তিরাশির বিশ্বকাপ জয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীর উপস্থিতি, কবির খানের পরিচালনা, বিগ বাজেট- তবুও কেন ডিজাস্টারের খাতায় নাম লেখালো '৮৩'?

গত বছরের শেষাংশে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর মধ্যে কবির খানের 'এইটি থ্রি' মুভি নিয়ে আলোচনা ছিলো শীর্ষের দিকেই। দ্য গ্রেট কপিল দেবের চরিত্রে রনবীর সিং, তিরাশির বিশ্বকাপের সুখস্মৃতি, বিশাল বাজেট, দুর্দান্ত কাস্ট, ট্রেলার-প্রমোশনের মুন্সিয়ানা...সবকিছুর মিলিত ফলাফলে যে প্রত্যাশা তৈরী হয়েছিলো, তা অমূলকও না। কিন্তু কেউ হয়তো এটা আশা করেননি মোটেও, এই সিনেমা বক্স-অফিসে এতটা ব্যর্থ হবে৷ যেখানে বড় বড় ক্রিটিকদের প্রায় সবার কাছ থেকেই গ্রহনযোগ্য মতামত পেয়েছে এ সিনেমা, সেখানে প্রায় দেড়শো কোটির এই বড়সড় ধাক্কার কারণটাও বা কী? এ বিপর্যয় কী কেবলই মহামারীর কারণে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায়, নাকি অন্যকিছু?

মহামারীর রক্তচক্ষু তো বরাবরই আছে, তবে 'এইটি থ্রি'র ব্যর্থতার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে যে কারণ, তা- 'পুষ্পা' ও 'স্পাইডারম্যানঃ নো ওয়ে হোম' এর সাফল্য। এই দুই সিনেমা যেভাবে সামগ্রিকভাবে ব্যবসা করেছে এবং করছে, সেখানে 'এইটি থ্রি' স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব পায়নি। 'স্পাইডারম্যান' নিয়ে ক্রেজ বৈশ্বিক লেভেলে, এটা নিয়ে কথা না বলি। কিন্তু 'পুষ্পা'র শুরু থেকেই যেরকম হাকডাক, মাসালা প্যান ইন্ডিয়ান সিনেমায় আল্লু অর্জুন এবং ফাহাদ ফাসিলের প্রথমবারের মতন ডুয়েল, সুকুমারের ম্যাগনাম ওপাস...এসবকে ছাপিয়ে যে 'এইটি থ্রি' নামের 'স্পোর্টস ড্রামা' যেতে পারবে না, তা অনেকটা অনুমিতই ছিলো। তাছাড়া, পিরিয়ড স্পোর্টস ড্রামা আজকাল মানুষকে কতটা টানে, সেও এক বড়সড় প্রশ্ন। সব তো একই বিষয়। প্রথমে স্ট্রাগল, শেষে সাফল্য। যদিও 'তিরাশি' ভারতবাসীর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গড়পড়তা এক বিশ্বকাপ জয়ের বছর না, বরং বিশ্বমঞ্চে নিজেদের চেনানোর বছর। সে আবেগ বিবেচনায়, খানিকটা বৈপরীত্য হবে ভেবেছিলাম। তা যে হলো না, সেটাই বিস্ময়ের।

পুষ্পা! 

'এইটি থ্রি'র বেশ বড়সড় এক কাঠামোবদ্ধ সমস্যা- ন্যারেশন স্টাইল। চেনাপরিচিত গল্পকেও নানাভাবে বলা যায়। কিন্তু এই সিনেমার শুরু থেকে যে বিন্যাস, তাতে ক্ষণেক্ষণে মনে হবে- এটা সিনেমা না, কোনো ডকুমেন্ট্রি ফিল্ম। সাধারণ দর্শকেরা সিনেমায় যেসব বানিজ্যিক উপাদান থাকলে খুশি হয়, তার অনেককিছুই এ সিনেমায় অনুপস্থিত। পাশাপাশি, তিরাশির বিশ্বকাপ দলের সবাইকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র কপিল দেবকে কেন্দ্র করে বলা গল্প-বয়ানেও বিস্তর অসন্তোষ অনেকের। অন্য কোনো চরিত্রের ক্যারেক্টার বিল্ডাপ না করে শুধুমাত্র এক চরিত্রকে উপজীব্য করে এগোনো, তাও স্পোর্টস ড্রামায়, খানিকটা সমস্যারই বৈকি। নির্মাণশৈলীর এ সীমাবদ্ধতাও যে এ সিনেমাকে খানিকটা ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছে, তা নির্দ্বিধায় বলাই যায়।

সমস্যা ছিলো গল্পবয়ানে! 

টিকেটের অতিরিক্ত দাম, প্রমোশনাল স্ট্রাটেজিতে মাস অডিয়েন্সকে কানেক্ট না করা, কবির খানের কন্ট্রোভার্সাল স্ট্যাটাস... 'এইটি থ্রি'র ভরাডুবির পেছনে এসব কারণ মুখ্যত না হলেও তাদের ভূমিকা যে একেবারেই নেই, তাও অমূলক। তবে এই সিনেমার ব্যর্থতার প্রোটাগনিস্ট কারণ এটাই, কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীর উপস্থিতি। যে প্রতিদ্বন্দ্বীরা এতটাই দোর্দণ্ডপ্রতাপে গ্রাস করে নিয়েছে পুরোটা, 'এইটি থ্রি' এর জন্যে ছিটেফোঁটাও রাখেনি আর। এবং এই বিষয়টিই দিনশেষে গড়ে দিয়েছে বিস্তর ব্যবধান। এবং সেখানেই ঘটেছে 'এইটি থ্রি'র পরাজয়। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা