যেকোনো জিনিসের শুরুর চেয়ে সমাপ্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সিরিজের নির্মাতারা সেটি মেনেই সমাপ্তি টানবেন এই পঞ্চম সিজনেই। পদতলে দালি মাস্ক কিংবা থমথমে ব্যাংক অব স্পেন, গুলির খালি খোসা'র টিজারে সেটারই সংকেত। রিলিজ পাওয়া ট্রেলারেও সেরকমই ইঙ্গিত...
চারপাশে বিনোদনের অজস্র মাধ্যম, অফুরন্ত সুযোগ। দর্শকের হাতে এত এত অপশন, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে যায়, দর্শক আটকে রাখার মতন শক্তিশালী কন্টেন্ট বানাতে। অজস্র সব স্ট্রিমিং সাইট আর মুভি, সিরিজ, ফিকশনের ভীড়ে অধিকাংশই এখন মসলা-মুড়ির মতন 'টাইমপাস' কন্টেন্ট। একবার দেখলেই ভুলে যাওয়া নিয়তি। তবুও এসবের ভীড়েও কিছু কিছু নির্মাণ পাই, যেগুলো থেকে যায় চিরদিন। বিস্মৃত হওয়ার সুযোগ দেয় না। ব্রেকিং ব্যাড, গেম অব থ্রোন্স, রিপ্লাই ১৯৮৮ অথবা লা কাসা দে পাপেল...এরা স্রোতের মধ্যে থেকেও স্রোতের বাইরে আলাদা স্বকীয়তা নিয়ে দাঁড়ায়। বুঝিয়ে দেয়, নির্মাণ দুর্দান্ত হলে দর্শক তা মনে রাখতে বাধ্য।
দর্শককে আজকাল কন্টেন্টের সাথে সেঁটে রাখা খুব মুশকিল। স্লোবার্ণ ট্রিটমেন্ট আজকাল খুব কম দর্শকই পছন্দ করে। সেটা মাথায় রেখেই প্রথম সিজনের প্রথম পর্বের প্রথম দৃশ্য থেকেই 'লা কাসা দে পাপেল' এর রোলারকোস্টার গতি। 'টোকিও' নামক এক চরিত্রের বর্ণনায় একদল ডাকাত, হয়তো সোজাসাপটা 'ডাকাত' বলা ঠিক হবে না, বলা যেরে পারে একদল অভিনব অপরাধীর গল্প ক্রমশ প্রাণ পায় পর্দায়। যাদের দলনেতা এমন একজন, যাকে সবাই ডাকে 'প্রফেসর', যিনি মেপে কথা বলেন, মার্জিত ব্যবহারের চরম পরাকাষ্ঠা দেখান। যার মস্তিষ্ক ছোটে কম্পিউটারেরও আগে। যার প্রতিটি পদক্ষেপের আগেই থাকে একটি করে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
প্রফেসর, বার্লিন, টোকিও, ডেনভার, রিও, হেলসিঙ্কি, মস্কো, নাইরোবি কে নিয়ে শুরু অদ্ভুত সুন্দর এক যাত্রা। তাদের রুদ্ধশ্বাস অ্যাকশনে যেমন মুগ্ধ হয়েছি, তাদের উত্তেজিত কালক্ষেপণে মাঝেমধ্যে তিতিবিরক্তও হয়েছি। প্রফেসর ক্রমশই মুগ্ধ করেছেন। মাঝে প্রেমের ফাঁদে ফেঁসে গিয়ে খানিকটা হতাশও করেছেন। জীবনই সোজাসাপ্টা না। একটি সিরিজ সোজাসাপটা শুধু মুগ্ধ করে যাবে, তাও বা ভাবি কিভাবে? মুগ্ধতা, বিরক্তি, হতাশা, উত্তেজনা...মিলিয়ে মিশিয়ে 'লা কাসা দে পাপেল' পার করেছে অনেকটা সময়।
যেকোনো জিনিসের শুরুর চেয়ে সমাপ্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সিরিজের নির্মাতারা সেটি মেনেই সমাপ্তি টানবেন এই পঞ্চম সিজনেই। পদতলে দালি মাস্ক কিংবা থমথমে ব্যাংক অব স্পেন, গুলির খালি খোসা'র টিজারে সেটারই সংকেত। রিলিজ পাওয়া ট্রেলারেও সেরকমই ইঙ্গিত। চতুর্থ সিজনের একেবারে শেষে প্রফেসর ধরা পড়ে গিয়েছিলেন পুলিশ অফিসার অ্যালিসিয়া সিয়েরার হাতে। সেই ক্লিফহ্যাঙ্গারে শেষ হওয়া সিজনের এবারের আসরে সময়টা যে প্রফেসরের জন্যে মোটেও সুখকর না, ট্রেলারেই পরিষ্কার। হয়তো প্রফেসরের সময়ও শেষ। যার খানিকটা আভাস পাওয়া যায় তার ফোনকলে, যেখানে তিনি তার দলের বাকিদের জানাচ্ছেন, হয়তো এটাই তার শেষ কথা বাকিদের সাথে।
নেতা বিহীন গুটিকয়েক মানুষ কতটুকুই বা কী করতে পারে, যেখানে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে গোটা একটি দেশ? অন্য গড়পড়তা মানুষের কথা জানি না, তবে এরা প্রত্যেকেই আলাদা ধাতুর প্রাণী। হার মানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও যে নেই তাদের, সেটারই প্রমাণ পাই যখন লিসবনের নেতৃত্বে নামে আটকে পড়া দলের বাকিরা। অল্প সময়েই রানটাইম শেষ হয়ে যাওয়া বার্লিন ফিরে ফিরে আসেন স্মৃতিতে। জানান- যদি প্রকৃত মুক্তির জন্যে কিছু ত্যাগ করতে হয়, তারা তাতেও প্রস্তুত।
দুই পক্ষ প্রস্তুত। বিনা যুদ্ধে নাহি দেবে সূচ্যগ্র মেদিনী। বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা!
কতদূর যাবে চার দেয়ালে আটকে পড়া এই ক'জন, যাদের শোক-দুঃখ, আবেগ, উত্তেজনায় আমরা আটকে ছিলাম গত চারটি বছর? লিঙ্কিন পার্কের 'ইন দ্য এন্ড' এর ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ব্যবহার করা হলো টিজারে। সেই গানের লাইন অনুযায়ী প্রশ্ন থেকেই যায়, অনেক চেষ্টা করলেও, অনেক দূর গেলেও, শেষে গিয়ে এগুলো কী আসলেই কোনো গুরুত্ব বহন করবে? শেষটা আসলে কেমন হবে? কতটা অর্থবহ হবে? এত বছরের মুগ্ধতা কী শেষতক বজায় থাকবে?
সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী সেপ্টেম্বরে। মাস খানেকের অপেক্ষা। তবে যেটাই হোক না কেন, বিচিত্র এই চরিত্রগুলোকে দর্শকেরা যে নিয়মিত মনে করবে, তা ধ্রুব সত্যি। এরা পর্দা থেকে চলে গেলেও থেকে যাবে সেখানে, যেখান থেকে কখনোই হারায় না কেউ।