ব্যাট হাতে হয়তো পারিনি, কিন্তু নির্মাণের বাইশ গজে বাংলাদেশের যে প্রতিনিধিত্ব আমি করছি, সেটা এভাবেই জিইয়ে রেখেছি। সেটা বজায়ও থাকবে। যে স্বপ্ন আমি এদেশের নির্মাণ নিয়ে দেখছি, সেটা ধূলিসাৎ হবেনা। ধূলিসাৎ হবার কোনো সম্ভাবনাই নেই...

ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক মানুষ এরকম থাকে, যাদের কেউ সেভাবে ঠিক চেনেনা। যারা পেছনে থেকে সবকিছু করে যায়। নিজেদের তাগিদে। নিজেদের ইচ্ছায়। মানু্ষ যখন কোনো একটা কাজ দেখে খুশি হয়, উচ্ছ্বসিত হয়, তখন সেই কাজের নেপথ্যের মানুষটি আড়ালে থেকে মুচকি হাসেন, খানিকটা তৃপ্তিও পান। আমি ঠিক সেরকমই একজন মানু্ষ। আড়ালে থাকি। আড়াল থেকেই দেখি। উপলব্ধি করি। মানুষের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করি।

যদিও 'হইচই বাংলাদেশ' এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে আমি আছি বহুদিন, বিনোদন জগতে আমার বিচরণ, কিন্তু নিজেকে 'পরিচিত মুখ' হিসেবে দাবী করার ধৃষ্টতা দেখাব না। যেসব প্রোগ্রামে আমাকে যেতে হয়, সেখানেও নিজের পরিচয় আলাদাভাবে না দিলে, অনেকেই ভীড়ের মাঝে আলাদা করতে পারেন না আমাকে। এবং সত্যি বলতে, আমি এই বিষয়টা বেশ উপভোগই করি। আমি তো আসলে জনপ্রিয় হতেও চাই না। আমি চাই, বাংলা কন্টেন্টের প্রচার। বাংলা কন্টেন্টের গ্লোবালাইজেশন। সেটা যদি ঠিকঠাকভাবে হয়, তাহলে বাকিসব নিয়ে ভাবনার আছেই বা কি?

এটা ঠিক, বাংলা এন্টারটেইনমেন্ট জগতের সাথে অনেকদিন ধরেই আমার সখ্যতা, তবুও নিজেকে আমি এই 'এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি'র মানুষ বলবো না। আমি পুরোপুরিই কর্পোরেট একজন মানুষ। আমার পরিবারেরও কেউ কখনো এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির সাথে ছিলো না। সেই আমিই একজন 'আউটসাইডার' হয়ে কিভাবে কিভাবে জড়িয়ে গেলাম বিনোদন জগতের সাথে, স্ট্রিমিং সাইট 'হইচই' এর সাথে, তা ভাবলে বেশ অবাকই লাগে। খানিকটা 'কপালের লিখন'ও মনে হয়।

আপনারা অনেকেই হয়তো অনুপম রায়ের গাওয়া 'বাংলাদেশের মেয়ে' গানটা শুনেছিলেন ও মিউজিক ভিডিও দেখেছিলেন। বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো এই মিউজিক ভিডিওটা। এবং এটা ছিলো আমার ফার্স্ট প্রোডাকশন। আমি প্রোডিউসার ছিলাম ওই মিউজিক ভিডিওর। এবং এই মিউজিক ভিডিও নিয়ে ইন্ডিয়ায় গিয়েই আমার প্রথম পরিচয় হয় 'শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মজ' এর সাথে। এরপর হইচইয়ের সাথেও পরিচয় হয়। আস্তে আস্তে এভাবেই জড়িয়ে পড়ি এই প্ল্যাটফর্ম এর সাথে।

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের পাঁড়ভক্ত ছিলাম। শৈশবে যখন ক্রিকেট খেলতাম, স্বপ্ন দেখতাম, একদিন দেশ সেরা ক্রিকেটার হবো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবো। ইডেনে খেলবো, লর্ডসে খেলবো। যদিও সেই স্বপ্ন সত্যি হয়নি পরে। তবে স্বপ্নটা আমি ছাড়িওনি। লুকিয়ে রেখেছিলাম ভেতরে। হইচইয়ের সাথে কাজ করতে এসে এই স্বপ্ন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। ভাবলাম- আমাদের দেশে তো অন্য দেশের কন্টেন্ট ডাব করে দেখে মানুষজন। কেমন হয়, যদি, আমার দেশের কন্টেন্ট ডাব করে দেখা শুরু করে বাকিরা? শুনতে একটু 'অসাধ্য সাধন' এর মত মনে হলেও আস্তে আস্তে সে কাজটাই করলাম আমরা। তাকদীর, মানি হানি, মহানগর- এই কন্টেন্টগুলো হিট হয়ে অজস্র ভাষায় ডাব হলো। সেসব কন্টেন্ট হিন্দি/তামিল/উর্দু ডাব দিয়ে দেখে ভালো লাগার কথা জানালো অনেকে। এগুলো যখন দেখলাম, চোখের সামনেই যখন হতে থাকলো একের পর এক প্যারাডাইম শিফট, গর্বে বুকটা ভরে উঠলো। মনে হলো- অন্য কোনোভাবে হলেও দেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে পারলাম!

এই যে, দেশীয় কন্টেন্টকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যাওয়া, এর পেছনে অনেক কিছুর ভূমিকা থাকলেও সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে যা, সেটি হচ্ছে গল্প। হইচই'তে কাজ শুরু করার সময় থেকেই তাই চেষ্টা করেছি, গল্পকে প্রাধান্য দিতে। আমি বিশ্বাস করি, সেলিব্রেটি ডিরেক্টরদের কাছ থেকেই যে বেস্ট গল্পটা আসবে, এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। যে কারো কাছ থেকেই গল্প আসতে পারে। আমি তাই শাওকিদের মত নবীন নির্মাতার উপরেও বিশ্বাস রেখেছি। এবং এই বিশ্বাসে যে আমি ঠকিনি একবিন্দুও, তার প্রমাণ সম্পর্কেও সবাই ওয়াকিবহাল এতদিনে।

মানুষকে বিশ্বাস করে জেতার এই প্রক্রিয়ায় বরাবরই তৃপ্তি পেয়েছি। এবং, সামনে আর যতটা সময় 'হইচই'তে আছি, এই বিলিভ সিস্টেম নিয়েই কাজ করে যাবো। এটা নিশ্চিত করবো- সারা বিশ্বের সবাই যেন বাংলাদেশের কন্টেন্ট দেখে। পাশাপাশি, এটাও মাথায় থাকবে- এদেশের যে হিডেন ট্যালেন্টগুলো আছে, তারা যেন এক্সপোজার পায়। ব্যাট হাতে হয়তো পারিনি, কিন্তু নির্মাণের বাইশ গজে বাংলাদেশের যে প্রতিনিধিত্ব আমি করছি, সেটা এভাবেই জিইয়ে রেখেছি। সেটা বজায়ও থাকবে। যে স্বপ্ন আমি এদেশের নির্মাণ নিয়ে দেখছি, সেটা ধূলিস্যাৎ হবে না। ধূলিস্যাৎ হবার কোনো সম্ভাবনাই নেই। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা