লুক পরিবর্তন, ওজন কমানো সহ মিলন অনেক কিছুই করেছেন চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরার জন্য। মাথার চুল একদম ছোট করে ছাঁটা, সাথে ক্লিন শেভ মুখে রুক্ষতা এবং নৃশংসতা আর কুচকানো ভ্রু সহ দুটি চোখে যেন খুনের নেশা...
এই সময়ে এসে বাস্তব কাহিনী বা সত্য ঘটনা কেন্দ্র করে বা সেই ঘটনা অবলম্বনে আমাদের দেশে সেইভাবে নাটক, সিনেমা নির্মিত হয় না বললেই হয়। তবে কিছু কিছু নির্মাতা এবং শিল্পী কলাকুশলী প্রচলিত সেই ধারা ভেঙে মাঝে মাঝে ভিন্নধর্মী কনটেন্ট নিয়ে হাজির হন যা নির্মানের মুন্সিগিরির কারনে সাধারণ দর্শকদের কাছে যেমন জনপ্রিয়তা পায় তেমনি প্রশংসাও কুড়ায়।
এবার সেরকমই একটি কনটেন্ট নিয়ে হাজির হচ্ছেন নির্মাতা সহিদ উন নবী। আমাদের দেশের অন্যতম শক্তিশালী এবং দক্ষ অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলনকে সাথে নিয়ে তিনি নির্মান করেছেন দেশের ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার খুলনার কুখ্যাত এরশাদ শিকদারের জীবন কাহিনী। খুলনার ঘাট এলাকার এক বিশাল বরফকলের চার দেয়ালের ভিতরই চাপা পড়ে যায় এরশাদ শিকদারের একের পর এক হত্যাকান্ড। আর সেই বরফ কলের ভয়াবহ নৃশংসতার কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই সিরিজের নাম রাখা হয়েছে ‘বরফ কলের গল্প’।
খুলনার সেই ডন এরশাদ শিকদার আশি এবং নব্বই দশকে নিয়ন্ত্রণ করতেন আন্ডারওয়ার্ল্ড। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাটি কাঁপিয়েছেন এই সিরিয়াল কিলার। তার হাতের মুঠোয় ছিল জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ হত্যার পর খাঁটি দুধ দিয়ে গোসল করে ‘পবিত্র’ হতেন। যাকে পথের কাঁটা মনে করেছেন, তাকেই তিনি হত্যা করেছেন। ১৯৮৪ সালে থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত যার নামে ষাটের অধিক হত্যা মামলা দায়ের হয়েছিল।
১৯৯৯ সালের নভেম্বরে গ্রেফতার হন এরশাদ শিকদার। গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে তার নৃশংসতার অজানা সব কাহিনী। তার নৃশংসতার ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও হতবাক। খুলনার কারাগারে নেয়ার পর সেখানেও পেশাদার অপরাধীরা তার বিচার চেয়ে মিছিল করেন। ২০০৪ সালে হত্যার দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
এরকম একজন মানুষ নামের অমানুষের জীবন কাহিনী সিরিজে তুলে ধরাটা মোটেও সহজ কাজ নয়। কারন পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট এর বদৌলতে সারা দেশের মানুষের কাছে এই গল্প জানা। তাই সেটাকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে সেলুলয়েডে তুলে ধরাটাই চ্যালেঞ্জ। আর চ্যালেঞ্জ উতরানোর জন্য সেই সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে একজন শক্তিশালী অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন নিজের সেরাটা দিয়েছেন সেটা বোঝা যায় তার লুক পোষ্টার প্রকাশের পর থেকেই। পোষ্টার এবং কনটেন্ট সম্পর্কে জানার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দর্শকদের আগ্রহের মাত্রা বেড়েই চলছে।
নির্মাতা সহিদ উন নবী একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন- ‘বরফ কলের গল্প’ একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত সিরিজ। বলা যায় একটি সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা এটির গল্প সাজিয়েছি। এর বেশি এখনই জানাতে চাই না। বাকিটা রিলিজের পর সবাই দেখতে পারবেন। তবে গল্প, অভিনয় এবং নির্মান আপনাদের হতাশ করবে না। তিনি আরো জানান, প্রায় বছরখানেক এই গল্প নিয়ে কাজ করেছেন তিনি এবং তার টিম। খুলনায় যেয়ে ওই জায়গা গুলোতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও তথ্য যোগাড় করেছেন তারা। পুরো ঘটনা মাত্র ছয়টি এপিসোডে তুলে ধরা কঠিন ছিলো। ক্রাইম, অ্যাকশন এবং থ্রিলার এই তিনটি বিষয়ই সিরিজটিতে দেখা যাবে। যৌথভাবে এই সিরিজের চিত্রনাট্য করেছেন সহিদ উন নবী ও রাশেদুল ইসলাম ইফাজ।
খুলনায় নওশাদ নামের একজন অপরাধীর উত্থান, জীবনযাপন এবং পতনের গল্পই ‘বরফ কলের গল্প’। টোকাই থেকে এক ভয়ংকর মাফিয়ার শুন্য থেকে সাফল্যের চূড়ায় উঠার এই গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্রে নাম ভূমিকায় আনিসুর রহমান মিলনের অভিনয় নৈপুণ্যে দর্শক মুগ্ধ হবেন একথা বলা যায় নিঃসন্দেহে। নিজের লুক পরিবর্তন, ওজন কমানো সহ অনেক কিছুই করেছেন তিনি চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরার জন্য। মাথার চুল একদম ছোট করে ছাঁটা, সাথে ক্লিন শেভ মুখে রুক্ষতা এবং নৃশংসতা আর কুচকানো ভ্রু সহ দুটি চোখে খুনের নেশা। আনিসুর রহমান মিলনের এমনই এক হিংস্র এবং ভয়াবহ লুকের একটি পোস্টার প্রকাশ করেছে প্রযোজনা সংস্থা।
সিরিজটির বেশিরভাগ শুটিং করা হয়েছে খুলনা শহরের বিভিন্ন লোকেশনে। গল্পের প্রয়োজনেই একেবারে রিয়েল লোকশনেই শ্যুটিং করা হয়েছে যাতে পুরো গল্পটা বিশ্বাসযোগ্যতা পায়। ‘বরফ কলের গল্প’ প্রযোজনা করছে আমাদের দেশের ওয়েব অ্যাপ ‘বিঞ্জ’। নওশাদ চরিত্রে অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন ছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহীদুল আলম সাচ্চু, নওশাবা, নিশাত প্রিয়ম, সূবর্ণা প্রমুখ। বদলে যাওয়া বিনোদনের সংজ্ঞায় দর্শকদের দেশীয় কনটেন্ট দিয়ে ধরে রাখার প্রয়াস হিসেবে ‘বরফ কলের গল্প’ একটি আলাদা ছাপ রাখবে সেটাই কামনা। শুভ কামনা রইলো পুরো টিমের জন্য।