কোটা ফ্যাক্টরি সিজন টু: অসমাপ্ত গল্পের অপূর্ণাঙ্গ রূপান্তর!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
সিরিজে প্রাসঙ্গিকভাবে পিরিয়ড কিংবা মাস্টারবেশনের মতন ট্যাবু বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলার সাহসী পদক্ষেপ বেশ ভালো লেগেছে। মেন্টাল হেলথ এবং ফিজিক্যাল হেলথ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, তারও উদাহরণ আনা হয়েছে যুগপৎভাবে। কোচিং ব্যবসার সবকিছুই যে আসলে র্যাংক এবং অর্থের নাচন... সেই ন্যারেটিভ আরেকটু প্রকট হয়েছে...
যারা 'কোটা ফ্যাক্টরি'র প্রথম সিজন দেখেছেন এবং দ্বিতীয় সিজনের জন্যে অনেকদিন ধরেই অপেক্ষা করছেন, তারা প্রায়শই এক প্রশ্ন করেন- কোটা ফ্যাক্টরি'র দ্বিতীয় কিস্তি কী গতবারের মতনই ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট হবে? নাকি, রঙিন হবে গল্প? এ প্রশ্ন মনে আসার পেছনে সঙ্গত কারণও আছে৷ আমরা যারা 'কোটা ফ্যাক্টরি'র প্রথম সিজন দেখেছি, তারা জানি, এই সিরিজের অন্যতম স্বকীয়তা ছিলো- ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট কালারটোন। তবে এই সাদা-কালোর স্বকীয় পরিপ্রেক্ষিত থেকে যখন প্রথম সিজনের একেবারে শেষে এসে দর্শক উপলব্ধি করে, সিরিজের কালারটোন রঙিন হয়ে যাচ্ছে, তখন সবার খানিকটা চমক লাগে। এবং চমক লাগাটাই তখন স্বাভাবিক!
এরপর বহুদিনের অপেক্ষা। মাঝখানে খবর চাউর হয়, নেটফ্লিক্সের সাথে কোলাবোরেশান করছে কোটা ফ্যাক্টরি। এবং অবশেষে নেটফ্লিক্সের ব্যানারে আসা 'কোটা ফ্যাক্টরি'র দ্বিতীয় কিস্তির শুরুতেও দর্শক লক্ষ্য করবে, সিরিজের কালারটোন রঙিনই আছে। কিন্তু তা সাময়িক সময়ের জন্যে। সিরিজের গল্প এগোতে এগোতে আচমকাই 'কোটা ফ্যাক্টরি' চলে যায় তার পুরোনো রঙে। সাদা-কালো'তে। এই যে রঙিন থেকে সাদা-কালো হয়ে যাওয়া, এর পেছনে কিছু ঘটনা আছে, কিছু মেটাফোর আছে। সেসব অন্তর্নিহিত গল্প নিয়ে হয়তো আরেকদিন বলা যাবে। আজকে 'কোটা ফ্যাক্টরি'র দ্বিতীয় কিস্তিতেই পূর্ণ মনোযোগ ধরে রাখা যাক।
প্রথমত, 'কোটা ফ্যাক্টরি'র প্রথম সিজনে যে মুগ্ধতা ছিলো, সে মুগ্ধতা এবারের সিজনে অনেকটাই কম। এবং এই অ-মুগ্ধতার অন্যতম কারণ- গল্প এবং গল্পের বিন্যাস। এবারের গল্পে প্রোটাগনিস্ট আসলে কে, তা খুঁজে পেতে বিস্তর বেগ পেতে হবে। গত সিজনে যেমন 'কোটা'য় আসা ছেলেমেয়েদের সংগ্রামই ছিলো সিরিজের মূখ্য কুশীলব, এ সিজনে মোটা দাগে সেরকম কাউকে প্রধান ভূমিকায় পাওয়া যাবে না। যদি প্রথম সিজনের শেষভাগে আরেকবার তাকাই, দেখবো- বৈভব 'প্রডিজি কোচিং সেন্টার' ছেড়ে 'মহেশ্বরী'তে ভর্তি হয়েছে। পাশাপাশি, ভার্তিকার সাথে সাময়িক বিচ্ছেদ হয়েছে। উদয় এবং মিনার সাথে দূরত্ব বেড়েছে। এটুকু রিক্যাপ করে এবার যদি নতুন সিজনে তাকাই, দেখবো- বৈভব যদিও 'মহেশ্বরী'তে কোচিং করছে, তাও উদয় এবং মিনার সাথে তার আবার পুনর্মিলন হয়েছে। পাশাপাশি, ভার্তিকার সাথে প্রেম হয়েছে। জিতু ভাইয়া প্রডিজি ছেড়েছেন। 'এইমারস' নামে কোচিং সেন্টার খুলেছেন। সেই কোচিং সেন্টারের জন্যে বিস্তর যোগাড়যন্ত্র চলছে।
এটুকু পড়লেই বুঝতে পারার কথা, গতবারের আখ্যান থেকে এবারের কিসসা অনেকটাই আলাদা। অনেক অনেক সাবপ্লট ঢুকে পড়েছে গল্পে। সে কারণেই হয়তো গল্পে কখনো মাত্রাতিরিক্ত মোটিভেশনাল ডায়ালগ ঢুকে পড়ছে (ক্রেডিট গোজ টু জিতু ভাইয়া)। কখনও বলিউডের সিনেমার মতন গল্পে প্রেম আসছে। একাধিক রোমান্টিক গান আসছে। ক্ষমতাশালী রাঘববোয়াল আসছে। মাঝেমধ্যে দুয়েকটা কমিক রিলিফও আসছে। অজস্র সব সাবপ্লটেরা কেউ কাউকে জায়গা দিচ্ছে না। এবং ঠিক এসব কারণেই গল্পও ঠিক পুরোপুরি পূর্ণতা না পেয়ে আধাখেঁচড়া এক অবয়বে রূপান্তরিত হয়েছে।
