিনেতাকে নিয়ে যতটা কাজ হওয়া উচিত ছিলো বা হওয়া উচিত- সেটা হচ্ছে না ভিউয়ার বা ফ্যান ক্লাব ইস্যুর কারণে। তবে নিজের মেধা এবং শক্তিশালী অভিনয় দক্ষতা দিয়েই অল্প কাজের মধ্য দিয়ে বরাবরই দর্শকদের কাছাকাছি থাকেন তিনি। এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
গত বছর ‘যে শহরে ভালোবাসা নেই’ ‘লেখকের মৃত্যু’ ‘আড়াই মন স্বপ্ন’ এর মতো নান্দনিক কাজ নিয়ে আবারো আলোচনায় আসেন রওনক হাসান। এছাড়া গত ঈদে রওনক হাসানের পরিচালনায় ‘মা’ নাটকটিও নান্দনিক একটি কাজ হিসেবেও ব্যাপকভাবে প্রশংসা পায়। তবে গত বছরের অন্যতম নান্দনিক এবং প্রশংসনীয় ‘হ্যামলেটের ফিরে আসা’ নাটকের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, সুযোগ পেলে এখনো জ্বলে উঠার সামর্থ্য রাখেন তিনি। এত শক্তিশালী অভিনয় দক্ষতা সচরাচর দেখার সৌভাগ্য হয়না আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে। স্বীকৃতি হিসেবে চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড- ২০২০ এ সেরা অভিনেতা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে নিয়েছেন তিনি।
কিছুদিন আগে তিনি হাজির হয়েছেন নন্দিত নির্মাতা তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমা নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দুইটা সময়ের দুই প্রজন্মের গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় তার অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছিলো। লকডাউনে কাজের পরিধি কমলেও রওনক হাসান এর মাঝেই পাঁচটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তাও ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে এবং ব্যতিক্রমী গল্পে।
ইদানীং টেলিভিশন নাটকে তার উপস্থিতি কম কেন জানতে চাইলে এক আলাপচারিতায় এই শক্তিশালী অভিনেতা জানিয়েছিলেন- ‘সেই ২০০৬ সাল থেকেই নিয়ম করে প্রতিমাসে ২০/২৫ দিন শ্যুটিং করেছি আমি। অনেক নাটক, টেলিফিল্মে কাজ করেছি। আমার জায়গা থেকে আমি সবসময় নিজের সেরাটাই দেবার চেস্টা করেছি। কতোটুকু পেরেছি সেটা দর্শকেরা ভালো বলতে পারবেন। আর কাজ কম করছি তাও না। কারন পছন্দসই চরিত্র বা গল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে হাতেগোনা। সেই অল্পের মধ্যেও আমি কাজ করছি সেটাও তো কম না।’
বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওটিটি নিয়ে রওনক হাসান কি ভাবছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আসলে এখন সত্যি সত্যিই আমি চলচ্চিত্র এবং ওটিটিতে ভিন্নধর্মী কাজের প্রতি একটু বেশি মনোযোগী। কারন এখানে গল্প, চিত্রনাট্য এবং চরিত্রে ভিন্নতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর একজন অভিনেতা কখনোই নিজের কাজে পরিপূর্ণ তৃপ্তি পায় না। অভিনয়ের বিষয়ে আমি ভীষণ লোভী বলা যায়। একটা কাজ শেষে সবসময়ই আমার মনে হয় আরো ভালো করা যেতো! আরো আরো পারফেক্ট চাই। আর ওটিটি আসার কারনে এখন কাজের স্কোপ বেড়েছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আমাদের মান ধরে রাখার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। কারন ভালো কনটেন্ট এবং নির্মানে মুন্সিয়ানা ছাড়া এই সময়ে দেশ এবং দেশের বাইরের দর্শকদের ধরে রাখাটা কষ্টকর হবে।’
নিজের অভিনয় নিয়ে রওনক হাসান তৃপ্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- আসলে নিজেই নিজের কাজ নিয়ে তৃপ্ত কিনা সেটা বলা মুশকিল। তবে গল্পকার, পরিচালক, সম্পাদক সহ সহশিল্পী ও সংশ্লিষ্ট প্রায় সকলেই যদি ভালো বলে তাহলে কিছুটা পরিতৃপ্ত তো পাওয়া যায়। তবে দর্শকদের কাছে ভালো লাগলেই আমি খুশি, কারন তাদের মন্তব্য বা মতামত আমাদের কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই চেস্টা করি তাদেরকে যেনো বিনোদিত করতে পারি নিজের কাজের মাধ্যমে।
এই সময়ে তিনি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি দীপংকর দীপনের নতুন সিনেমা ‘অন্তর্জাল’ সিনেমা নিয়ে। সাইবার ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার এই সিনেমায় আইসিটি মন্ত্রীর ভূমিকায় দেখা যাবে রওনক হাসান। এছাড়া আকরাম খানের পরিচালনায় ‘নকশী কাঁথার জমিন’, নূর ইমরান মিঠুর ‘পাতাল ঘর’ এবং দীপংকর দীপনেরই পরিচালনায় ‘অপারেশন সুন্দরবন’ এই তিনটি সিনেমার কাজও শেষ করেছেন এই গুনী অভিনেতা।
দেশের এই শক্তিশালী অভিনেতাকে যতোটা কাজে লাগানো উচিত ছিলো আগে তেমন ভাবে আমাদের নির্মাতারা ব্যবহার করেননি। সামনের দিনগুলোতে ব্যতিক্রমী গল্প আর ভিন্নধর্মী চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে তাকে আরো বেশি বেশি দেখার অপেক্ষা রইলো। রওনক হাসান বলেছিলেন- ‘অনেকটা সময় পার করে এসে এখন মাঝে মাঝেই যে চিন্তাটা মাথায় ঘুরপাক খায় তা হলো ‘আমি যে ছিলাম সেই পদচিহ্নটা রেখে যেতে হবে, তাই এখন সেই পথেই ভাবছি এবং সেভাবেই ব্যতিক্রমী গল্প আর চরিত্রে কাজ করার চেস্টা করছি’।
নন্দিত এই অভিনেতা যে চেস্টাটা করছেন সেই সেই তখনই পুরোপুরি সফল হবে যখন গল্পকার এবং নির্মাতারা তাকে ভিন্নধর্মী গল্পের সাথে সংযুক্ত করবেন। আশাকরি আমাদের দেশের এই সময়ের আলোচিত এবং দক্ষ নির্মাতারা এমন একজন গুনী অভিনেতাকে নিয়ে নতুন ভাবে ভাববেন। শুভ কামনা রইলো শক্তিশালী অভিনেতা এবং বাস্তব জীবনের একজন সহজ ও সুন্দর মানুষ রওনক হাসানের জন্য।