'স্কুইড গেম' এর জন্যে নিজের ওজন ৫-৬ কেজি বাড়িয়েছিলেন তিনি। চরিত্রটির গভীরতার জন্যে 'মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার'দের নিয়ে পড়াশোনা করেছেন বিস্তর। উর্দু জানতেন না। শিখেছেন। এভাবে প্রচুর শ্রম দিয়ে যে অভিনয় তিনি করেছেন, তার যে এমন ফলাফল আসবে, তা কি তিনি ঘূনাক্ষরেও ভেবেছিলেন?

'স্কুইড গেম' দেখার পরে সিরিজটির গুণগত উৎকর্ষ নিয়ে খুব একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে না পারলেও এই সিরিজের কিছু চরিত্র বেশ দাগ কেটে যাওয়ার মতনই ছিলো। তাদেরই মধ্যে এক বিশেষ চরিত্র- আলী। সিরিজের প্রথম পর্বে প্রথমবারের মতন এই চরিত্রকে পর্দায় যখন দেখি, খানিকটা চমকেই উঠি। সে যে কোরিয়ান না, তা চেহারাতেই দ্রষ্টব্য। উপমহাদেশের আমাদের অঞ্চলের মানুষের মতন চেহারা তার। তবে কী সে বাংলাদেশি? ভারতীয়? পাকিস্তানি? গল্প সামনে এগোতে এগোতে জানা যায়, 'আলী আবদুল' পাকিস্তানি। কোরিয়ায় এসেছেন জীবিকার তাগিদে। বাস্তবের 'আলী' আবার ভারতীয়। যার প্রকৃত নাম- অনুপম ত্রিপাঠী। যে 'গ্লোবাল আর্টিস্ট'কে নিয়ে এখন সরব দেশ-বিদেশ। এক 'স্কুইড গেম'ই যাকে পৌঁছে দিয়েছে চতুর্দিকে। 

'স্কুইড গেম' প্রকৃতপক্ষে অমানবিকতায় ভরা একদল মানুষের উপাখ্যান, এ বিষয়টি সকলেই জানেন। কিন্তু এই অমানবিক মানুষদের ভীড়েও যে দুয়েকজন মানুষ ছিলেন মানবিক, তাদের মধ্যে আলী অন্যতম। সিরিজের প্রথম পর্বেই প্রোটাগনিস্টকে বাঁচানো থেকে শুরু করে সামনের নানা পর্যায়ে সে ক্রমশই দেখিয়েছে বিশুদ্ধ হৃদয়ের চমক। আবার 'আলী' চরিত্রটির ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টও বেশ গোছানো। মাইগ্রান্ট হয়ে আসার কষ্ট, বউ-বাচ্চার যাপিত যন্ত্রণা, অর্থের মুলো ঝুলিয়ে অর্থবানদের প্রহসন...নানা কিছুর সাক্ষী এই চরিত্র। এবং 'আলী' চরিত্রে অভিনয় করে অনুপম ত্রিপাঠী যেভাবে এই অনুভূতিগুলোকে নিঙড়ে নিয়ে এসেছেন পর্দায়, তা এককথায় দুর্দান্ত! 

হৃদয়ে দাগ কেটে গিয়েছে আলী! 

নয়াদিল্লীতে বড় হয়ে ওঠা অনুপম ত্রিপাঠী এই 'আলী' চরিত্রটির জন্যে বেশ মেহনত যে করেছিলেন, তা বোঝা যাচ্ছিলো। জানা যায়, এই ওয়েব সিরিজের জন্যে নিজের ওজন ৫-৬ কেজি বাড়িয়েছিলেন তিনি। চরিত্রটির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্যে স্ক্রিপ্টের পাশাপাশি বাড়তি যা যা কিছু করার দরকার, করেছেন সবই। 'মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার' দের সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশোনার জন্যে তিনি প্রচুর নথিপত্র ঘেঁটেছেন। ডকুমেন্ট্রি দেখেছেন। 'আলী' চরিত্রটি উর্দু ভাষায় কথা বলে। এই উর্দু শেখার জন্যে তিনি বিস্তর উর্দু সিনেমা দেখেছেন। উর্দু শিখেছেন। এবং আস্তে আস্তে 'আলী'র মধ্যে এই রপ্ত করা বিষয়গুলোকে যুক্ত করেছেন। এবং সেগুলো যখন শেষপর্যন্ত একসাথে ক্লিক করেছে, 'আলী' জ্যান্ত হয়ে উঠেছে। অপরিচিত এক মানুষ রাতারাতি হয়ে উঠেছে টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড। প্রশ্ন থেকে যায়, যেরকম অবিশ্বাস্যভাবে ভোজবাজির মতন পালটে গেলো সব, এমনটা যে হবে, তা কী ত্রিপাঠী নিজেও বুঝতে পেরেছিলেন? ত্রিপাঠীর মুখেই শোনা যাক-

বুঝেছিলাম, এই সিরিজ এবং 'আলী' চরিত্র জনপ্রিয় হবে। কিন্তু এমনভাবে বেমালুম পালটে যাবে সব, তা তো দূরতম কল্পনাতেও ভাবিনি! 

বলে রাখা ভালো, 'স্কুইড গেম' এর আগেও ত্রিপাঠীকে কোরিয়ান বিভিন্ন সিনেমা-সিরিজে দেখা গিয়েছে। 'হসপিটাল প্লেলিস্ট' সিরিজ এর এক দৃশ্যে ছিলেন তিনি। 'ওড টু মাই ফাদার', ডেসেন্ড্যান্টস অব দ্য সান' 'স্পেস সুইপারপস'এও ছিলেন তিনি। তাছাড়া 'স্পার্টাকাস' এও ছোট রোলে অভিনয় করেছিলেন এই অভিনেতা। তার ইচ্ছে ছিলো ইন্ডিয়ার 'ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা'তে পড়াশোনা করবেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি হওয়ার আগেই কোরিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি'তে তিনি 'আর্টস' নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পান। এবং কোরিয়া চলে আসেন৷ পড়াশোনার পাশাপাশি টুকটাক অভিনয়ও করতে থাকেন তখন থেকেই। 'স্কুইড গেম' এ অভিনয়ের সুযোগ পান গতবছরে। ত্রিপাঠী খুব অল্পসময়েই কোরিয়ান ভাষায় বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি ভাষা-দক্ষতার এই বিষয়টিও তাকে 'আলী' চরিত্রটি পেতে সাহায্য করেছিলো।

অনুপম ত্রিপাঠী! 

২০০৬ সালে ভারতীয় থিয়েটারে অভিষেক হওয়া অনুপম এখন কোরিয়ান আরো বেশ কিছু ভালো নির্মাণে কাজ করার জন্যে আগ্রহী। সে সাথে তিনি আশা করেন, ভারতের সিনেমা-সিরিজে অভিনয় করার সুযোগ পাবেন তিনি। দেশের মানুষের সামনে দেশের ভাষায় অভিনয় করার তার প্রচণ্ড ইচ্ছে। অনুপমের পাশাপাশি আমরাও আশা করি, এই তুখোড় অভিনেতার সে ইচ্ছে পূর্ণ হবে। তিনি যে তুখোড় অভিনেতা, তা প্রমাণিত সত্যি। এবার শুধু নিজের ভাষায় নিজের দেশের মঞ্চ কাঁপানোর অপেক্ষা। ত্রিপাঠী অভিনয়ের দীপ্তিতে স্ব-ভূমিতেও ঝলসে উঠবেন, এটাই শুভকামনা ও প্রত্যাশা। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা