সত্যি বলতে এই জিনিসের পারফেক্ট কোন মানদন্ড নেই। জিনিসটা আপেক্ষিক। একজনের কাছে যে সিনেমা খারাপ, আরেকজনের কাছে সেই সিনেমা ভাল লাগতে পারে। তারচেয়ে আরেকটা প্রশ্ন করি, মানুষ সিনেমা কেন দেখে?
এটারও উত্তর একেকজনের কাছে একেকরকম। কেউ নিজের বোরিং লাইফ থেকে দুই ঘন্টার আনন্দ পেতে, কেউ নিজের পছন্দের স্টারকে দেখতে, কেউ অবাস্তব জিনিস দেখতে আর কেউবা গল্প দেখতে। আমি দেখি নতুন সব ক্যারেক্টর দেখতে। তাদের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্নাতে বিলীন হতে।
অজ্ঞাতনামা যখন হলে দেখতে গিয়েছিলাম, সেরকম মানুষ ছিল না। শাকিব খানের হিরো দ্য সুপারস্টার দেখতে গিয়ে দুইদিন টিকেট পাইনি। ফাগুন হাওয়া সকালের শোতে দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কারণ সিনেমাহলে আমি ছাড়া দর্শক মাত্র দুইজন। অন্যদিকে এভেঞ্জার্স এন্ডগেমের ভীড় ছিল আকাশছোঁয়া।
আমি আশা করি না যে ফাগুন হাওয়ার টিকেট পেতে মারামারি করতে হবে। তবে একই দেশে এত আকাশ পাতাল লেভেলের বৈষম্য দেখলে হতাশ লাগে। ৭০/৩০ বৈষম্য না হয় মানা যায়, ৯৫/৫ বৈষম্য তো ভয়ংকর!
এই যে বেশিরভাগ হলে যাওয়া মানুষ যে শাকিব খান বা টাইগার শ্রফ বা সালমান খানের শার্ট ছাড়া শরীর দেখতে বেশি আগ্রহী, সেটা শো বিজনেসের সবাই জানেন। করণ জোহর জানেন, একতা কাপুরও জানেন। জানেন বলেই সেই জিনিস পরিবেশন করেন।
পরিচিত হোটেলে আপনি কোন খাবার সকালে সাধারণত খান, সেটা যেমন হোটেল বয় জানেন; এরাও সেই হোটেল বয়ের মতো আপনার চাহিদা জানেন। এই কারণেই পংকজ ত্রিপাঠির ১৫ মিনিটের লাইভের চেয়ে, অনন্যা পান্ডের ৫ মিনিটের লাইভে বেশি মানুষ হয় আর সেটা নিয়ে অনর্থক আলোচনা বেশি হয়। অথচ পংকজের ১০ মিনিটের কথা আপনাকে যে লাইফ লেসন শেখাবে, সেটা হয়ত অনেকে সারাজীবন শেখাবে না।
আপনি মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ দেখান বলেই তৈমুর আলি খান নামের একটা বাচ্চার পায়খানা পাতলা হয়েছে নাকি ঘন, সেটা নিয়ে ইন্ডিয়ান মিডিয়াতে পারলে চর্চা হয়। তৈমুরের একটা ছবি তুলতে পারলে এখন ফটোসাংবাদিকরা ১৫০০ রুপি পান। অথচ সে জাস্ট একটা বাচ্চা! কোন কাজ না করেই ছোটবেলা থেকে তাকে যে মাত্রাতিরিক্ত এটেনশন দেয়া হচ্ছে, সেটা বড় হয়ে তাকে বিগড়ে ফেললে সেই দোষ কার? আবার এখন যাকে আপনি- ওলে কিউট তৈমুর বলে পারলে কোলে তুলে নেন, বড় হয়ে একটা সিনেমায় একটু খারাপ কাজ করলে- শালা নেপোটিজমের প্রোডাক্ট- বলে ছুঁড়ে ফেলতে আপনার দুই সেকেন্ড সময় লাগবে না।
যদি মনে করেন কঙনা বা কেআরকে অনেক অন্যায়ের বিপক্ষে বলে সব ঠিক করে ফেলছে, সেটাও সম্ভবত ভুল। তারাও যা করছেন, সেটা সম্পূর্ণ নিজের পাবলিসিটির জন্য, আলোচনায় থাকার জন্য। আসলেই ভাল কথা বলতে চাইলে কেআরকে সুশান্তকে এর আগে সমানে ছোট স্টার, ফ্লপ স্টার, টিভি স্টার বলতেন না। কঙনাও ডিরেক্টরকে ইনফর্ম না করে মনিমর্নিকার বেলায় এতকিছু করতেন না।
এখন কথা হচ্ছে আপনি কীইবা করতে পারেন? নিজের টাকায় কেউ বাঘী ৩ দেখলে আপনি কে যে তাকে জোর করে সোনচিড়িয়া দেখাবেন? না, কে কি দেখবে সেটা আপনি ঠিক করে দিতে পারবেন না। তবে আপনি যেটা পারবেন, আপনার ভালোলাগার ব্যাপারে বলতে।
আপনি আপনার জায়গা থেকে বোঝান যে স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার আর কাই পো চের মাঝে পার্থক্য কোথায়। কেন কাই পো চে এগিয়ে আর কেন সেটা একবার হলেও আমাদের দেখা উচিত। মুখে বলেন, দু কলম লেখেন। যা পারেন লিখেন। এভাবে কন্টিনিউয়াসলি বললে একটা সময় হয়ত ভাল সিনেমাগুলো অন্তত আরেকটু বেশি সময় ধরে হলে থাকবে আর পাবলিক সেটা দেখতে যাবে। তখন হয়ত বেঁচে থাকতে সুশান্তকে যেভাবে ইন্সটাগ্রামে প্রায় হাত জোড় করে নিজের সিনেমা দেখতে যাওয়ার অনুরোধ করতে হয়েছিল, সেটা হয়ত ভবিষ্যতে আর কোন সুশান্তকে সেভাবে করতে হবে না।
পাবলিক ডিমান্ড থাকলে কারো অধিকার নাই কাউকে আটকে রাখার। পাবলিক ডিমান্ড আর কাজের প্রতি সততা ছিল বলেই হয়ত রাজু হিরানি আর সবচেয়ে বেশি ব্যবসাসফল হিন্দি সিনেমার পরিচালক নিতেশ তিওয়ারির সাথে কাজ করতে পেরেছিলেন তিনি, যা কিন্তু বরুন, টাইগার, আলিয়া, অনন্যা- কারো ভাগ্যে জোটেনি।
শুধুমাত্র পাবলিক চাইত বলে হয়ত একসময় যার ডায়লগ ডেলিভারিকে তোতলামি বলা হত আর আরেকজন যাকে ফার্নিচার অভিনেতা বলা হত, তারা আজকে নিজ নিজ জায়গায় সফল। বলছিলাম শাহরুখ খান আর অক্ষয় কুমারের কথা।
ভাল সিনেমা দেখে আপনি যদি মানুষকে জানান, সেটা বলে হোক বা লিখে; তাতে হয়ত সুশান্ত আর ফিরে আসবে না, তবে ভবিষ্যতে আর কোন সুশান্ত সুইসাইড করার আগে একবার হলেও ভাববে।