অবশ্য এত অজস্র সাবপ্লট আনার পেছনে নেটফ্লিক্সের বিজনেস স্ট্রাটেজিও আছে। এরকম জনপ্রিয় একটা সিরিজ কে তারা নিজেদের ছত্রছায়ায় নিয়েছে, আর সে সিরিজ তারা মাত্র দুই সিজনে শেষ করে দেবে, এটা যে হবে না, তা অনেকটা ভবিতব্যই ছিলো। এবং যেভাবে অজস্র সব এলিমেন্টস আনা হয়েছে, নেটফ্লিক্স খুব অনায়াসেই 'কোটা ফ্যাক্টরি'কে আরো দুই-তিন সিজন চালাবে বলেই প্রতীয়মান হয়। তাদের চিন্তাভাবনাও হয়তো সেরকমই৷ এবং ঠিক এ কারণেই, এবারের সিজনের গল্প প্রথম সিজনের মতন দাগ কাটতে পুরোপুরি অসফল। কারণ, দাগ কাটার মতন গভীর আঁচড় এবারের গল্পে নেই। আছে কিছু মৃদু আঁকিবুঁকি।
তবে এর মধ্যেও ইতিবাচক বিষয় ছিলো বেশকিছু। প্রথমত- কোটা ফ্যাক্টরি'র যেসব চরিত্র নিয়ে দর্শকেরা এতদিন ধরে প্রবল মাতামাতি করেছে; জিতু ভাইয়া, বৈভব কিংবা মীনা...তারা এ সিজনেও ছিলেন। শুধু ছিলেন না, বেশ প্রকটভাবেই ছিলেন। এসব চরিত্রে যারা অভিনয় করেছেন, তাদের অভিনয় নিয়েও কিছু বলার নেই। অভিনয়ও ভালোই করেছেন তারা। তবে এখানেও এক ঋণাত্মক দিক আছে। এবারের সিজনে নতুন চরিত্রগুলোকে সেভাবে স্পেস দেয়া হয়নি কিংবা বলা ভালো, নতুন কোনো চরিত্র'কে তুরুপের তাস বানানোর ঝুঁকি নেননি নির্মাতারা। সে কারণেই গতবারের প্রিয়মুখেরা এবারেও সরব। তাদের পাশাপাশি আলাদা করে নতুন করে কোনো প্রিয় চরিত্র তৈরী হয়নি, হওয়ার সম্ভাবনাও রাখা হয় নি৷
সিরিজে প্রাসঙ্গিকভাবে পিরিয়ড কিংবা মাস্টারবেশনের মতন ট্যাবু বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলার সাহসী পদক্ষেপ বেশ ভালো লেগেছে। মেন্টাল হেলথ এবং ফিজিক্যাল হেলথ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, তারও উদাহরণ আনা হয়েছে যুগপৎভাবে। কোচিং ব্যবসার সবকিছুই যে আসলে র্যাংক এবং অর্থের নাচন...সে ন্যারেটিভ আরেকটু প্রকট হয়েছে। মানুষের স্বস্তি কিংবা তৃপ্তির বোধ আসলে কোথায়, এরকম ধূসর মনস্তাত্বিক বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে বন্ধুত্বের দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটি কিংবা মেটাফোরিক্যালি অনেক ইস্যুর খুব সাটল ট্রিটমেন্ট করা হয়েছে। এবং এগুলোর কোনোটিই অবান্তর বা অযাচিত লাগে নি। এসব উপাদান গল্পের সাথে কোনো না কোনোভাবে, ঠিকই মিশে গিয়েছে
সব মিলিয়ে, দোষগুণ বিচার-বিশ্লেষণ করে শেষপর্যন্ত এটাই বলার, 'কোটা ফ্যাক্টরি'র সিজন টু, এই সিরিজ-কেন্দ্রিক বহুল চর্চিত অধিকাংশ প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব দেবে না, বরং নতুন করে আরো কিছু প্রশ্ন সৃষ্টি করে যাবে। এবং এসব প্রশ্নের সদুত্তর আসার আগ পর্যন্ত এই সিজনকে খারাপ বা ভালো, কোনোটিই বলা যাবে না। তবে এটুকু অবশ্যই বলা যাবে, টাইমপাস কন্টেন্ট' হিসেবে 'কোটা ফ্যাক্টরি'র দ্বিতীয় কিস্তি বেশ ভালো অপশন৷ সময় ভালো কাটবে। কিন্তু সতর্কবার্তা এটাই, কেউ যদি প্রথম সিজনের মতন গভীর কোনো উপলব্ধি পেতে চান এবারের আয়োজন থেকে, তাহলে হতাশ হবেন। তাই নির্ভার হয়ে, কোনো প্রত্যাশা কিংবা দাবিদাওয়া না রেখে দেখতে বসলেই মঙ্গল। তাহলেই দেখার তৃপ্তি পাওয়া যাবে ষোলোআনা!