এবারের ঈদে প্রচার হওয়া কাজগুলোর মধ্য থেকে অন্যতম সেরা পাঁচ আলোচিত নির্মাতা, অভিনেতা ও অভিনেত্রী নিয়ে আজকের এই আয়োজন...

ঈদ এলেই ব্যস্ততা বাড়ে নাট্যজগতের কুশলীদের। যদিও লকডাউনের প্রভাবে নাটক নির্মাণ হয়েছে কম। এই ঈদে অন্যতম প্রাপ্তি ছিল বঙ্গের আয়োজনে উপন্যাস থেকে সাতটি টেলিফিল্ম নির্মানের, সঙ্গে আলফা- আইয়ের প্রযোজনায় ১৪ টি শর্টফিল্ম। এর বাইরে টিভি নাটক তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে এইবারের ঈদ আয়োজন সন্তোষজনক বলাই যায়, ঈদে প্রচার হওয়া কাজগুলোর মধ্য থেকে সেরা পাঁচ আলোচিত নির্মাতা, অভিনেতা ও অভিনেত্রী নিয়ে আজকের এই আয়োজন সাজিয়েছেন হৃদয় সাহা

*সেরা পাঁচ আলোচিত নির্মাতা: 

১. শাফায়েত মনসুর রানা: ঈদের সাতদিন এই জনপ্রিয় নির্মাতা সাতটা শর্টফিল্ম নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি, যার নাম দেয়া হয়েছিল 'শর্টকাট সিরিজ'। প্রতিটি শর্টফিল্মের গল্পই ছিল প্রাসঙ্গিক, যা নিজের ভাবনা চিন্তাকে জাগ্রত করে৷ সাতটি শর্টফিল্মই দর্শকদের কাছ থেকে কম-বেশি প্রশংসা পেয়েছে, আর এতেই তিনি হয়ে উঠেছেন সবচেয়ে আলোচিত। শর্টফিল্মগুলো হলো- এমন যদি হতো, চা খাবেন?, শ্যূটআউট, এক ভাই চম্পা, টিক টক, মাথা নষ্ট ও আকাশ ভরা তারা। 

২. গোলাম হায়দার কিসলু: বিজ্ঞাপন নির্মাতা হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠিত, কিছু নাটকও বানিয়েছেন। তবে এবার  বঙ্গ ববের আয়োজনে মারুফ রেহমানের 'লাবনী' উপন্যাস অবলম্বনে টেলিফিল্ম নির্মান করে দর্শকদের কাছ থেকে তুমুল প্রশংসা আদায় করে নিয়েছেন। ঈদের সেরা কাজ হিসেবে এগিয়ে রয়েছে লাবনী, আর তার নির্মাণের মুন্সিয়ানার জন্য আলোচিত হয়েছেন এই নির্মাতা। 

৩. সঞ্জয় সমদ্দার: সাম্প্রতিক সময়ের নাট্যনির্মাতাদের অন্যতম আলোচিত তিনি, এই ঈদে নিজেকে আরো বিকশিত করেছেন। বঙ্গ ববের আয়োজনে সাদাত হোসাইনের উপন্যাস অবলম্বনে 'মরনোত্তম' টেলিফিল্ম নির্মান করে আলোচিত হয়েছেন,প্রশংসাও পেয়েছেন বেশ। এছাড়া এন্টি হিরো, নাম করণ, অন্ধ নাটকগুলিও কম বেশি আলোচিত হয়েছে।

৪. শিহাব শাহীন: টিভি নাটকের অন্যতম জনপ্রিয় নির্মাতা তিনি, এই ঈদে তিনি নাটক বানিয়েছেন মোট পাঁচটি৷ প্রচারের পর বেশি আলোচনায় এসেছে 'পাশের বাসার ছেলেটা' নাটকটি, এছাড়া অপূর্ব-তিশা জুটির প্রত্যাবর্তনের নাটক 'অহং' ছিল শুরু থেকেই আলোচিত। নকশী পেয়েছে প্রশংসা, তবে মোবাইল সোয়াপ ও কতিপয় স্বল্প মেয়াদী দুটোই প্রত্যাশা পূরন করেনি। 

৫. সকাল আহমেদ: টিভিতে প্রচার হওয়া এই ঈদের নাটকের মধ্যে অন্যতম প্রশংসিত হয়েছে গরম ভাতের গন্ধ ও রাত গভীর হয়। দুটোরই নির্মাতা সকাল আহমেদ। বিশেষ করে গরম ভাতের গন্ধ যারা দেখেছেন তারা চোখের জল ফেলেছেন। এই দুই নাটকের মধ্যে বেশ কয়েক বছর পর আলোচনায় ফিরলেন এই নির্মাতা। 

বঙ্গ বব আয়োজিত মাহবুব মোর্শেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত টেলিফিল্ম 'মিস্টার কে' নির্মান করে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছেন গুণী নির্মাতা ওয়াহেদ তারেক। বঙ্গ ববেরই রাহিতুল ইসলামের উপন্যাস অবলম্বনে 'চরের মাস্টার' নির্মাণ করেছেন সময়ের অন্যতম আলোচিত নির্মাতা ভিকি জাহেদ। তানিম রহমান অংশু 'গল্প গল্প খেলা'য় সাতটি শর্টফিল্ম বানিয়েছেন,যদিও খুব বেশি সাড়া পায়নি৷ 

'যদি আমি না থাকি' নির্মান করে আলোচিত হয়েছেন আশিকুর রহমান। মিজানুর রহমান আরিয়ানের নাটক প্রচার হয়েছে দুইটি- 'তাকে ভালোবাসা বলে' ও 'চিরকাল', সঙ্গে শর্টফিল্ম ব্লু মুন। এছাড়া অন্যান্য নির্মাতাদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান হিমি (রাজা), রুবেল হাসান (ব্রেকিং নিউজ), মাবরুর রশিদ বান্নাহ (মায়া, মেড ফর ইচ আদার), অনিমেষ আইচ (আলিবাবা ও চালিচার), সাগর জাহান (এই পৃথিবী আমাদের) মোটামুটি আলোচিত হয়েছেন।

*সেরা পাঁচ অভিনেতা:

 ১. মোশাররফ করিম: এই ঈদে যেন নিজেকে আবার পুরনো রুপে ফিরে পেয়েছেন এই জনপ্রিয় ও দক্ষ অভিনেতা। 'গরম ভাতের গন্ধ' নাটকে তার অভিনয়ে দর্শকরা অশ্রুসজল যেমন হয়েছেন তেমনি যমজ সিরিজে তিনি হাসিয়েছেন৷ যমজ ইউটিউব ভিউতেও রয়েছে আলোচনার শীর্ষে। এছাড়া রাত গভীর হয়, কাল্লু সুইপার, কঙ্কাল চুরি নাটকগুলোতেও নিজের মান রেখেছেন।

২. অপূর্ব: নিজের চিরাচরিত ইমেজ ভেঙে পরিবর্তন করার চেষ্টায় ছিলেন এই ঈদে। পুরোপুরি সফল না হলেও দর্শকরা গ্রহণ করেছেন বলা যায়, ভক্তরাও সন্তুষ্ট। এক যুগের ও বেশি সময় পর জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন তিশার সঙ্গে। এই জুটির অহং ও রক রবীন্দ্র নাটক আলোচিত হয়েছে। ব্রেকিং নিউজ ও রক্ত নাটকে তার অভিনয় সমাদৃত হয়েছে। অন্যান্য নাটকের মধ্যে পাশের বাসার ছেলেটা, ব্লাড, তেজপাতা অন্যতম। 

৩. মনোজ প্রামানিক ও খায়রুল বাসার: বঙ্গ বব আয়োজিত লাবনী টেলিফিল্মে মনোজ প্রামানিক ও চরের মাস্টারে খায়রুল বাসার, দুইজন ই অসাধারণ অভিনয়ের জন্য সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বলা যায়,এই ইদে অভিনয়ের জন্য দুইজনই সমান ভাবে এগিয়ে থাকবেন। দর্শকপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন দুইজন ই। খায়রুল বাসারকে এই একটি মাত্র কাজে দেখা গেলেও মনোজ প্রামানিক আরো দেখা গেছে ইচিং বিচিং প্রাইভেট টিচিং, ব্লু মুন, শ্যূটআউট শর্টফিল্মগুলোতে। 

৪. তাহসান: গানের মানুষ এখন পুরোদস্তুর অভিনয়ের মানুষ এটা পুরনো সংবাদ। তবে এই ইদে তিনি যেন আরো সিরিয়াস হয়ে উঠেছিলেন। আগে তাকে যেসব চরিত্রে দেখা যায় নি সেইগুলো করেছেন। যেমন অন্ধ, এন্টি হিরো তে তার ভিন্নধর্মী অভিনয়ের চেষ্টা সঙ্গে মায়া, মেড ফর ইচ আদার, একটুখানির মত নাটক। তবে ক্রেডিট শো'র মত মানহীন নাটকেও অভিনয় দেখা গেছে যেটা তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের হতাশ করেছে। 

৫. ইরফান সাজ্জাদ: এইবারের ইদ টাকে অন্যরকম ভাবে সাজিয়েছেন এই অভিনেতা। সংখ্যার দিক থেকেও বেশ কয়েকটি নাটক করেছেন তার মধ্যে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র৷ যদি আমি না থাকি তে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে সঙ্গে এক ভাই চম্পা, কি একটা অবস্থা, কাঁটা-তে অভিনয় করে দর্শকদের কাছ থেকে সমাদৃত হয়েছেন। 

সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো লকডাউনের জন্য কোন নতুন নাটকে চুক্তিবদ্ধ হননি, যার জন্য নাটক প্রচার হয়েছে একেবারেই কম। খুব বেশি আলোচিত না হলেও রাজা, তাকে ভালোবাসা বলে, আবার ভালোবাসার সাধ জাগে নাটকগুলো ইউটিউব ভিউতে শীর্ষে রয়েছে, নামকরণ নাটকটাও মোটামুটি আলোচিত হয়েছে। 

ঈদের আগে প্রায় ৫০ টি নাটক প্রচারের জন্য আলোচিত হয়েছিলেন তৌসিফ। কিন্তু ইদের পরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। তার অভিনীত নাটকের মধ্যে ৩০০ টাকার প্রেম ১০০ টাকা, চিরকাল, রিভার্স নাটকগুলো মোটামুটি আলোচিত হয়েছে। সময়ের আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা জোভান ও অনেক নাটকে অভিনয় করেছে, তবে তার নাটক নির্বাচনে সচেতন হওয়া উচিত। জোভানের অভিনীত নাটকের মধ্যে অ্যাওয়ার্ড, আফ্রিকান বউ, ব্রাদার এন্ড সিস্টার, মোবাইল সোয়াপ অন্যতম। 

কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে অনেকদিন পর দেখা গেছে 'মরনোত্তম' টেলিফিল্মে, একই কাজে প্রশংসিত হয়েছেন ইমতিয়াজ বর্ষন ও শহীদুজ্জামান সেলিম। এছাড়া অন্যান্য অভিনেতাদের মধ্যে সোহেল মন্ডল (টিক টক,আলিবাবা ও চালিচার, পার্থ বড়ুয়া (মিস্টার কে, শহরে টুকরো রোদ), মুস্তাফিজুর নূর ইমরান (আকাশ ভরা তারা), ইয়াশ রোহান (কেমনে কি), মিশু সাব্বির (মাথা নষ্ট) অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছেন। 

গেল কয়েক বছরের মত হতাশ করেছেন জাহিদ হাসান, তাকে দেখা গেছে বুড়া জামাইয়ের মতো দূর্বল কাজে। এছাড়া অনেক বছর পর লাভলু- বৃন্দাবন-চঞ্চল ত্রয়ীকে একসাথে 'বায়ুচড়া' নাটকে দেখা গেলেও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

*সেরা পাঁচ আলোচিত অভিনেত্রী: 

১. সাবিলা নূর: এই ঈদে ক্যারিয়ারের বৃহস্পতি তুঙ্গে ছিল এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর, নিজেকে আরো মেলে ধরেছেন। বিশেষ করে পাশের বাসার ছেলেটার চঞ্চল অভিনয় সঙ্গে এমন যদি হতো শর্টফিল্মে তার একক অভিনয় বেশ আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। দর্শকদের মধ্যে আরো প্রিয় হয়ে উঠেছে এই তারকা। 

২. তানজিন তিশা: হালের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর এবার আরো সচেতন হয়েছেন অভিনয়ে। 'পেপার গার্ল ' তার সবচেয়ে আলোচিত নাটক এই ঈদে, যদিও আরো উন্নতি করতে হবে। আশা রাখি তিনি আরো সফল হবেন। অন্যান্য নাটকের মধ্যে বালক বালিকা, একটুখানি, জ্বীনের বিয়ে, তাকে ভালোবাসা বলে, এন্টি হিরো অন্যতম। 

৩. নুসরাত ইমরোজ তিশা: এই অভিনেত্রীর জনপ্রিয়তা ও অভিনয় দক্ষতা সবারই জানা, তবে মাঝখানে সিনেমায় সময় কিংবা নাটক নির্বাচনে ভুলের কারনে জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছিল টিভি নাটকে। এই ঈদে আবার পুরনো রুপে ফিরে এসেছেন তিনি। অপূর্বের সঙ্গে অনেক বছর পর অহং, রক রবীন্দ্রের বাইরে রাত গভীর হয় বেশ আলোচিত হয়েছে। 

৪. তাসনিয়া ফারিণ: এই সময়ের জনপ্রিয় নারী তারকাদের একজন তিনি, দর্শক-ভক্তও বাড়ছে।  অভিনয়ে ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে, তাকে নিয়ে প্রত্যাশাও অনেক। তবে আরো সচেতন থাকা জরুরী। তার অভিনীত অনেক নাটকের মধ্যে মেড ফর ইচ আদার, অন্ধ অন্যতম। 

৫. শবনম ফারিয়া: অভিনেত্রী হিসেবে মাঝে আলোচনার বাইরে চলে গিয়েছিলেন তবে এইবার নিজেকে ফেরানোর চেষ্টায় ছিলেন। তার প্রমাণ মিলে 'নকশী' তে সন্তোষজনক অভিনয়ের জন্য। আগের চেয়ে নিজেকে আরো আকর্ষনীয় করেছেন। অন্যান্য নাটকের মধ্যে ব্রাদার এন্ড সিস্টার, ওয়েব সিরিজ বিলাপ অন্যতম। 

এই ঈদে আলোচিত অভিনেত্রী সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কমই বলা যায়,এরমাঝে এইবার লকডাউনের জন্য অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছিলেন সময়ের সেরা জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন। আগের করা নাটকের মধ্যে রাজা ইউটিউব ভিউতে এগিয়ে আছে। অন্যান্য নাটকের মধ্যে নামকরণ, ব্লাড অন্যতম। অন্যান্য অভিনেত্রীদের মধ্য থেকে মিথিলা (মিঁয়াও), অপর্ণা (চা খাবেন?, যদি আমি না থাকি), চমক (লাশে গেলাম ফেঁসে), ফারহানা এনি (টিক টক), টয়া (লাবনী), বাঁধন (শহরে টুকরো রোদ), মম (গরম ভাতের গন্ধ), রোদসী সিদ্দিকী (মাথা নষ্ট, কি একটা অবস্থা), নাজিবা বাশার (চা খাবেন?), ফারিয়া শাহরিন(সাদা মানুষ) অন্যতম।


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা