'নোংরা মন্তব্য করে তারা নিজেদের নীচতাকেই কি নগ্নভাবে প্রকাশ করে না?'
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

'শিল্পী' বা 'তারকা' কিংবা 'পাবলিক ফিগার'দের জীবনকে আপনারা যেভাবে দেখেন, যেরকম ঝকমকে মনে হয় দূর থেকে সব, তাদের জীবন কিন্তু বাস্তবে মোটেও ওরকম না। তারাও আপনাদের মতই রক্তমাংসের মানুষ। রাগ-ভালো থাকা-খারাপ থাকা-আবেগ-অনুভূতি তাদেরও আছে। অথচ, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদেরকে যেভাবে আক্রমণ আপনি করেন, নোংরা কথার যে ঘৃণ্য বেসাতি নিয়ে আপনি নেমে পড়েন সম্মুখ সমরে, তা যে তাদেরও কষ্ট দেয়, তা কি ভাবেন আপনারা? ভাবলেও কতটুকু ভাবেন? যদি সামান্য হলেও ভাবতেন, তাহলে এরকম দেদারসে বুলিং কি আপনারা করতে পারতেন?
আমার তো মনে হয়, যে বা যারা, সোশ্যাল মিডিয়াতে এরকম নোংরাভাবে সাইবার বুলিং করে, এসবের মাধ্যমে মূলত তারা তাদের নিজের পরিচয়টাই খোলাসা করে সবার সামনে। যে মানুষটাকে নিয়ে এরকম অসুস্থ কথাবার্তা তারা বলে, সে মানুষটা হয়তো প্রথমবার এসব নোংরামো দেখলে একটু মন খারাপ করে। কিন্তু, সেটা প্রথম প্রথমই। এরপর সে ইগনোর করতে শেখে। এসব বুলি তাকে আর বিড়ম্বনায় ফেলে না। কিন্তু যারা ভাবে, এরকম কদর্য একটা মন্তব্য করে দারুণ কিছু করে ফেললাম, তারা কি আসলে এভাবে খুব উপরে ওঠে? এভাবে নোংরা মন্তব্য করে তারা নিজেদের নীচতাকেই কি নগ্নভাবে প্রকাশ করে না?
আমাকে যখন নোংরা আক্রমন করা হয় অনলাইনে, তখন আমি ভাবি- আমি হয়তো একজন অভিনয়শিল্পী। একজন উন্নয়নকর্মী। কিন্তু সবার আগে আমি তো একজন নারী, একজন মা। তো একজন নারীকে, বা একজন মাকে একটা বেসিক সম্মান জানানো, এটা কবে শিখবো আমরা? এসব তো মানুষ পরিবার থেকে শেখে। মানুষ হয়ে মানুষের সাথে কীভাবে বিহ্যাভ করতে হয়- সেই শিক্ষাটুকু যাদের নেই; যারা একজন মা অথবা নারীকে এটুকু সম্মান দিতে পারে না, যারা দিনের পর দিন সাইবার বুলি করে পাবলিক ফিগারদের- সেসব মানুষ নিজেদের কদর্য মানসিকতা কতটুকু আঁচ করতে পারে? তাছাড়া, সাইবার বুলিং একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধও। যারা অপরাধ জানা সত্বেও এ কাজটা করে যাচ্ছে, নিরন্তর করেই যাচ্ছে, এবং এত নোংরা নোংরা কথা পাবলিক প্লেসে অনায়াসে বলে যাচ্ছে, সেসব মানুষদের যে মানসিক সুস্থতার অভাব আছে, তা কি অস্বীকার করার সুযোগ আছে মোটেও?
যেহেতু আমি ভারত-বাংলাদেশ দুই জায়গাতেই নিয়মিত কাজ করছি, এই দুই দেশে কাজের সুবাদে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি- বাংলাদেশে 'সাইবার বুলি' এর যে মহামারী চলছে, এরকমটা আর কোথাও নেই। বাংলাদেশের অনেক মানুষ আমার অভিনয়-সত্বাকে ভালোবাসে, আমাকেও ভালোবাসে, তা আমি জানি। আমি এও জানি, তারা আমাকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করেন না। তবে, যারা করেন, তারা এমন নোংরাভাবেই সেটা করেন, যা যেকোনো রকম বিশেষণেরই অযোগ্য। এবং এটা স্বীকার করতেই হবে, সাইবার স্পেসে বাংলাদেশের তুলনায় কলকাতার মানুষের আচরণ কিছুটা হলেও বেটার। সাইবার বুলির এই প্রকোপটা আমি কলকাতায় খানিকটা হলেও কম পেয়েছি।

এরকম এক টালমাটাল সাংস্কৃতিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আমার তাই মনে হয়, বাংলাদেশে সাইবার স্পেসে যেভাবে নারীদের ট্রিট করা হয়, তা খুবই অসম্মানজনক৷ এবং এই সংকটজনক পরিস্থিতি কাটাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। যারা সাইবার বুলিং এর শিকার, অথবা না, প্রত্যেককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে সরব থাকতে হবে৷ আর যেহেতু এটা একটা অপরাধ, তাই আইন শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এগিয়ে আসতে হবে।
আর সর্বোপরি এটা তো একটা মানসিক সমস্যা, মানসিকতার বিষয়। তাই, পরিবার থেকে যথাযথ পারিবারিক শিক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে। অন্যকে সম্মান করতে শেখা, নোংরা কথা না বলা, গালি না দেয়া, এই জিনিসগুলো তো আসলে পরিবার থেকেই আসে। তাই পরিবারকে এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে৷ ছেলেমেয়েরা সাইবার স্পেসে গিয়ে কি করছে, তা তাদের ফ্যামিলিরও জানতে হবে। নাহয় দীর্ঘমেয়াদী কোনো সমাধান আসবে না।
আমরা চাই, ডিজিটাল স্পেসে সুস্থ মানুষদের পদচারণা থাকবে সর্বদা। তারা আর্টিস্টদের কাজ দেখে নানারকম গঠনমূলক মন্তব্য করবে, নির্মোহ সমালোচনাও করবে। এতেই শিল্পের লাভ। শিল্পীদের লাভ। মানু্ষ হিসেবে আমাদের স্বস্তি। এটিই এখন প্রত্যাশা।