'লা কাসা ডে পাপেল' এর পঞ্চম এবং শেষ সিজনের টিজার মুক্তি পেয়েছে গতকাল। 'গেম অব থ্রোন্স' এর শেষ সিজনের ট্রেলার দেখে যেরকম বিষন্ন, উত্তেজিত, উচ্চাকাঙ্খী হয়েছিলাম, গতকালের টিজারও সেরকমই অনুভূতি দিলো...

চারপাশে বুলেটের খোসা, ধ্বংসস্তুপ, অবহেলায় পড়ে আছে দালি মাস্ক, আচমকা ভারী বুট এসে মাটির সাথে পিষে ফেললো সেই মাস্ক, ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠলো লিঙ্কিন পার্কের বিখ্যাত 'ইন দ্য এন্ড' এর মেলানকোলিক স্কোর... যেন এক থমথমে সময় জানান দিলো, ফুরিয়ে আসছে সব। ঘনিয়ে আসছে আঁধার। এইবেলা নড়েচড়ে বসার পালা। 

গত সিজনের শেষ পর্বের শেষ অংশটুকু যদি কারো না মনে পড়ে থাকে, মনে করিয়ে দিই। র‍্যাকেল কে নাটকীয়ভাবে মুক্ত করে 'ব্যাংক অব স্পেন' এ থাকা বাকি সদস্যদের মাঝে ফিরিয়ে আনেন প্রফেসর৷ সবাই যখন র‍্যাকেল কে ফিরে পাওয়ার খুশিতে উল্লসিত, তখনই প্রফেসরকে খুঁজে পেয়ে তাঁর পেছনে পিস্তল তাক করেছে সিয়েরা। এরপরেই গুলির শব্দ এবং সিয়েরার মুখে শোনা সেই বিখ্যাত গান-Bella Ciao

প্রফেসর ও তার সহযোদ্ধারা! 

'লা কাসা দে পাপেল' এর পঞ্চম এবং শেষ সিজনের টিজার মুক্তি পেয়েছে গতকাল। 'গেম অব থ্রোন্স' এর শেষ সিজনের ট্রেলার দেখে যেরকম বিষন্ন, উত্তেজিত, উচ্চাকাঙ্খী হয়েছিলাম, গতকালের টিজারও সেরকমই অনুভূতি দিলো। যদিও 'গেম অব থ্রোন্স' শেষপর্যন্ত কেঁচেগণ্ডূষ করেছিলো। মানি হেইস্ট করবে কী না, জানা নেই।

২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই মহাযজ্ঞের অন্তিম সময় আসন্ন। সিজন ফিনালের প্রথম খণ্ড মুক্তি পাবে সেপ্টেম্বরের তিন তারিখে। দ্বিতীয় খণ্ড মুক্তি পাবে ডিসেম্বরের তিন তারিখে। প্রত্যেক খণ্ডেই থাকবে পাঁচটি করে পর্ব। কেন দুই খণ্ডে ভাগ করা হয়েছে সিজন ফিনালে কে, সে বিষয়ে নির্মাতা অ্যালেক্স পিনা জানান, এবারের গল্পকে দুই অ্যাঙ্গেল থেকে দেখানো হবে৷ প্রথম অ্যাঙ্গেলে থাকবে থ্রিলার এবং অ্যাকশন। যেহেতু পুরো গ্যাং একশো ঘন্টারও বেশি সময় ধরে আটকে আছে ব্যাংক অব স্পেনে, সে সাথে প্রফেসরেরও কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না, প্রফেসরের কোনো 'স্কেপ প্ল্যান'ও পাওয়া যাচ্ছে না আর, ওদিকে ধেয়ে আসছে বিশাল বহরের আর্মি,যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে টোকিও, রিও, ডেনভারসহ বাকিরা কিভাবে কি সামলাবে... প্রথম খণ্ডে এই প্রেক্ষাপটগুলোকেই রাখা হবে সামনে৷ 

দ্বিতীয় খণ্ড, যা মুক্তি পাবে ডিসেম্বরের তিন তারিখে, সেখানে চরিত্রগুলোর মানবিক টানাপোড়েনের নানা গল্প দেখানো হবে৷ তাদের যাপিত সংকট, এতদিন ধরে কাছের মানুষদের হারিয়ে এই অন্তবিহীন পথ চলা, অবশেষে সমাপ্তির লাল রুমাল... এই ঘটনাগুলো তাদেরকে কিভাবে প্রভাবিত করে, সেটা দেখানো হবে দ্বিতীয় অংশে। 

২০১৭ সাল থেকে দেখছি 'মানি হেইস্ট।' একেবারে প্রথম সিজনের প্রথম পর্ব থেকে শুরু হওয়া ক্ষিপ্রমেধার প্রফেসর ও তার সঙ্গীদের অসাধ্যসাধনের গল্প দেখে মুগ্ধ হয়েছি ক্ষণেক্ষণেই। সাথে ধুন্ধুমার অ্যাকশন, সাসপেন্স, পলিটিক্স এর মিশেল তো আছেই। যদিও মাঝের সিজনগুলোতে প্রেমের চক্করে পড়ে নিজের স্বাভাবিক বুদ্ধি মাঝেমধ্যেই খুইয়ে আমাদের বিরক্তি উৎপাদন করেছেন 'এল প্রফেসর।'  চরিত্রগুলোর অন্তর্দাহ কখনো কখনো ওভার-ড্রামাটিক হয়ে গিয়েছে। স্ক্রিপ্ট টানটান থাকেনি সবগুলো সিজনে, তবুও এতদিন ধরে যেভাবে দর্শকদের 'অ্যাড্রেনালিন রাশ' নিয়ে ছেলেখেলা করেছেন পরিচালক, তা এক কথায় অনবদ্য। 'লা কাসা দে পাপেল' সেখানেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী, সার্থক। 

সিজন ফিনালে'র টিজার মুগ্ধ করেছে। বিজেএম দুর্দান্ত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে প্রত্যাশাও বেড়ে গিয়েছে অনেকটা। আশা রাখি, প্রফেসর আবার তার ক্ষুরধার মস্তিষ্কের চৌকষ অবতারে ফিরে আসবেন। প্রথম সিজনের সেই দুর্দমনীয় প্রফেসর এর এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন৷ সে সাথে চরিত্রগুলোর ইন্টারনাল কনফ্লিক্ট কমুক, সময়ে-অসময়ে অতি আবেগি আচরণ কমুক। পূর্ন মনোযোগ থাকুক আর্মি বহরকে মোকাবেলার পেছনে, প্রত্যাশা সেটাও। আর ব্যক্তিগত ইচ্ছে, বার্লিন ফিরে আসুক আবার৷ ভীষ্মের শরশয্যার মতন বুলেটশয্যায় শুয়ে যার বিদায়, তিনি কিভাবে ফিরে আসবেন তা জানিনা। তবে দর্শকদের প্রবল চাহিদার মুখে, মেরে ফেলার পরেও স্যার আর্থার কোনান ডয়েল যদি শার্লক হোমসকে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তাহলে, বার্লিন কেন ফিরতে পারবে না? যেহেতু যুদ্ধ শুরু হয়েছে, সে যুদ্ধে প্রফেসরের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার ফিরে আসুক আবার।  বার্লিন ফিরুক, প্রফেসর স্বরূপে আসুক, টোকিও, রিও, ডেনভার, র‍্যাকেল ঝাপিয়ে পড়ুক প্রতিপক্ষের অস্ত্রের সামনে। মরতে নয়৷ মারতে। 

বিধ্বস্ত দালি মাস্ক! 

আর সিজনের একেবারে শেষদৃশ্যে গিয়ে হাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে মৃদু আলোতে সমবেত হোক সবাই। গ্লাসে গ্লাসে ঠোকাঠুকি দিয়ে সবাই গেয়ে উঠুক একটাই গান

Bella Ciao

সেটারই অপেক্ষায় সবাই। এরকম মধুরেণ সমাপয়েৎ না হলে সেটা খুবই অন্যায় হবে। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা