সুস্মিতা সেন কিংবা অভিষেক বচ্চন অথবা কুনাল কাপুর- ওটিটির বদৌলতেই যেন ফিনিক্স পাখির মতন পুনর্জন্ম হয়েছে তাদের। ওয়েব সিরিজ' 'পাতাললোক' এ জয়দীপ আহলওয়াত বা অভিষেক ব্যানার্জী, 'স্ক্যাম ১৯৯২' এর প্রতীক গান্ধী, কিংবা 'ব্রিদ' এ অভিষেক বচ্চন, 'আশ্রম' এ ববি দেওল... একেক নির্মাণ যেন একেক তারকার অভিনয়শৈলীর বিশেষ প্রদর্শনীর ক্ষেত্র হয়েই দাঁড়িয়েছে রীতিমতো...

ওটিটির এই সময়টা বড্ড অদ্ভুত। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর বদান্যতায় আজকাল ঘরের মধ্যেই সিনেমাহল, ভিন্ন স্বাদের অজস্র সব নির্মাণ কিংবা প্রযুক্তির সাথে সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়ার ভানুমতীর খেল। পাশাপাশি এই ওটিটি ক্রমশ 'অকেজো' করে আদ্যিকালের নানা ধ্যানধারণাকেও। আগে যেমন নির্মাণে গল্প কিংবা চিত্রনাট্যের বালাই না থাকলেও শুধুমাত্র জনপ্রিয় মুখের উপস্থিতিই সিনেমাকে ব্যবসাসফল করতে পারতো, সে সমীকরণ আজ ফুরিয়েছে। ওটিটির এই যুগে 'স্টারডম' নামক নড়বড়ে তরী দিয়ে সিদ্ধিলাভ করা যায় না। আজকাল জনপ্রিয় হতে হলে দুর্দান্ত গল্প নিয়ে আসতে হয় পুরোভাগে। নাহয় শুকনো ডাঙ্গায় হোঁচট খেতে হয়৷ আচমকা ভরাডুবির মুখোমুখি হতে হয়। 

পাশাপাশি ওটিটির এই পাল্টে যাওয়া সময় ক্রমশ মূলস্রোতে ফেরার সাহস দেয় এমন সব অভিনেতাকে, টাইপকাস্ট হয়ে যাদের ক্যারিয়ারই থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো বহুবার। যারা ক্যারিয়ার শেষের অশনিসংকেত শুনে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিলেন বহু আগেই। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরায়... বাগধারাটির সার্থক উদাহরণ হওয়ারও উপক্রম হয়েছিলো যাদের! 

এরকম অভিনেতাদের তালিকায় নাম আসবে অনেকেরই। সুস্মিতা সেন কিংবা অভিষেক বচ্চন অথবা কুনাল কাপুর...ওটিটির বদৌলতেই যেন ফিনিক্স পাখির মতন পুনর্জন্ম হয়েছে তাদের। ওয়েব সিরিজ' আরিয়া'য় সুস্মিতা সেন কিংবা 'ব্রেথ' এ অভিষেক বচ্চন, 'আশ্রম' এ ববি দেওল কিংবা 'দ্য এম্পায়ার' এ কুনাল কাপুর... একেক নির্মাণ যেন একেক তারকার অভিনয়শৈলীর বিশেষ প্রদর্শনীর ক্ষেত্র হয়েই দাঁড়িয়েছে রীতিমতো। 

ওটিটির এরকম বাড়বাড়ন্ত না থাকলে এই নির্মাণগুলো হতো কী না কিংবা সেসব নির্মাণে এই তারকাদের নেয়া হতো কী না, সে গুরুতর প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। তবে ওটিটির এই পৃথিবীই প্রথমবারের মতন বুঝিয়েছে, গল্পের চেয়ে বড় কিছু নেই আর। নির্মাণের প্রোটাগনিস্ট তাই আজকাল গল্প। সে গল্পই ক্রমশ তৈরী করে চরিত্র। এবং সেই চরিত্র অনুযায়ীই শেষে এসে অনুসন্ধান করা হয় উপযুক্ত অভিনয়শিল্পীর। কোনো 'মাকাল ফল' তারকাকে ডেকে এনে নির্মাণকে 'যাচ্ছেতাই' বানানোর যে ধাষ্টামো, সেখান থেকে ক্রমশ সরে আসার বার্তাই দেয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর এ আধিপত্য। 

জয়দীপ আহলাওয়াত 'পাতাল লোক' এর বরাতে চিনিয়েছেন তার জাত! 

তাছাড়া ওটিটির কল্যানে আজকাল নির্মাণের সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। সেসব নির্মাণের জন্যে শিল্পীর প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। সে প্রয়োজন মেটাতে এককালের উপেক্ষিত শিল্পীরা আজকাল বিভিন্ন নির্মাণে নিয়মিত পাচ্ছেন ডাক। এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিজেদের প্রতিভার সর্বোচ্চটাই দেখাচ্ছেন তারা৷ ভাবতে অবাক লাগে, একসময়ে যাদের অভিনয় দেখে ক্রমশ তাচ্ছিল্য করেছে সাধারণ দর্শক, আজকাল তারাই চমকে দিচ্ছে, করছে অসাধ্যসাধন। শুধু এখানেই শেষ না৷ যেসব তারকাকে শুধু 'শোপিস' হিসেবেই রাখা হতো বিভিন্ন নির্মাণে, তারাও আজকাল অভিনয়ের স্পেস পাচ্ছেন বিস্তর৷ এবং প্রশস্ত ভিত্তিভূমিতে বিস্ময়কর অভিনয়শৈলীতে ক্রমশই বুঝাচ্ছেন, কেন তারা এখনও প্রাসঙ্গিক। 

প্রতীক গান্ধী জনপ্রিয় হয়েছিলেন 'স্ক্যাম ১৯৯২' এর বদৌলতে! 

যেসব অভিনয়শিল্পী একটুখানি সুযোগের আশায় বার বার ঘুরেছেন নির্মাতাদের দরজায়, তারাও ওটিটির কল্যানে প্রাপ্ত সুযোগকে ক্রমশ লুফে নিয়েছেন৷ ঝলসে উঠেছেন। হয়েছেন জনপ্রিয়। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে প্রতীক গান্ধী, জয়দীপ আহলাওয়াত কিংবা অভিষেক ব্যানার্জীর কথা৷ 'স্ক্যাম ১৯৯২' দিয়ে যেমন টক অব দ্য টাউন হলেন প্রতীক গান্ধী, তেমনি 'পাতাল লোক' দিয়ে পাদপ্রদীপের আলো পেলেন জয়দীপ আহলাওয়াত। এরকমটা বলা যেতে পারে আরশাদ ওয়ারসির ক্ষেত্রেও। 'অসুর' দিয়েই একরকম পুনর্জন্ম তার। আর অভিষেক ব্যানার্জীর আলাদা করে আর না বললেও চলে। সাম্প্রতিক ওটিটি নির্মাণগুলোর অধিকাংশতেই তিনি যে বহাল তবিয়তে উপস্থিত, তা সচেতন দর্শকমাত্রই জানেন।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকে যেন নিজের একচেটিয়া সম্পত্তিই বানিয়ে ফেলেছেন অভিষেক ব্যানার্জী! 

মনে রাখতে হবে, যেহেতু ওটিটির এই জগতে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার মতন কঠিন সব নিয়মকানুন নেই, তাই এখানে লেখকেরা লিখতে পারেন স্বাধীনভাবে৷ ফলশ্রুতিতে অভিনেতারা অভিনয় করারও সুযোগ পান আশ মিটিয়ে। এই অভিনয়শিল্পীরা চরিত্রের প্রয়োজনেই নানা কিছু নিয়ে করতে পারেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সংযোজন অথবা বিয়োজন। আর ঠিক এখানেই ওটিটির চমৎকারিত্ব। সংস্কৃতির যে কোনো কাঁটাতার হয়না, সংস্কৃতিতে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনেই যে সাধিত হতে পারে চমৎকারিত্ব, সেটিই যেন খুব আলগোছে বুঝিয়ে দিয়ে যায় অজস্র সব স্ট্রিমিং সাইট। এবং ঠিক এভাবেই দর্শকের হৃদয় হরন করার পাশাপাশি স্ট্রিমিং সাইটগুলো বুঝিয়ে দিয়ে যায়, পালটে যাওয়া এ সময়ের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কেন তারাই সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ! 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা