হাফ চান্স' মন ভালো করার মিষ্টি এক গল্প। যে গল্পে বন্ধুত্ব আছে, ছিমছাম সরলতা আছে, প্রেমের জন্যে নাটুকে আচরণ আছে, ভালোবাসার জন্যে কাঙ্গালিপনাও আছে। এবং, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবকিছুই আছে পরিমিত পরিমাণে, দারুণ সহাবস্থানে...
কোনো এক পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাজারের সব ফুল উধাও। এদিকে, সেদিন আবার আপনার বিবাহবার্ষিকী। স্ত্রী পইপই করে বলে দিয়েছে, ফুল নিয়েই ফিরতে হবে ঘরে। দিশেহারা আপনি, বুঝে উঠতে পারছেন না, কি করবেন! এর উপর, আপনি এতটাই দুর্ভাগা, কোনো এক দোকানে শেষ একটা ফুলের তোড়া ছিলো, আপনি সেখানে যেতে যেতে সে ফুলও নিয়ে গিয়েছে কেউ একজন। হতাশ হয়ে আপনি বসে পড়েছেন রাস্তায়। কী করবেন বুঝছেন না। আপনার অবস্থা তখন যদি একটা শব্দে প্রকাশ করা হতো, সে শব্দের নাম- কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ঠিক এরকম এক সময়, যখন আপনি স্থানু হয়ে স্থির, তখন দোকানের শেষ ফুলের তোড়ার মালিক ভদ্রলোকটি এসে দাঁড়িয়েছে আপনার পাশে। মুচকি হেসে সে আপনাকে জানাচ্ছে-
এই ফুলের তোড়াই আপনাকে আমি দেবো। তবে একটা শর্ত আছে। সেটি হচ্ছে- আপনার আমাকে কনভিন্স করতে হবে যে, এই ফুল আমার চেয়েও বেশি আপনার দরকার।
তখন কি করবেন আপনি?
আপনি কি করবেন তা জানার উপায় নেই। তবে 'হাফ চান্স' নাটকের প্রোটাগনিস্ট রকিব কি করবে, সেটা আমরা জানতে পারি নাটকের শুরুতেই। স্ত্রী'র জন্যে ফুল লাগবে, আর সেজন্যে তাকে কনভিন্স করতে হবে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক মানুষকে... বিষয়টা শুনতে কেমন যেন লাগলেও রকিব খুব একটা গা করেনা। সে শুরু করে গল্প বলা। যে গল্পে মিশে থাকে তার 'হাফ চান্স' হওয়ার আখ্যান, ভার্সিটির প্রথম প্রেম, প্রথম প্রত্যাখ্যান... জীবনের নাতিদীর্ঘ আত্মজীবনী। বহুকিছু। এবং এভাবেই রকিবের গল্প এগোয়। এগোয় গল্পের নানাবিধ বিষয়আশয়ও। 'গল্প'কে যদি ধরি ক্যানভাস, সে ক্যানভাসে ক্রমশই পড়তে থাকে নানারকম রঙ। আস্তে আস্তে রঙিন হয় 'হাফ চান্স' এর প্রেক্ষাপট।
'হাফ চান্স' মন ভালো করার মিষ্টি এক গল্প। যে গল্পে বন্ধুত্ব আছে, ছিমছাম সরলতা আছে, প্রেমের জন্যে নাটুকে আচরণ আছে, ভালোবাসার জন্যে কাঙ্গালিপনাও আছে। এবং, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবকিছুই আছে পরিমিত পরিমাণে। দারুণ সহাবস্থানে। যেটা বেশ ভালো লেগেছে। আরেকটি বিষয়, যা চোখে লেগেছে, তা অ্যাডাপ্টেশন। রাসয়াত রহমান জিকোর 'হাফ চান্স' গল্প আগে থেকেই পড়া ছিলো। নাটক দেখে উপলব্ধি হলো মূল গল্পকে মোটামুটি অক্ষতই রেখেছেন নির্মাতা শিহাব শাহীন। ফলে, অকৃত্রিম গল্পটাই আনকোরা অবস্থায় উঠে এসেছে পর্দায়। গল্পের সেই 'অকৃত্রিম' স্বাদও যেন পাচ্ছিলাম, সময়ে সময়ে।
'হাফ চান্স' এর কলাকুশলীরাও বেশ ভালো।প্রোটাগনিস্ট চরিত্রে তৌসিফ মাহবুব দারুণ। তানজিন তিশা, তামিম মৃধা, মাসুম রিজওয়ানও নিজ নিজ জায়গা বুঝে যথাযথ। অভিনয় সবারই ভালো। অভিনয় নিয়ে তাই আক্ষেও নেই। তবে আক্ষেপ আছে অন্য জায়গায়। প্রথমত- মনে হয়েছে, নির্মাণটা একটু তাড়াহুড়ো করেই শেষ হয়েছে। গল্পে অনেককিছুই ভেবে নেয়ার সুযোগ থাকে, যা নির্মাণে থাকে না। ফলে, ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে খানিকটা আশা থেকেই যায়। যেটার সামান্য খামতি পেয়েছি এখানে। দ্বিতীয়ত- সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং খুব একটা খোলতাই হয়নি৷ শব্দজনিত বিভ্রাট কিছু অংশেই পেয়েছি। ফলে, নিরবিচ্ছিন্ন মনোযোগ দিতে পারিনি। মনোযোগে মাঝেমধ্যেই পড়েছে ছেদ।
তবে এটুকু বাদে, বাকিটুকু সুন্দর। বিশেষ করে- ঝুমবৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে স্বগতোক্তির অকপট প্রকাশ কিংবা স্ত্রী'র জন্যে ফুলের খোঁজে বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করা... এসব চোখের শান্তি দিয়েছে। মিঠেকড়া যে গল্পবয়ানে গল্প এগিয়েছে, সেটাও ছিলো গতিশীল, ছিমছাম। নাটকের কোনো অংশেই তাই বিরক্তি আসেনি। আর মূল গল্পটাই যেখানে অম্ল-মধুর মিশ্রণের, সেখানটাতে দাঁড়িয়ে গল্পাশ্রয়ী নির্মাণ আশাহত করবে, সেটা ভাবিও বা কিভাবে? সবমিলিয়ে তাই মন ভালো করার এক গল্প বলেছে 'হাফ চান্স।' এবং সে হিসেবেই বলা যায়, এ নাটক দেখলে দর্শকের খুশি হওয়ার ফুল চান্সই আছে। মূলত সেজন্যেই এ নাটক রেকোমেন্ডেড।