হৃদয় ছুঁয়ে দেয়া অসাধারণ এই সিনেমাগুলো দেখেছেন তো?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

তালিকার এ ত্রয়ী সিনেমা জীবনবোধ'কে ঘনিষ্ঠভাবে উপলব্ধি করায়। হৃদয়ের অতলান্তপুর থেকে তুলে নিয়ে আসে অপার্থিব সব অনুভূতি। এই সিনেমাগুলোর চমৎকারিত্বই আর অভিনবত্ব এখানেই...
পাওলো কোয়েলহো'র আত্মজীবনী 'হিপ্পি' পড়ছিলাম। জীবনের এক পর্যায়ে লেখক হিপ্পিদের সাথে কাটিয়েছেন বেশ কিছুদিন। সে সময়ের খানিকটা নিয়েই বই। বইয়ের একটা অংশ এরকম- লেখক আরো জনাবিশেক হিপ্পি'র সাথে মিলে একটা বাসে ( যে বাসকে ডাকা হচ্ছে জাদুর বাস) করে আর্মস্টারডাম থেকে নেপাল যাচ্ছেন। সে বাসে নানা দেশের, নানা জাতের মানুষ। সবাই একত্রিত হয়ে যাচ্ছে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে। কী উদ্দেশ্যে? কেউ জানে না। যেতে হবে, এটুকুই শুধু জানে তারা।
আমাদের জীবনও খানিকটা 'হিপ্পি' বইয়ের এ অংশের মতন। অদ্ভুত এক 'জাদুর বাস' এ সওয়ার হয়ে সবাই ছুটে যাচ্ছি সময়ের এক জংশন থেকে আরেক জংশনে৷ অনেকের কাছে এই ছুটোছুটি নিরর্থক মনে হয়। আবার অনেকের কাছে গতির এই পরিণতিই জীবন। সময়ের যে প্রকোষ্ঠেই আমরা অস্তিত্বের সংকটে নাচার হই না কেন, কালের স্রোতে আমাদের যতই তুচ্ছ করে রাখুক না কেন , হঠাৎ হঠাৎ দুয়েকটা ভালো সিনেমা, বইয়ের কিছু লাইন, কিছু ভালো গান... আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই ছুটে চলার মাঝেও কখনো কখনো থেমে যেতে হয়। একঘেয়ে জীবনকে আবার নতুন চোখে উল্টেপাল্টে দেখতে হয় তখন। এরকমই হলো সম্প্রতি। অদ্ভুত সুন্দর জীবনবোধের তিনটি সিনেমা দেখলাম, গত ক'দিনে, যা চিন্তাজগতে বেশ ভালো কিছু পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, তা নিয়েই আজকের কথাবার্তা।
১. সারভাইভাল ফ্যামিলি
এই সিনেমা নিয়ে মুভি রিলেটেড কমিউনিটি গুলোতে খুব কম আলোচনা দেখেছি৷ কেন কম আলোচনা হয়েছে, সেটা আমি জানি না৷ তবে, 'ফিল গুড মুভি' যারা হন্যে হয়ে খুঁজছেন, তাদের জন্যে এ সিনেমা মাস্ট ওয়াচ। বিশেষ করে লকডাউন, করোনার এই আতঙ্কের মধ্যে যদি অন্ততপক্ষে দুটি ঘন্টা একটু নির্ঝঞ্ঝাটে পার করতে চান, দেখতে পারেন অন্যরকম গল্পের এই সিনেমা।

সিনেমার গল্পটা খানিকটা ভিন্ন স্বাদের। টোকিও'তে হঠাৎ করে এক সকালে দেখা দেয় লোডশেডিং। এমন লোডশেডিং, যে লোডশেডিং মাসের পর মাস কেটে যায়, বিদ্যুৎ আর আসেনা। এই নিঃসীম ব্ল্যাকআউটের মধ্যে শহরের প্রাণকেন্দ্রে বসবাস করা এক দম্পতির বিদ্যুৎ-বিহীন জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার গল্পই 'সারভাইভাল ফ্যামিলি।' বিদ্যুৎ এর অভাবে প্রথমে মোবাইলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সুপারশপগুলোতে এটিএম কার্ড দিয়ে জিনিসপত্র কেনা বন্ধ হয়ে যায়৷ হুট করেই মানুষজন আবিষ্কার করে, তাদের গাড়ি আছে, বাড়ি আছে, প্রচুর টাকা আছে, কিন্তু খাবার নেই। পানীয় জল নেই। কী করবে তারা? তারা কী এই ইট-কাঠ-কংক্রিটের জঙ্গলে টিকে থাকবে, নাকি বলবে -
দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর!
এরকমই এক সময়ে সিনেমার পরিবারটি নেমে পড়ে জীবনযুদ্ধে। বেঁচে থাকার যুদ্ধে।
মাস্টওয়াচ!
২. ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি
কখনো কিছু সিনেমা দেখলে গলার কাছে দলাপাকিয়ে ওঠে কষ্ট৷ কিন্তু ঠিক গলার কাছে এসেই আটকে থাকে এই খচখচে অনুভূতি। বাইরে আসে না। বাইরে না আসাটাই অস্বস্তির। এ সিনেমা সে ক্যাটাগরির৷ মূল গল্পটা এরকম, আপনি সিনেমার মূল চরিত্রের দুঃখে কষ্ট পাবেন, বিষণ্ণ হবেন, মেলানকোলিক ট্রিটমেন্ট ঝুলে থাকবে সিনেমার পুরো রানটাইম জুড়ে, কিন্তু দর্শকের কিছু করার থাকবে না৷ অক্ষম আক্ষেপ দেখানো ছাড়া। দগ্ধে দগ্ধে মারা যাকে বলা, এ সিনেমা সে অনুভূতি আপনাকে দেবে।

'ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি' এক নিঃসঙ্গ মানুষের গল্প। নিজের ভুলে যিনি পুড়িয়ে মারেন নিজের তিন সন্তানকে৷ মানসিকভাবে ধাক্কা খান৷ স্ত্রী ছেড়ে যায় তাকে। জীবন চলছিলো। হঠাৎ একদিন খবর পান, নিজের একমাত্র বড়ভাই মারা গিয়েছে। সে ভাইয়ের রয়েছে একটিমাত্র সন্তান। যে অবাধ্য। এই অবাধ্য ভাইপো কে নিয়ে এই নিঃসঙ্গ মানুষটির এগিয়ে চলার গল্পই আমরা দেখি সিনেমায়। কেন এই সিনেমাটি বিষাদগ্রস্ত মেট্রোপলিস, সেটা এখানে বলা মোটেও সমীচীন না৷ দেখলেই বোঝা যাবে তা।
৩. দ্য হেল্প
দুই মলাটের একটি বইয়ের ক্ষমতা আসলে কতটুকু? একটি ভালো বই চাইলে থমকে দিতে পারে ইতিহাসের গতিপথও। যেটা আঁচ করেই হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে প্রত্যেক ঘরের বই টেনে টেনে রাস্তায় এনে পোড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন হিটলার। ইতিহাসের এই কলঙ্কিত ঘটনার উল্লেখ পাবেন 'দ্য বুক থিফ' নামের বই এবং সিনেমায়৷ বইটি অসাধারণ, সিনেমাটিও। যদিও 'দ্য বুক থিফ' নিয়ে আজকের কথাবার্তা না। আজ কথা বলছি 'The Help' সিনেমা নিয়ে।

আমেরিকায় বর্ণবিদ্বেষ নতুন কিছু না৷ এ নিয়ে সিনেমাও আছে অজস্র। The Green Book, Malcolm X, The Hurricane, Mississippi Burning, The Hate U Give, 12 Years a Slave.... অনেক সিনেমা। সেই একই 'বর্ণবিদ্বেষ' এর এক ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে সিনেমা 'দ্য হেল্প৷' মূল গল্পে আমরা দেখতে পাই, একটি গ্রামের সাদা চামড়া পরিবারগুলোতে কাজ করে কৃষ্ণাঙ্গ মহিলারা। বলাবাহুল্য, তুচ্ছ নানা কারণেও এই কালো মানুষদের উপরে অমানুষিক নানা নির্যাতন চালাতে থাকে শ্বেতাঙ্গ প্রভুরা। কিন্তু এই নির্যাতনও একদিন থেমে যায়। তাও থেমে যায় 'The Help' নামের একটি বইয়ের কারণে৷ কীভাবে? তা নিয়েই তো সিনেমা। রেসিজম রিলেটেড মুভি ভালো লাগলে, এ মুভি দেখতে হবে৷ 'ফিল গুড মুভি' দেখতে চাইলে, তাও এটা দেখতে হবে।
পাওলো কোয়েলহো'র 'হিপ্পি' বই থেকেই শেষ করি-
যদি একটি সামান্য শুকনো পাতাও পাও সামনে, সেখান থেকে নিঙ্গড়ে নাও ভালো কিছু। কে জানে! সামনে হয়তো শুকনো পাতা পাওয়ার সৌভাগ্যও আর থাকবেনা!
এ সিনেমাগুলো যেন সেরকমই। জীবনবোধ'কে ঘনিষ্ঠভাবে উপলব্ধি করায়। হৃদয়ের অতলান্তপুর থেকে তুলে নিয়ে আসে অপার্থিব সব অনুভূতি। এই সিনেমাগুলোর চমৎকারিত্বই আর অভিনবত্ব এখানেই৷