স্যাটায়ার যখন বিজ্ঞাপনের মোড়কে সামাজিক বার্তা প্রদানের মাধ্যম
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
এই বিজ্ঞাপন হাসাবে, মজা দেবে, তবে শেষের মেসেজটা দেবে ধাক্কা। সেই ধাক্কাটা সবার ভালো না-ও লাগতে পারে। ভিক্টিম ব্লেমিং করা পটেনশিয়াল রেপিস্টে ভরপুর এই দেশে নিজের জিনিসপত্র কন্ট্রোলে রাখার ব্যাপারটা অনেকেই যে ভালো চোখে দেখবে না, এটাই স্বাভাবিক...
বিজ্ঞাপনের কাজ কী? মোটাদাগে কাজ একটাই, পণ্যের প্রতি ক্রেতার আগ্রহ জাগানো। কিন্তু ব্র্যান্ড আর কনজ্যুমারের মধ্যে সবচেয়ে বড় সেতুবন্ধনগুলোর একটি, সেকারণে বিজ্ঞাপনে নানা সময়েই উঠে এসেছে অজস্র সামাজিক ইস্যু আর প্রতিবন্ধকতার কথাও। নারী নির্যাতন থেকে অ্যাসিড সন্ত্রাস, ডমেস্টিক ভায়োলেন্স থেকে সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্ট- সবকিছু নিয়েই কথা বলেছে বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রি। দেশে দেশে এমন অজস্র নজির পাবেন একটু খুঁজলেই, বাংলাদেশেও আছে অনেক।
নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে এদেশের বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রি এর আগেও ভোকাল হয়েছে। কিন্তু সেই এপ্রোচগুলো ছিল ইমোশনাল এপ্রোচ, দর্শকের আবেগকে ধাক্কা দিয়েছে সেসব বিজ্ঞাপন। আশুতোষ সুজনের বানানো জুঁই নারিকেল তেলের বিজ্ঞাপনটা তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও খ্যাতি কুড়িয়েছিল।
তবে বিরুদ্ধস্রোতে গিয়ে বেশ অদ্ভুত একটা কাজ করে ফেলেছে পাওয়ার এনার্জি ড্রিংকস। ইমোশনাল ওয়েতে না হেঁটে পাওয়ার এনার্জি ড্রিংকসের এই বিজ্ঞাপন বেছে নিয়েছে স্যাটায়ারের রাস্তা। এমনিতেই স্যাটায়ার নিয়ে বাংলাদেশে কাজ কম হয়। কারণ সিংহভাগ মানুষ স্যাটায়ারের সংজ্ঞাটাই বোঝেন না ঠিকঠাক, কোথায় কী বুমেরাং হয়, সেই ঝুঁকি নিতে চায় না ব্র্যান্ড কিংবা নির্মাতা- কেউই।
তার ওপর এমন সেন্সেটিভ একটা ইস্যুকে স্যাটায়ারের ছলে বিজ্ঞাপনে উপস্থাপন- এই সাহসের তারিফ করতে হয়। 'কক' হিসেবে একটা মোরগকে উপস্থাপন, সেই মোরগের নাম 'সোনা মিয়া' রাখা, মোরগকে সর্বগ্রাসী কামনার মেটাফোর হিসেবে ব্যবহার করা- এই ব্যাপারগুলো মাথায় গেঁথে থাকবে। 'এইটুকুন আছিলো, হুট কইরা খাম্বা হয়া গেছে'- শুরুর ওই ডায়লগের ধাক্কাটা সোয়া তিন মিনিটের গোটা বিজ্ঞাপনেই টের পাওয়া গেছে। 'কনসেন্ট' ব্যাপারটার গুরুত্ব এরচেয়ে সাবলীলভাবে বলাটা সম্ভব না বোধহয়। সোহেল মন্ডল একটা হাততালি পাবেন, বিজ্ঞাপনের গল্পের সাথে দারুণভাবে মিশে যাওয়ার জন্য।।
পাওয়ারের কাস্টোমার মূলত কিশোর আর তরুণরা, এই বিজ্ঞাপনের টার্গেট অডিয়েন্সও তারাই। কালার, ক্যামেরার কাজ, ভাষা- সবকিছুতেই সেটা স্পষ্ট। এই বিজ্ঞাপন হাসাবে, মজা দেবে, তবে শেষের মেসেজটা দেবে ধাক্কা। সেই ধাক্কাটা সবার ভালো না-ও লাগতে পারে। ভিক্টিম ব্লেমিং করা পটেনশিয়াল রেপিস্টে ভরপুর এই দেশে নিজের জিনিসপত্র কন্ট্রোলে রাখার ব্যাপারটা অনেকেই যে ভালো চোখে দেখবে না, এটাই স্বাভাবিক।
এদেশের আশিভাগ মানুষ প্রতিক্রিয়াশীল, যে কোনো ইস্যুতে দুই ভাগ হয়ে যাওয়াটা যাদের স্বভাব। এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে স্যাটায়ারিক অ্যাপ্রোচে এরকম কন্টেন্ট বানানোটা নির্মাতা আর ব্র্যান্ড- দুই পক্ষের জন্যই ঝুঁকির। অনেকেই এরকম ঝুঁকি নিয়ে পরে উগ্রবাদীদের আস্ফালনের সামনে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন। নির্মাতা মাহাথির স্পন্দন এবং পাওয়ার এনার্জি ড্রিংকস- দুই পক্ষকেই একটা টুপি খোলা স্যালুট, তারা সাহস দেখিয়েছেন। মেরুদণ্ড সোজা করে কথা বলার সাহস, ভিন্ন পথে হেঁটে নিজেদের বার্তাটা দর্শকের মনের ভেতর গেঁথে দেয়ার সাহস...