
কখনো ‘মিস্টার জনির’ দয়াল, ‘লাইভ ফ্রম ঢাকার’ সাজ্জাদ আবার ‘একাত্তরের’ সেলিম হিসেবে সেলুলয়েডে হাজির হয়েছেন। লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন থেকে ঊনলৌকিক- অসাধারণ অভিনয় নৈপুণ্য দিয়ে তিনি বারবার দর্শকের মন জয় করেছেন অবলীলায়...
এই সময়ে নান্দনিক অভিনয় দক্ষতা দিয়ে যে কয়জন অভিনেতা আমাদের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন তাদের মধ্যে আলোচিত একটি নাম মোস্তফা মনোয়ার। গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে নিজের সহজাত অভিনয় প্রতিভার মাধ্যমে তিনি কখনো ‘মিস্টার জনির’ দয়াল, ‘লাইভ ফ্রম ঢাকার’ সাজ্জাদ আবার ‘একাত্তরের’ সেলিম হিসেবে সেলুলয়েডে হাজির হয়েছেন এবং অসাধারণ অভিনয় নৈপুণ্য দিয়ে মন জয় করেছেন অবলীলায়। সম্প্রতি তিনি আলোচনায় এসেছেন ওয়েব সিরিজ ‘ঊনলৌকিক’ এবং ‘লেডিজ এন্ড জেন্টলমেন’ এ অভিনয় করে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সময় পার করছেন এই গুনী অভিনেতা।
কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে পাস করে বের হওয়ার সময় কখনোই কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করার আক্ষেপ নিয়ে ভারাক্রান্ত সেই কিশোরটি আজ দেশের গুনী অভিনেতাদের মধ্যে একজন। এক পরিচিত বড় আপুর মাধ্যমে এলাকার এক নাটকে অংশগ্রহণ এবং সেখান থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে ‘প্রাচ্যনাট’ এর সাথে যুক্ত হওয়া।
মনোয়ার ভর্তি হয়েছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে। অভিনয়ের জন্য এক বছর পর সাবজেক্ট পরিবর্তন করে বিবিএতে ভর্তি হলেন। সেই সময় বন্ধুত্ব হয় অনিমেষ আইচ, বদরুল আনাম সৌদ সহ আরো কয়েকজন সাংস্কৃতিক জগতের মানুষের সাথে।
হঠাৎ করেই অনিমেষ আইচের অনুরোধে রাত ১টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত বসে নানা চিন্তাভাবনা মাথা থেকে কাগজে নিয়ে লিখে শেষ করলেন ‘হলুদ’ নামের নাটক। জীবনের সেই প্রথম লেখা নাটকের জন্য পেলেন সেরা চিত্রনাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার প্রাপ্তি। পরবর্তীতে তাঁর লেখা ‘ভূতোগ্রাফার’ নাটকটিও বেশ আলোচনায় এসেছিলো।
এর মাঝেই অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘লাবন্যপ্রভা’, একক নাটক ‘আগন্তুক’ সহ আরো বেশ কিছু নাটকে। ছোট ছোট চরিত্রে তার অভিনয় তখন থেকেই নজরে আসে অনেকের। তবে রেদওয়ান রনি'র ‘মিস্টার জনি’ নাটকটি তাকে অভিনেতা হিসেবে সবার কাছে জনপ্রিয় করে তোলে।

অন্যদিকে সিনেমাতেও এর মাঝে অভিষেক ঘটে তার। নাসির উদ্দিন ইউসুফের ‘গেরিলা’ বা রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ফজলে রাব্বির ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ তাকে অভিনেতা হিসেবে পরিপক্ক করে তোলা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করে সফলতার সাথেই।
তবে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ এর ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ সিনেমাটি তার ক্যারিয়ারের অন্যতম একটি মাইলফলক। এই সিনেমায় তার অভিনয় দক্ষতা মুগ্ধ করেছে সিনেমাপ্রেমীদের। সাজ্জাদ চরিত্রটি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য শ্যুটিং শুরুর একমাস আগে থেকেই ক্রাচ ব্যবহার করে হাটতেন তিনি। ডেডিকেশন লেভেল কতোটা হলে একজন অভিনেতা নিজেকে এভাবে তৈরী করেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সামনে আসছে নূরুল আলম আতিকের ‘মানুষের বাগান’ সিনেমাটি। জানা গেছে এখানে তাঁর চরিত্রটা এমন একজন মানুষের, যিনি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সব হারিয়ে একসময় মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে যান। তারপর সুস্থ হওয়ার পরও তিনি মানসিক ভারসাম্যহীনের অভিনয় করে যান। কারণ, তখন অনেক মানুষ তাঁর কাছে টাকা পায়! এই চরিত্রে অভিনয় একজন অভিনেতা হিসেবে তার কাছে চ্যালেঞ্জিং ছিলো বলে জানিয়েছেন তিনি এক সাক্ষাৎকারে।
সম্প্রতি আলোচিত গায়ক জন কবিরের ‘সুখী মানুষের কান্না’ নামক মিউজিক ভিডিওতেও দেখা গেছে মোস্তফা মনোয়ারকে। করোনাকালীন সময়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যকার সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত জায়গার নানা উত্থান-পতনের গল্প উঠে এসেছে এতে। এছাড়াও ‘পায়ের নিচে মাটি নেই’ এবং দক্ষ নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘গুনিন’ সহ আরও বেশ কিছু কাজ নিয়ে হাজির হবেন তিনি।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও মোস্তফা মনোয়ার ইতিমধ্যে ‘একাত্তর’ ওয়েব সিরিজ দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। এলাকার গুন্ডা সেলিম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে যান দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে- এমন একটি চরিত্রে তার অভিনয় দক্ষতা অসাধারণ অনুভূতির মাঝে নিয়ে যায় আমাদের। খুব বেছে বেছে কাজ করা এই মানুষটি এবছর হাজির হয়েছেন দুটি বেশ আলোচিত এবং প্রতীক্ষিত ওয়েব প্রোজেক্ট নিয়ে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘লেডিজ এন্ড জেন্টলম্যান’ এবং রবিউল আলম রবি পরিচালিত ‘ঊনলৌকিক’ অ্যান্থোলজি সিরিজের 'মরিবার হলো তার স্বাদ' গল্পে দুটি ব্যতিক্রমী এবং শক্তিশালী চরিত্রে দেখা মিলেছে তার। প্রথমটি জি-ফাইভে দ্বিতীয়টি দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’তে সম্প্রচার করা হয়েছে।
‘ঊনলৌকিক’ সিরিজের প্রথম গল্প ‘মরিবার হলো তার স্বাদ’ এ তার পারফরম্যান্সের কথা বিশেষভাবে বলতেই হবে। কবির চরিত্রে মুগ্ধ করেছেন মোস্তফা মনোয়ার। শিবব্রত বর্মনের লেখা এই গল্প সেলুলয়েডে নির্মানের মুন্সিয়ানা এবং অভিনয় দক্ষতা দিয়ে নান্দনিকভাবেই দর্শকদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে। একজন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারের রোগীর ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন মোস্তফা মনোয়ার। যে চরিত্রেই এই গুনী অভিনেতা কাজ করেছেন, দর্শক মনে দাগ কেটেছেন অবলীলায়।
ব্যক্তিজীবনে কর্পোরেট চাকুরির পাশাপাশি অভিনয়টা করেন নিজের আত্মার খোরাক যোগাতে। মোস্তফা মনোয়ার সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, ‘আমি যদি আর্থিকভাবে অভিনয়ের ওপর নির্ভরশীল হতাম, তাহলে আমাকে অনেক কাজ করতে হতো। আমার সুবিধাটা হচ্ছে, বেছে নিজের পছন্দে কাজ করতে পারি। চাইলে করতে বা ছাড়তে পারি। আর আমার কাছে মনে হয় যে, আমাদের কেবল কাজটা করে যাওয়া জরুরি। কিছু কাজ ভালো হবে, কিছু হয়তো খারাপ। কিন্তু কাজ করতে হবে এটাই দিনশেষে সত্য।'
আজ মোস্তফা মনোয়ারের জন্মদিন। শুভকামনা রইলো এই গুনী অভিনেতার জন্য। শুভ জন্মদিন!