
‘রুস্তম’ সিনেমায় তিনি নাবিক, ‘জলি এলএলবি’ সিনেমায় জুনিয়র উকিল, ‘গোল্ড’ সিনেমায় একজন কোচ। ‘কেসারি’ চলচ্চিত্রে শিখ হাবিলদার থেকে সাম্প্রতিক ‘বেল বটম’-এ সিক্রেট এজেন্ট। কমেডি, অ্যাকশন, হরর, রোমান্স কিছুই বাদ যায়নি তার ফিল্মোগ্রাফি থেকে...
গত দশকে বলিউডে সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময় চরিত্র উপহার দেওয়া নায়কের নাম অক্ষয় কুমার। যদিও এই ২০২১ সালে এসে বলা হয় যে কোন বায়োপিকের ক্ষেত্রে অক্ষয়ের নাকি অলিখিত দাবী থাকে। অক্ষয় আসলেও এতো বায়োপিক করেছেন যে কথাটা না মেনে পারাও যায় না। কিন্তু তাতে তার বিষয় বৈচিত্র্য কমে না। ‘রুস্তম’ সিনেমায় তিনি নাবিক, ‘জলি এলএলবি’ সিনেমায় জুনিওর উকিল, ‘গোল্ড’ সিনেমায় একজন কোচ। ‘কেসারি’ চলচ্চিত্রে শিখ হাবিলদার থেকে সাম্প্রতিক ‘বেল বটম’-এ সিক্রেট এজেন্ট। কমেডি, অ্যাকশন, হরর, রোমান্স কিছুই বাদ যায়নি।
নব্বইয়ের সেই অ্যাকশন হিরো ২০০০ এর প্রথম দশকে হলেন কমেডি কিং। ‘হেরা ফেরি’ থেকে শুরু করে ‘ভুল ভুলাওয়া’, ‘হেই বেবি’ থেকে ‘হাউজফুল’। কিন্তু পরের দশকে দেখা গেলো অক্ষয় কোন নির্দিষ্ট ধারায় রইলেন না। একের পর সিনেমা করলেন আর তার মধ্যে ‘রুস্তম’, ‘গোল্ড’, ‘কেসারি’ অনেকটাই ভিন্ন। বিশেষত এই তিন সিনেমায় আমার মনে হয়েছে অক্ষয় তার নিজের অভিনয়ের চেয়ে চরিত্রের প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন। আর সেক্ষেত্রে তিনি সফলও।

কিন্তু অক্ষয়ের এ সফলতার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ পরিশ্রমের গল্প। তার শুরুটা এমন সহজ, সফল ছিল না সেটা আমরা সবাই কম বেশি জানি। বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত। বেড়ে ওঠা চাঁদনী চকে হলেও অক্ষয়ের আদি নিবাস পাঞ্জাবের অমৃতসর। জন্ম ১৯৬৭ সালে। তার আসল নাম রাজীব হারি ওম ভাটিয়া।
খেলাধুলা এবং মার্শাল আর্টে ঝোঁক ছিল অক্ষয়ের। ডন বস্কো স্কুলে পড়ার সময়েই তিনি মার্শাল আর্ট শিখতে শুরু করেন। পরবর্তীতে ব্যাংককে গিয়ে তায়কোয়ান্দোতে ব্ল্যাক বেল্ট লাভ করেন। বাবার ইচ্ছেতেই টাকা পয়সা জমিয়ে তার থাইল্যান্ড যাত্রা। সেখানে থাই বক্সিংও শেখা হয়।
এর পরের গল্পটা একটু অদ্ভুত। একজন সফল নায়কের কষ্টের জীবনের গল্প। ব্যাংকক থেকে মুম্বাই ফিরে অক্ষয় মার্শাল আর্ট শেখাতে শুরু করেন। তাতে না পোষালে কলকাতায় এক ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজ নেন। শুধু তা-ই নয় দিল্লী, এমনকি ঢাকার একটি হোটেলেও কাজ করেছিলেন অক্ষয়। এমনও শোনা যায় থাইল্যান্ডে একটি হোটেলে প্রধান ওয়েটার ছিলেন তিনি।
এক সময় জয়েশ শেঠ নামের এক ফটোগ্রাফারের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন অক্ষয়। সে সময় তাকে মডেলিং শুরু করার কথা বলা হয়। সেই থেকেই শুরু। অক্ষয় বিভিন্ন সিনেমায় ছোট খাটো চরিত্র করা শুরু করেন। ১৯৯১ সালে রাজ সিপ্পির ‘সওগান্ধ’ দিয়ে মূলত অক্ষয়ের সিনেমা ক্যারিয়ার শুরু। এরপর একে একে কাজ করেছেন অনেকের সঙ্গে। সেই তালিকায় ভাট থেকে শুরু করে যশ চোপড়া, সকলেই আছেন। বরং নতুন যারা আসছেন তারাও অক্ষয়ের সাথে যুক্ত হচ্ছেন।

বলিউড কিংবা যে কোন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির স্টারদের চেয়ে অক্ষয় কুমার ব্যতিক্রম। কেননা বলিউডের খুব কম সংখ্যক সেলিব্রিটির মাঝে তিনি একজন যিনি মদ্যপান করেন না (করলেও সামান্য)। দ্রুত ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা তার অভ্যাস। তার দিন শুরু হয় ভোর চারটায়। এ কারণে বলিউডে তিনি ‘গোয়ালা’ নামেও অভিহিত। কেননা গোয়ালারা ভোর সকালে উঠে দুধ দিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছায়। হয়ত কিছুটা শ্লেষ করেই অক্ষয়কে এ নামে ডাকা হয়, কিন্তু অক্ষয় সেসবের ধার ধারেন না।
মূলত জীবনের কঠিন বাস্তবতা দেখে আসা অক্ষয় কুমার নিজেকে ধরে রাখতে জানেন। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পরিবর্তন করেছেন তিনি। বলিউডে যে সময়ে যে ধারার সিনেমা ব্যবসাসফল হয়েছে, সেদিকে মনোযোগ দিয়ে সেই ঘরানার সিনেমাই করেছেন। সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমার রিমেকেও তিনি এগিয়ে। তাই ক্যারিয়ারে যেমন অসাধারণ কিছু সিনেমা আছে, তেমনি আছে বস্তাপচা অনেক সিনেমা। কিন্তু শেষ অবদি অক্ষয় বলিউডের অন্যতম সুপারস্টারে পরিণত হয়েছেন। এক সময়ে দাবী করেছেন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক। আবার, খিলাড়ী অক্ষয় দিনে দিনে সামাজিক সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন, সিনেমা (টয়লেট, প্যাড ম্যান) করতে এগিয়ে এসেছেন।
অক্ষয়ের দাম্পত্য সঙ্গী বলিউডের প্রথম সুপারস্টার রাজেশ খান্নার কন্যা টূইঙ্কেল খান্না। ২০০১ সালে বিয়ের পর তাদের সম্পর্ক নিয়ে কোন বিপরীত কানাঘুষা শোনা যায়নি কখনও। এক পুত্র এবং এক কন্যার জনক অক্ষয় পারিবারিক জীবনে সুখি মানুষ। ক্যালেন্ডারের হিসেবে আজ তার চুয়ান্ন তম জন্মদিন।