'স্পেশাল অপস' কিংবা 'স্পেশাল অপস ১.৫' এর হিম্মত সিং, 'রে' অ্যান্থোলজির খ্যাপাটে আর্টিস্ট কিংবা 'দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ডিসফাংশনাল ফ্যামিলি'র ফ্যামিলি ম্যান... ওটিটিতে একের পর এক নির্মাণে দুর্দান্ত অভিনয় করে কে কে মেনন এখন বি-টাউনের অন্যতম আলোচিত নাম কে কে মেনন। 'স্পেশাল অপস' এ কাজের সুবাদে তার ট্যাগনেমই হয়ে গিয়েছে 'দেশি বন্ড...'

ওটিটির এই পরিবর্তিত সময়ের বদৌলতে প্রতিদিনই যেভাবে ভাঙ্গছে আদ্যিকালের একেকটি ন্যারেটিভ, তা বিস্তর চমকের। পাশাপাশি ইতিবাচকও। ওটিটির এই রাজত্বে এসেই আকাশকুসুম আষাঢ়ে গল্পকে হটিয়ে ভালো গল্পের নির্মাণ প্রাধান্য পেয়েছে। স্টারডমের সর্বগ্রাসী প্রভাব খানিকটা হলেও কমেছে। নির্মাণ নিয়ে বিস্তর এক্সপেরিমেন্ট চলছে। দর্শকেরাও শ্যেনচক্ষুতে নজর রাখছে সবকিছুতে। নির্মাণে সামান্য অসঙ্গতি থাকলেও তীব্র প্রতিবাদে জানানো হচ্ছে তা। নির্মাতারাও দর্শকদের মন্তব্য অনুযায়ী নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো নিয়ে কাজ করছে। যাপিত ত্রুটি শুধরে নির্ভুল নির্মাণের জন্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে তারাও। 

যেহেতু প্ল্যাটফর্ম বেড়েছে, বেড়েছে নির্মাণের সংখ্যাও। এমন সব অভিনেতারা নতুন করে সমাদৃত হচ্ছেন, যাদের কথা ভুলেই গিয়েছিলো অনেকে। ওটিটির কল্যানে গুণী অভিনেতারা পাদপ্রদীপের আলো পেয়েছেন। পাচ্ছেন। নিজেদের ভেঙ্গেচুরে একেকটা অবতারে হাজির হচ্ছেন। ভালো নির্মাণের সুস্থ এক প্রতিযোগিতা তৈরী হয়েছে। নির্মাণের মানে কেউ কাউকে একবিন্দুও ছাড় দিচ্ছে না। এসবকিছুর মিলিত ফলাফলে তাই এ কথা বলা মোটেও অত্যুক্তি না, মহামারীর এই ডামাডোলে পৃথিবীতে ইতিবাচক যে কয়টি বিষয় হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ওটিটির এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ, সামগ্রিক গ্রহনযোগ্যতা শীর্ষের দিকেই থাকব। শিল্পসংস্কৃতির সামান্যতম উন্নয়নের জন্যে হলেও এই মাধ্যমের জাগরণের দরকার ছিলো। সবার ইচ্ছেয় হোক কিংবা অনিচ্ছায়, পরিবর্তনের সে কাজটিই যেন করে দিয়েছে মহামারী এবং প্রযুক্তি।

ওটিটির সুবাদে নতুন করে আলোচিত হচ্ছে এমন তারকাদের মধ্যে কে কে মেনন এর কথা আলাদা করেই বলতে হবে। প্রচণ্ড গুণী এ অভিনেতাকে নিয়ে খুব কম আলোচনাই দেখি আশেপাশে। অথচ শৌর্য, দ্য গাজি অ্যাটাক, গুলাল, রহস্য, হায়দার, লাইফ ইন আ মেট্রো কিংবা ব্ল্যাক ফ্রাইডে যারাই দেখেছেন, তারা জানেন- কে কে মেনন অভিনয়ে কতটা সিদ্ধহস্ত! শিল্পী হিসেবে তিনি কতটা দুর্দান্ত! তবুও, যে কারণই থাকুক না কেন পেছনে, তিনি কখনোই ততটা জনপ্রিয় হননি, যতটা প্রাপ্য ছিলো তার।

