আমি চাই আমাদের দেশে নারী পরিচালক, সিনেমাটোগ্রাফার ও চিত্রনাট্যকার আরো বেশি তৈরি হোক। বিশেষ করে, একজন নারী চিত্রনাট্যকার খুব বেশি দরকার। কারণ নারীদের কথা, তাদের গল্প, ব্যাথা, দৃষ্টিভঙ্গি- এগুলো একজন নারী যেভাবে বলতে পারে একজন পুরুষের লেখনী দিয়ে সেটা ঠিক সেভাবে প্রকাশ করা সম্ভব নয়...
আমার ফিরে আসার গল্পটা যত বেশি ইন্টারেস্টিং, সিনেমার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের মঞ্চে উপস্থাপন করার ব্যাপারটা তারচেয়েও বেশি ইন্টারেস্টিং। বাংলাদেশী চলচ্চিত্রকে বিশ্বমঞ্চে এভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ আমার হয়েছে সেটার জন্য আমি আনন্দিত, গর্বিত এবং আমি অবশ্যই সৌভাগ্যবান যে এই সুযোগটা আমারই হয়েছে প্রথম। তবে আমি মনে করি, এটা মাত্র শুরু। এভাবেই বাকিরা এগিয়ে নেবে। এবং শুরুর অংশটুকুতে আমি ছিলাম- সেটা আমার জন্য ভীষণ আনন্দের।
রেহানা মরিয়ম নূর- এর কারণে আমার সুযোগ হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সিনেমাকে প্রতিনিধিত্ব করার। এই বিষয়টা খুবই গর্বের একটা ব্যাপার, যখন কিনা আমাদের সিনেমা নিয়ে চারপাশে কথা হচ্ছে, প্রশংসা হচ্ছে। বাংলাদেশী সিনেমা এবং নির্মাতাদের মধ্যে সাদ এবং 'রেহানা মরিয়ম নূর' এর পুরো টিমটা হয়তো এই কাজটা প্রথমবার বড় পরিসরে করতে পেরেছে। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের দেশে অনেক মেধাবী নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, সিনেমাটোগ্রাফার এবং অভিনয়শিল্পী আছেন যারা এইভাবে দেশীয় সিনেমাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থাপনের ক্ষমতা রাখেন।
আমাদের প্রতিবন্ধকতা অনেক, বাজেটে সমস্যা, টেকনিক্যাল অনেক প্রবলেম। আবার এমন অনেক ব্যাপার আছে, যেগুলো বলতে চেয়েও বলতে পারি না, এক্সপ্রেস করা সম্ভব হয় না। সেই সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এখন বিশাল একটা পরিবর্তন এসেছে। সেটা কিন্তু শুধু 'রেহানা মরিয়ম নূর' দিয়ে নয়। সেটা নুহাশ, সুমিত, রুবাইয়াত, রাব্বি মৃধা- সহ আরো অনেকের চলচ্চিত্র দিয়ে। আমার খুব ভালো লাগে এখনকার প্রজন্মের নির্মাতা এবং অভিনেতারা তাদের গল্পটা বলতে চায়, নিজেদের মতো করে দেখাতে চায় এবং সেসব কারণেই এখন বিশ্বের নানা দেশে নিজেদের চলচ্চিত্র নিয়ে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। আমাদের সিনেমার একটা নির্দিষ্ট ভাষা তৈরি হচ্ছে, যে ভাষাটাকে বাইরের দর্শকেরা আগ্রহের সাথে গ্রহণ করছেন।
আমাদের দেশে তো অভিনেত্রীদের কাজ করার সুযোগ ভীষণ কম, সেটা দুঃখজনক। নারীপ্রধান গল্পের কাজ আমাদের দেশে তুলনামূলক অনেক কম হয়। এবং যখন কোনো অভিনেত্রী বয়সের খাতায় ত্রিশ পার করে ফেলেন, তখন তাকে ভেবে আলাদাভাবে কখনোই কোনো কাজ করা হয় না। সবাই নিজেদের পরিশ্রম, সততা দিয়ে কাজ করতে চায় কিন্তু আমাদের সে সুযোগটা কম। সুযোগ পেতে হলে হয় তাকে প্রযোজক হতে হয়, নয়তো প্রযোজক আনতে হয় বা পরিচালক অথবা প্রযোজকের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতে হয়।
এসব ট্রেন্ড ভাঙা খুবই জরুরী। এখন নারীপ্রধান গল্প হওয়া ভীষণ জরুরী। আমরা কাজ করতে পারবো- এজন্য নয় শুধু, বিষয়টা সমাজের পরিবর্তনের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। নারীর চোখে নারীর গল্প দেখা- এই ব্যাপারটা সমাজের পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি আমি। নারীপ্রধান গল্পে চরিত্রের ভিন্নতা আনতে হবে। হয়তো মহান কেউ, নয়তো ভিলেন- এমন টাইপের নারী চরিত্রের চেয়ে নারীদের চরিত্রেও যে বিভিন্ন গ্রে-শেড থাকতে পারে তা দেখানোটা জরুরী।
আমি চাই আমাদের দেশে নারী পরিচালক, সিনেমাটোগ্রাফার ও চিত্রনাট্যকার আরো বেশি তৈরি হোক। বিশেষ করে, একজন নারী চিত্রনাট্যকার খুব বেশি দরকার। কারণ নারীদের কথা, তাদের গল্প, ব্যাথা, দৃষ্টিভঙ্গি- এগুলো একজন নারী যেভাবে বলতে পারে একজন পুরুষের লেখনী দিয়ে সেটা ঠিক সেভাবে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। একজন নারী যেভাবে সমাজকে দেখবে সেটা একজন পুরুষের পক্ষে খুব কঠিন। একজন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ সেটা করতে পেরেছেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, নারীর গল্প নারী বললে সেটার সঙ্গে আরো বেশি মানুষ কানেক্ট করতে পারবে।