'পঞ্চায়েত' এর নতুন সিজনের ট্রেলার দেখে যদিও বোঝা গিয়েছে, প্রথম সিজনের মত এবারেও নানাবিধ বিড়ম্বনার মুখোমুখিই হবেন অভিষেক ত্রিপাঠী, তবে সেসবের মাঝখানে খানিকটা অন্যকিছুর আভাসও আছে যেন। রিঙ্কির সাথে আধো আধো প্রণয়, গ্রাম্য রাজনীতির টুকরোটাকরা কোন্দল, সেসবের মাঝখানে সিচুয়েশনাল কমেডি, সহজাত হিউমার আর সূক্ষ্ম জীবনবোধ... সাটল সব টপিককে ব্লেন্ড করা হচ্ছে এবারেও। যা, মূলত এবারের সিজনের প্রত্যাশাই বাড়িয়েছে বিস্তর।

'পঞ্চায়েত' দেখতে বসা অনেকটাই পাকেচক্রে। তখন এমন এক সময়, ভারতে একের পর এক ওয়েব সিরিজ আসছে। ওয়েব সিরিজগুলো বেশ জনপ্রিয়ও হচ্ছে। কিন্তু, সমস্যা একটাই, অধিকাংশ ওয়েব সিরিজেই খুন, থ্রিল, ভায়োলেন্স। দেখতে দেখতে কেমন যেন বিরক্তিও ধরে গেছে। একঘেয়েও হয়ে যাচ্ছে সব। তখনই 'পঞ্চায়েত' এর সন্ধান। কোনো জৌলুশ নেই, রক্তের আধিক্য নেই, নেই থ্রিলারের ছিঁটেফোঁটাও। তবুও, কি যেন রইলো, যেটুকুর জন্যে এই ওয়েব সিরিজের আট পর্বের কোনো অংশ থেকেই চোখ সরানো গেলোনা। এবং, শেষ করে মুগ্ধতাও কাটিয়ে ওঠা গেলোনা। 'স্লাইস অব লাইফ' কন্টেন্ট এমনিতেও সারাবিশ্বে হয় খুব কম, তারমধ্যেও 'পঞ্চায়েত' এমন আলাদাভাবে এলো, তাও গ্রামের খড়িমাটি আর নাড়াকুটোর সঙ্গে সঙ্গত করে, অভিষেক, গ্রাম প্রধান, মঞ্জু দেবী, বিকাশ...প্রতিটি চরিত্র নিজ নিজ জায়গা থেকে এতটাই আটপৌরে অবয়বে হাজির হলেন, যেন জীবনের যাপিত ঝঞ্জাট থেকে পালানোর খানিকটা অবলম্বনই হলেন তারা। 

যদিও 'পঞ্চায়েত' মুক্তির পর পেরিয়েছে বহুদিন,  স্ট্রিমিং সাইট 'অ্যামাজন প্রাইম'ই বলি কিংবা দ্য পাওয়ারহাউজ 'টিভিএফ', তারা একের পর এক কন্টেন্ট এনেছে। কিন্তু, সবাই এলেও, আসেনি 'পঞ্চায়েত।' কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে গ্রাম-সচিব অভিষেক ত্রিপাঠী পানির ট্যাঙ্কির টাওয়ারে উঠে কিসের সন্ধান পেলো, সেটুকুর জন্যে দর্শকের হাপিত্যেশও তাই ফুরোয়নি একরত্তি। এবং সেসব কারণেই হয়তো, 'পঞ্চায়েত' এর দ্বিতীয় সিজনের ঘোষণা আসাতে মানুষের উল্লাসটা হলো দেখার মত। সোশ্যাল মিডিয়া সহ যাপিত সবকিছু যেন একরকম ভেসেই গেলো 'পঞ্চায়েত' ঝড়ে।

আসছে 'পঞ্চায়েত' 

অবশ্য হবে নাও বা কেন, উত্তর প্রদেশের কোনো এক অখ্যাত 'ফুলেরা' গ্রামের সহজসরল মানুষের জীবনাচরণের আড়ালে যেভাবে নানাবিধ জটিল বিষয়কে সামনে এনেছে এই ওয়েব সিরিজ, নাগরিক জঞ্জালে বেড়ে ওঠা এক শহুরে যুবককে যেভাবে ঠেলে দেয়া হয়েছে থমকে যাওয়া সময়ের মাঝখানে, সেখানে এসে যেভাবে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির তফাতে নাকাল হয়েছে সে যুবক, যেখানে স্বাভাবিক প্রাপ্তিও পরিণত হয়েছে অলীক কোনো বস্তুতে, আবার এসবের মাঝেই খুঁজে নিতে হয়েছে জীবনের রূপ-রস-গন্ধ... সেসব কিছুর জন্যে অপেক্ষা থাকাটাও মূলত প্রাসঙ্গিক। এবং, এখানে এসে প্রাসঙ্গিক 'পঞ্চায়েত'ও। গল্প তো সবাই-ই বলতে পারে। কিন্তু যে গল্প হাসায়, ভাবায়, আটকে রাখে আঠার মত... সে গল্প বলা, তাও আবার বিনা আয়াসে, তা বেশ শক্ত কাজ। এবং সে কাজটিই যেভাবে নির্মেদ বয়ানে করে 'পঞ্চায়েত', তাতে মুগ্ধ হতেও হয় বিলকুল। 

ঠিক সে কারণেই তাই 'পঞ্চায়েত' এর দ্বিতীয় সিজন নিয়ে প্রত্যাশা খুব বেশি। ট্রেলার দেখে যদিও বোঝা গিয়েছে, প্রথম সিজনের মত এবারেও নানাবিধ বিড়ম্বনার মুখোমুখিই হবেন অভিষেক ত্রিপাঠী, তবে সেসবের মাঝখানে খানিকটা অন্যকিছুর আভাসও আছে যেন। রিঙ্কির সাথে আধো আধো প্রণয়, গ্রাম্য রাজনীতির টুকরোটাকরা কোন্দল, সেসবের মাঝখানে সিচুয়েশনাল কমেডি, সহজাত হিউমার আর সূক্ষ্ম জীবনবোধ... সাটল সব টপিককে ব্লেন্ড করা হলো এবারেও। 'গুল্লাক' এর জনপ্রিয় চরিত্র 'বিট্টু কি মাম্মি'কেও ট্রেলারের কিছু অংশে দেখে ভালো লাগলো। জিতেন্দ্র কুমার, রাজপাল যাদব, নীনা গুপ্ত, চন্দন রায় এর সেই প্রানবন্ত উপস্থিতিও পেলাম। এবং, এই কম্প্যাক্ট ট্রেলার দেখার পরেই মূলত প্রত্যাশা হলো গগনচুম্বী। ছোট ছোট ঘটনার মধ্যে দিয়ে যেভাবে এগোলো গল্প, মূল নির্মাণেও যেন সেভাবেই এগোয় সব, আশা রইলো তাও। খুব ভারী জীবনবোধের দরকার নেই। সবাইকে কানেক্ট করে যেভাবে এই ওয়েব সিরিজ দেখিয়েছিলো চমৎকারিত্ব, সেটাই যেন থাকে। তাহলেই স্বস্তি। 

'রিঙ্কি'র সাথে প্রণয় কি হবে অভিষেকের? 

'পঞ্চায়েত' এর প্রথম সিজন প্রমাণ করেছিলো, ভালো গল্পের সাথে যদি দুর্দান্ত অভিনয় মেশে, তাহলে সবসময়েই হয় চমৎকারিত্ব। পাণ্ডববর্জিত, অজ্ঞাতকুলশীল গ্রামকেও তখন আর অচেনা মনে হয়না। কমফোর্ট জোনের বাইরে যুঝতে থাকা এক মানুষের স্ট্রাগলকেও তখন রিলেট করা যায় হাড়েমজ্জায়। যেভাবে আমরা জীবনকে দেখি, সে জীবন যে কিভাবে রঙ পালটায় মানচিত্রের নানা অংশে, সেটাও খুব গভীরভাবে বুঝতে পারা যায়। যেটা হয় এখানেও। এবং, মূলত সেসব কারণেই, এই নির্মাণের কোনোকিছুই আরোপিত মনে হয়না। নিজেকে মনে হয় তাদেরই অংশ, যারা 'ফুলেরা' গ্রামের গড়পড়তা বাসিন্দা। এবং যদি সেটাই হয় কারণ, অর্থাৎ, পরিচিত গ্রামের প্রিয় বাসিন্দাদের সাথে দেখা হচ্ছে বহুদিন পর, এই কারণেই মানুষ যদি হয় খানিকটা উত্তেজিত , তাদের দোষও দেয়া যায় না। কারণ, প্রিয়জনদের সাথে বহুদিন পরে দেখা হলে, একটু ছটফটানি থাকাই বোধহয় স্বাভাবিক! যে ছটফটানি হচ্ছে এখন। যা বজায় থাকবে আরো কিছুদিন, 'পঞ্চায়েত' এর দ্বিতীয় কিস্তি মুক্তির আগ পর্যন্ত। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা। কিছু অপেক্ষা শান্তির। এও তেমনি।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা