বলিউডি টিপিক্যল সিনেমায় বরাবরই এমন কিছু অনুষঙ্গ পাওয়া যাবে, যেগুলো খুব অর্থোডক্স। যেমন- যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীর পোর্ট্রেয়াল। অধিকাংশ বলিউডি সিনেমাতেই এই চরিত্রে অংশগ্রহণ করা নারীদের চরিত্রটাই এমন, এমনই টিপিক্যাল সেসব চরিত্রের ওভার ড্রামাটিক ইমোশনস, মেকাপ, কিংবা স্টোরি ডেভেলপমেন্ট, সিনেমার সাথে যেন সংশ্রবই থাকে না বিশেষ এসব চরিত্রের। খানিকটা 'স্যাড এলিমেন্ট' যুক্ত করা এবং নায়কের বীরত্বকে গ্লোরিফাই করার জন্যেই যেন তাদের উৎপত্তি...

যদি টিপিক্যাল বলিউড সিনেমার দিকে তাকানো হয়, সেখানে বরাবরই এমন কিছু অনুষঙ্গ পাওয়া যাবে, যেগুলো খুব অর্থোডক্স। তাদের মধ্যে অন্যতম- যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীর পোর্ট্রেয়াল। অধিকাংশ বলিউডি সিনেমাতেই এই চরিত্রে অংশগ্রহণ করা নারীদের চরিত্রটাই এমন, এমনই টিপিক্যাল সেসব চরিত্রের ওভার ড্রামাটিক ইমোশনস, মেকাপ, কিংবা স্টোরি ডেভেলপমেন্ট, সিনেমার সাথে যেন সংশ্রবই থাকে না বিশেষ এসব চরিত্রের। খানিকটা 'স্যাড এলিমেন্ট' যুক্ত করা এবং নায়কের বীরত্বকে গ্লোরিফাই করার জন্যেই যেন তাদের উৎপত্তি। অবাক করার বিষয় এটাই, সময়ের ফেরে বলিউডের নানা বিষয়ই পাল্টেছে, নতুনত্বের ছোঁয়া লেগেছে নির্মাণের নানা দিকেও, তবু কেন যেন এই দিকটা বরাবরই রয়ে গিয়েছে অধরা। কিন্তু, আবার এটাই শেষ কথা না। বলিউডের টিপিক্যাল 'সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজড' চরিত্রের ভীড়েও মাঝেমধ্যে এমন কিছু চরিত্রের দেখা পেয়েছি, যারা ঠিকই দাগ কেটেছে ভেতরে। যদিও বলিউড সাপেক্ষে সংখ্যাটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, তবুও দাগ কেটে যাওয়া এরকম কিছু চরিত্র নিয়েই আজকের কথাবার্তা। 

১. পিঙ্ক

'নো মিনস নো' বাক্যটিকে জনপ্রিয় করেছিলো যে সিনেমা এবং যে সিনেমা 'ভিক্টিম ব্লেমিং' এর সাইকোলজিকে খুব নগ্ন করেই নিয়ে এসেছিলো সামনে, সে সিনেমা 'পিঙ্ক।' অমিতাভ বচ্চন- তাপসী পান্নুর ডুয়োটাও হয়েছিলো বেশ খোলতাই। তবে এসব ছাপিয়েও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, 'সেক্স ভিকটিম' এর চিরাচরিত ন্যারেটিভ থেকে অনেকেটাই সরে এসেছিলো এ সিনেমা। 'সেক্স ভিকটিম'রাও যে প্রয়োজনে সাহসী হতে পারে, তাদেরও যে আলাদা এক গল্প আছে, সে বিষয়টিই দারুণভাবে ফুটে উঠেছিলো ' পিঙ্ক' সিনেমায়।

পিঙ্ক

২. গিলটি

প্রচলিত সমাজব্যবস্থা 'রেপ ভিকটিম' এর কাছ থেকে যে ব্যবহার, যে বেশবাস কিংবা যে কথাবার্তা প্রত্যাশা করে, এই সিনেমার 'সেক্স ভিকটিম' চরিত্রে অভিনয় করা তনু কুমার, সেসবের কোনোকিছুরই পরোয়া করেনা। সমাজকে তুষ্ট করার বিন্দুমাত্র বাসনাও যে নেই তার, সেটাও প্রমাণিত হয় তার চরিত্রের দুর্দান্ত অভিনয়ে। এ সিনেমার নির্যাতিতা 'আকাঙ্ক্ষা' চরিত্রে তার যে অভিনয়, সেটা আন-অর্থোডক্স এবং সমাজকে কটাক্ষ করার কারণেই বিশেষভাবে সজাগ হয়ে রয়ে যায় মস্তিষ্কে। 

গিলটি

৩. ডেভ ডি

'ডেভ ডি'র 'চন্দ্রা' চরিত্রটি টিপিক্যাল বলিউডি ন্যারেশনের সাথে বৈপরীত্য রেখেই আমাদের চোখে আবির্ভূত হয়৷ 'এমএমএস সেক্স স্ক্যান্ডাল' এ নাজেহাল হয়ে চন্দ্রাকে ছাড়তে হয় নিজের ঘর। চলে আসতে হয় দিল্লী। দিনে 'যৌনকর্মী' আর রাতে পড়াশোনা... এভাবেই চন্দ্রা চালাতে থাকে নিজের জীবনযুদ্ধ। এতকিছুর পরেও সে হাল ছাড়েনা, জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যায় নিজের মতন। এবং সেখানেই 'চন্দ্রা' চরিত্রটির অসাধারণত্ব 

ডেভ ডি


৪. গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি

সঞ্জয় লীলা বানসালীর অথবা আলিয়া ভাটের 'গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি'র পুরো গল্পজুড়েই 'গাঙ্গুবাই' এর মহিমা-কীর্তন। এই চরিত্রটি বলিউডের আবহমান 'সেক্স ভিকটিম' সাপেক্ষে পুরোপুরি ভিন্ন তো বটেই, দাপটে-শক্তিতে-সাহসে কখনো কখনো সাধারণ পুরুষের চেয়েও কয়েকগুণে এগিয়ে সে। পুরো সিনেমাজুড়ে যে 'গাঙ্গুবাই' এর বর্ণনা, তার সাথে বলিউডি ন্যারেশনে 'সেক্স ভিকটিম' এর অমিলটাও বড্ড প্রকট। 

গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি

৫. আইত্রাজ

'যৌন নির্যাতন' যে শুধু নারীকে না, ক্ষেত্রবিশেষে করা হয় পুরুষকেও...এই 'প্যারাডাইম শিফট' দেখা গিয়েছিলো 'আইত্রাজ' সিনেমার ক্ষেত্রে। যেখানে এক পুরুষ 'যৌন নির্যাতন'জনিত কেলেংকারিতে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ এই কেলেঙ্কারি থেকে শেষমেশ সে কিভাবে বেরিয়ে আসে বা আদৌ আসতে পারে কি না, সেসব নিয়েই সিনেমা। 'সেক্স ভিকটিম' হওয়া যে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ এক বিষয়, সেটাই খুব স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয় এ সিনেমা।

আইত্রাজ

বলিউডের এত বছরের ইতিহাসের সাপেক্ষে এই উদাহরণগুলো যে খুবই নগন্য, তা আলাদা করে না বললেও চলে। তবে আশার কথা এটাই, স্ট্রিমিং সাইটের কল্যানে আজকাল অনেক বিষয় নিয়েই নিয়মিত এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে। সেসব বিবেচনায়, সংস্কারযোগ্য এ ক্ষেত্র নিয়েও যদি সংশ্লিষ্টরা কাজ করেন, তাহলে সেটিই হবে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। এবং সেটুকুই বিশেষভাবে কাম্য। 

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা