
এক মডেল হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে শিহাব শাহীন সাজিয়েছেন প্লট, জমজমাট গল্পের ওপর নির্মাণের দারুণ মুন্সিয়ানা আর নিশো-সিয়াম-জোভানদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ঝলক দুই মিনিট ধরে বুঁদ করে রাখলো নেশাগ্রস্থের মতোই...
একটি খুন, কয়েকটি চরিত্র, একটা অমীমাংসিত রহস্য। মরীচিকা মানেই এক ধরণের ভ্রান্তিবিলাস, চোখের ভ্রম। শিহাব শাহীনের আপকামিং ওয়েব ফিল্ম মরীচিকার ট্রেলার দেখার পরেও কাছাকাছি রকমের একটা অনুভূতি হলো। অনেক কিছু দেখে ফেলার পরেও মনে হলো কিছুই যেন দেখিনি! এক মডেল হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে শিহাব শাহীন সাজিয়েছেন প্লট, জমজমাট গল্পের ওপর নির্মাণের দারুণ মুন্সিয়ানা আর নিশো-সিয়াম-জোভানদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ঝলক দুই মিনিট ধরে বুঁদ করে রাখলো নেশাগ্রস্থের মতোই।
মরীচিকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক নিঃসন্দেহে আফরান নিশো। এর আগেও একবার শিহাব শাহীনের পরিচালনায় ওয়েব কন্টেন্টে দেখা গিয়েছিল তাকে, দ্বিতীয় কৈশোর নামের সেই ওয়েব ফিল্মে নিশোর সঙ্গে ছিলেন তাহসান ও অপূর্ব। ১৪ আগস্টের পর আরও একবার শিহাব শাহীন যখন থ্রিলারে হাত দিলেন, ভরসা রাখলেন নিশোর ওপরেই। আপাদমস্তক ডার্ক শেডের ক্যারেক্টারটায় নিশো যেন নিজেকে জাত অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করার মঞ্চ হিসেবেই বেছে নিলেন।
নাটকের নিশোর সঙ্গে মরীচিকার নিশোর আকাশ পাতাল পার্থক্য। লাউড এক্টিং এখানেও আছে, তবু সেটা ভীষণ প্রাণবন্ত, অসম্ভব স্বতঃস্ফূর্ত! ট্রেলারের শেষ প্রান্তে গুলি মিস হওয়ার পর তিনি যেভাবে 'মিস! মিস!' বলে চিৎকার করে উঠলেন, কিংবা তার মুখে 'দানবের বিনাশ নাই! আমার বিনাশ নাই!' ডায়লগটা যেন মাথার ভেতর গেঁথে গেল। মরীচিকায় নিশোর অভিনয় দেখাটাও চোখের শান্তি হবে নিঃসন্দেহে।
মরীচিকার ঘোষণা যখন এসেছিল, তখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার ছিল স্টারকাস্ট। নিশো, সিয়াম, মাহি- সবাই এক কন্টেন্টে। আছেন জোভানও। কে কাকে ছাপিয়ে যেতে পারেন, এমন একটা সুস্থ প্রতিযোগিতার জন্য দারুণ একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি ছিল। ট্রেলারের বিচারে সেখানে নিশো বেশ খানিকটা এগিয়ে। কিন্তু সিয়াম ঢাকা পড়েছেন নিশোর আলোয়- এমনটা বললে বড্ড অবিচার হবে।

সিয়ামের রোলটা পুলিশের, যিনি মডেল হত্যার তদন্ত করছেন। সেই চরিত্রে অতিমানবীয় কোন ব্যাপার নেই, পাওয়ারের শো-অফ নেই। একদম আটপৌরে একটা চরিত্র, যাকে আমাদের চারপাশেই দেখা যায়। যে পুলিশ সিনিয়রের ধমক খায়, নিজের জুনিয়রদের আবার কড়া ভাষায় বকাও দেয়, যার গুলি নিশাণা মিস করে, ভিলেনের সাথে টক্করে যে এক কদম পিছিয়ে থাকে। এই সাধারণত্বটাই সিয়ামের চরিত্রটাকে অনেক বেশি বাস্তবিক করে তুলেছে, প্রশ্ন তোলার অবকাশ রেখেছে কম।
জোভানের অভিনয় ভালো লেগেছে, জড়তা ছিল না। ট্রেলারে যতটুকু স্ক্রিনটাইম পেয়েছেন, ভালো করেছেন। মাহিয়া মাহী চলনসই। গ্ল্যামারাস ক্যারেক্টারে তার বিকল্প গোটা ইন্ডাস্ট্রিতেই খুব একটা নেই এখন। 'বহ্নি' চরিত্রটার জন্যে তিনিই সম্ভবত সবচেয়ে ভালো অপশন। তবে তার পারফরম্যান্সটা বোঝা যাবে মরীচিকা মুক্তি পেলেই। মরীচিকার ভালো ব্যাপার হচ্ছে, পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতারাও ভালো করেছেন। একটা দৃশ্যের জন্যেও যাদের দেখা গেছে, তাদের অভিনয় নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই খুব একটা।
তাসনুভা তিশাকে নিয়ে ১৪ আগস্ট বানিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন শিহাব শাহীন। সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এমন সাহসী কন্টেন্ট বাংলাদেশের বিনোদন জগত খুব কমই দেখেছে। কিছু সাহসী দৃশ্যের কারণে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল ওয়েব ফিল্মটিকে। আরও একবার এক মডেল হত্যাকান্ডের 'সত্যি ঘটনা অবলম্বনে' নির্মিত কন্টেন্ট নিয়েই হাজির হচ্ছেন শিহাব শাহীন। এবার তার ওয়েব ফিল্মের পাত্র-পাত্রী-প্ল্যাটফর্ম সবকিছুই অনেক বেশি পরিপক্ক। কাজেই মরীচিকা নিয়ে দর্শকের প্রত্যাশাটা আকাশচুম্বী হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় মোটেও। সেই প্রত্যাশা পূরণ হোক, টিম মরীচিকার কাছে দর্শক হিসেবে এটাই চাওয়া।
মরীচিকার ট্রেলার দেখুন এখানে ক্লিক করে-