অথচ সেই মানুষটিই ওটিটির কল্যানে এখন দারুণ জনপ্রিয়। 'স্পেশাল অপস' কিংবা 'স্পেশাল অপস ১.৫' এর হিম্মত সিং, 'রে' অ্যান্থোলজির খ্যাপাটে আর্টিস্ট কিংবা 'দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ডিসফাংশনাল ফ্যামিলি'র ফ্যামিলি ম্যান... ওটিটিতে একের পর এক নির্মাণে দুর্দান্ত অভিনয় করে তিনি এখন বি-টাউনের অন্যতম আলোচিত নাম। 'স্পেশাল অপস' এ কাজের সুবাদে তার ট্যাগনেমই হয়ে গিয়েছে 'দেশি বন্ড।' 'হিম্মত সিং' চরিত্রটির সুবাদে বয়সের গণ্ডি ভেঙ্গে তিনি খুব ঘনিষ্ঠভাবে পৌঁছে গিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের কাছে। বয়স, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছেই হয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়।

'রে' অ্যান্থোলজিতে অনবদ্য অভিনয় করেছেন কে কে মেনন! 

এবং এই জনপ্রিয়তার পুরো কৃতিত্বই কে কে মেনন দিয়েছেন স্ট্রিমিং সাইটগুলোকে। কারণটাও সরল। দুর্দান্ত অভিনয় তিনি আগেও করেছেন, কিন্তু জনপ্রিয়তা পান নি। এখন পাচ্ছেন। মানে দাঁড়াচ্ছে, তার কাজগুলো এখন দর্শকের কাছে যাচ্ছে। দর্শকেরাও সজাগ দৃষ্টিতে কাজগুলোর পর্যালোচনা করছেন। গুণগতমানে উতরে গেলেই সে কাজ সমাদৃত হচ্ছে। আলোর ঝলকানি কিংবা অ্যাকশনের গিমিকে দর্শক যে আর বিভ্রান্ত হচ্ছে না, অভিনয়ই আজকাল মূখ্যতম প্রভাবক হয়ে দাঁড়াচ্ছে জনপ্রিয়তার, সেটিই খুব প্রকটভাবে প্রমাণিত হচ্ছে কৃষ্ণ কুমার মেননের ক্ষেত্রে। নিয়মিতই কাজ পাচ্ছেন তিনি। বেছে বেছে করছেন কাজ। সংখ্যার সাথে মানের আপোষ  না করার জন্যেই ধীরস্থির হয়ে যুক্ত হচ্ছেন একেকটি নির্মাণের সাথে। দেখাচ্ছেন চমক! 

'স্পেশাল অপস' এর কল্যানে কে কে মেনন পৌঁছে গিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের কাছে! 

শুধু কে কে মেননই না, মনোজ বাজপেয়ী, জয়দীপ আহলাওয়াত কিংবা প্রতীক গান্ধীরাও এই ওটিটির সুবাদেই হয়েছেন সমাদৃত। ওটিটি যেন এ বিষয়টিই বুঝতে শিখিয়েছে, যে কোনো কন্টেন্টেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পারফরম্যান্স। আর যে পারফর্মার ভালো পারফর্ম করবে, আলোচনা শুধু তাকে নিয়েই হবে। দৈহিক আকৃতি কিংবা তারকাদ্যুতির বরাতে না, অভিনেতার সুনাম হবে অভিনয় দিয়েই। নির্জলা এই সত্যিটুকু নতুন করে উপলব্ধি করানোর জন্যেই যেন আবির্ভাব ওটিটি-মঞ্চের। এবং বিশেষ এ ওটিটি-মঞ্চের কারণেই অবহেলিত রত্নগুলো আজকাল ছড়াচ্ছে দ্যুতি,  যে দ্যুতিতে ক্রমশ ম্লান হচ্ছে আদ্যিকালের যাপিত সংস্কার। জরাজীর্ণ, একঘেয়ে সংস্কারের গণ্ডি থেকে বেরোনোর জন্যে একটা ধাক্কা দরকার ছিলো, স্ট্রিমিং সাইট সেই ধাক্কাটুকু দিয়েছে। বাকিটা হয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। রাতারাতি পাল্টেছে সব। পাল্টানোর যে প্রক্রিয়া চলছে এখনও। কতদূর পাল্টিয়ে ক্ষান্ত দেবে এ প্রক্রিয়া, এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা! 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা