
সিনেমার সত্তর শতাংশ শেষ, ক্লাইম্যাক্সের ঠিক আগে টভিনো থমাস পড়লেন ইনজুরিতে। বেশ বড়সড় এক ইঞ্জুরি। নির্মাতাকে কিছু জানালে তিনি চিন্তিত হয়ে যাবেন, তাই তাকেও কিছু জানালেন না। মাসখানেক শয্যাশায়ী থেকে খানিকটা সুস্থ হয়ে এরপর ফিরলেন শুটিং সেটে। ক্লাইম্যাক্সে অ্যান্টাগনিস্টের সাথে করলেন প্রবল লড়াই। যদিও পর্দায় দেখে মোটেও বোঝার উপায় রইলো না, এই লড়াইয়ের আগেই কিরকম বিছানাবন্দী ছিলেন তিনি!
উপমহাদেশে সুপারহিরো ফিল্ম বানানো যে বিরাট ঝক্কির ব্যাপার, তা সচেতন অডিয়েন্সমাত্রই জানেন। তবুও যুগে যুগে বিস্তর সুপারহিরো সিনেমা তৈরী হয়েছে এ বিশেষ অঞ্চলে। তবে সেসব সিনেমার মধ্যে সফল কয়টা আর কয়টাই বা ব্যর্থ, তা বেশ চিন্তা উদ্রেগকারী এক প্রশ্ন। এই উপমহাদেশের অধিকাংশ সুপারহিরো ফিল্মই যেভাবে হলিউডি মডেল থেকে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত, সেখান থেকে সফলতা প্রত্যাশা খানিকটা সোনার পাথরবাটিও যেন। তবে ব্যতিক্রমও যে নেই, তা না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে মালায়ালাম সুপারহিরো ফিল্ম- 'মিন্নাল মুরালি'র কথা। সাম্প্রতিক 'মিন্নাল মুরালি'তে যেমন প্রোপার এক সুপারহিরোকে পেলো দর্শক, তেমনি সিনেমাটাও হলো বিস্তর সফল। পাশাপাশি, গল্পেও এলো বিস্তর স্বকীয় উপাদানের উপস্থিতি।
'মিন্নাল মুরালি'র সাফল্যের পেছনে প্রথমত ভূমিকা রেখেছিলো যা, তা অবশ্যই গল্পের স্বকীয়করণ৷ পাশ্চাত্যের মশলাদার ঘরাণা থেকে অনেকটাই আলাদা হয়ে লুঙ্গি, চপ্পল পরিহিত যে সুপারহিরোকে নিয়ে আসা হয়েছে পর্দায়, সে সুপারহিরোর মধ্যে যেমন 'চেনা-পরিচিত' এক আবহ ছিলো, তেমনি ছিলো কালচারাল আইডেন্টিটির সুলুকসন্ধানও। পাশাপাশি, গল্পের উত্থান-পতনের ব্যালেন্সটাও ছিলো দারুণ। একজন সাধারণ মানুষ কিভাবে সুপারহিরো হয়ে উঠছেন, সে গল্পে কিভাবে যুক্ত হচ্ছে ইমোশনাল সব আপডাউন, শক্তিশালী এক অ্যান্টাগনিস্ট এসে সুপারহিরোকে কিরকম বিপাকে ফেলছেন, এসব বিষয়ের প্রেজেন্সও ছিলো ছিমছাম, নিয়ন্ত্রিত। আলাদা করে অ্যান্টাগনিস্টের প্রসঙ্গকেও নিয়ে আসা যেতে পারে সর্বাগ্রে৷ এ সিনেমার 'শিবু' নামের যে অ্যান্টাগনিস্ট, সে ভিলেন হলেও কোথাও গিয়ে তার যেন বিষন্নতা অনুভব হয়, শোকগ্রস্ত হতে হয়, আবার তার কার্যকলাপে ভীতিগ্রস্তও হতে হয়... সবমিলিয়ে এ চরিত্রের ব্যাপ্তি এতটাই অন্যরকম, কোথাও গিয়ে যেন 'মিন্নাল মুরালি'র সফলতার পেছনে প্রধানতম এক কারণ হিসেবেই ভূমিকা রাখে সে।

মজার বিষয়, সিনেমার স্ক্রিপ্ট পড়ে 'শিবু' চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়েছিলেন প্রোটাগনিস্ট টভিনো থমাস। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এ চরিত্রটির ব্যপ্তি বেশ গভীর। এদিকে নির্মাতা ভেবে রেখেছেন, টভিনো 'মিন্নাল মুরালি' চরিত্রটি করবেন। পরবর্তীতে নির্মাতার কথাই শিরোধার্য হয়ে যায়। টভিনো থমাস হয়ে যান সুপারহিরো 'মিন্নাল মুরালি।' মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সুপারহিরো হবার গুরুভার পেয়ে টভিনো থমাস খানিকটা কি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন? তা জানা নেই। তবে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে জেনেছিলাম, সিনেমার প্রয়োজনে তিনি করেছেন বহুকিছু।
এই সিনেমার শুটিং হয়েছিলো দুই বছর ধরে। পুরোটা সময়ে টভিনো 'মিন্নাল মুরালি'র ফিজিক মেন্টেন করেছেন। যদিও এর মধ্যে অন্য ঘরানার ভিন্ন চরিত্রের বেশ কিছু সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন। তবু ওজন বাড়তে বা কমতে দেননি একরত্তি। রেখেছেন স্থির। যদিও এতকিছু করার পরেও সিনেমার শেষাংশে এসে হয়েছিলো বিপত্তিও। সিনেমার সত্তর শতাংশ শেষ, ক্লাইম্যাক্স এর আগ দিয়ে পড়েছেন ইনজুরিতে। বেশ বড়সড় এক ইঞ্জুরি। নির্মাতাকে কিছু জানালে সে চিন্তিত হয়ে যাবেন, নির্মাতাকেও কিছু জানাননি। মাসখানেক শয্যাশায়ী থেকে খানিকটা সুস্থ হয়ে এরপর ফিরেছেন শুটিং সেটে। ক্লাইম্যাক্সে অ্যান্টাগনিস্টের সাথে করেছেন প্রবল লড়াই। যদিও পর্দায় দেখে মোটেও বোঝার উপায় নেই, এই লড়াইয়ের আগেই কিরকম বিছানাবন্দী ছিলেন তিনি!

টক-ঝাল-মিষ্টি সমীকরণে, অনিশ্চিত কিছু গল্পে-শ্রমে এভাবেই জন্ম হয়েছে উপমহাদেশের অন্যতম সফল সুপারহিরোর। যে সুপারহিরো বুঝিয়েছে, সিজিআইতে দক্ষ না হয়েও সুপারহিরোর গল্প বলা যায় অনায়াসে। যে সুপারহিরো এটাও দেখিয়েছে, সব সুপারহিরোর জন্মই আমেরিকাতে না। কিছু সুপারহিরো উপমহাদেশেও জন্মায়! এই প্যারাডাইম শিফটের কাজ বেশ দারুণভাবে করেই স্বকীয় এক অবস্থানে পৌঁছেছে মিন্নাল মুরালি!