বছর শেষে জাগো বাহে অ্যান্থোলজির ‘বাংকার বয়’ গল্পটি আমাদের এমন একজন কিশোর অভিনেতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো, যার মধ্যে আছে প্রতিভা, দক্ষতা এবং নজরকাড়া স্ক্রিন প্রেজেন্স...

নির্মাতা সুকর্ণ শাহেদ ধীমান প্রায় চার বছরের বিরতির পর সম্প্রতি নির্মাণ করলেন অসাধারণ নান্দনিক একটি ফিকশন ‘বাংকার বয়’। একথা বললে ভুল হবে না যে, অ্যান্থোলজি ঘরানার ওয়েব সিরিজ 'জাগো বাহে' এর শেষ কিস্তি 'বাংকার বয়' গল্প, নির্মান, টানটান সাসপেন্স এবং দুই অভিনয়শিল্পীর অভিনয় দক্ষতা এই স্বল্পদৈর্ঘ্য ফিকশনটিকে নিয়ে গেছে এক নান্দনিক জায়গায়। বিশেষ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রেক্ষাপটে এক পুরোপুরি ভিন্ন গল্প নিয়ে হাজির হয়েছে ‘বাংকার বয়’। এবং এই ফিকশনে সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসেবে হাজির হয়েছেন তরুন অভিনেতা আবদুল্লাহ আল সেন্টু। ত্রিশ মিনিট ব্যাপ্তির এই ফিকশনে যুদ্ধের ভয়াবহ সময়কালে একটি বাংকারে পাকিস্তানি অফিসারের সাথে একটি বাংকারে আটকে পড়া কিশোরের ভূমিকায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল সেন্টু। যদি সামনের দিনে তাকে ঠিকঠাক ভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে আবদুল্লাহ আল সেন্টু দক্ষ এক অভিনয় শিল্পী হিসেবে সামনে আসতে চলেছেন।

বছর শেষের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ফিকশনে নিজের অভিনয় দ্যুতি দিয়ে সারা বছরের অন্যতম আলোচিত পারফর্মার হিসেবে ইতিমধ্যে নিজের নাম লেখানো এই তরুনের শুরুটা ২০১৭-২০১৮ এর দিকে আহমদ শিবলুর ‘বিয়ন্ড ইকুয়েশন’ নামক একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এর মধ্যে দিয়ে ক্যামেরার সামনে কাজ করার মাধ্যমে। এছাড়া সৈয়দ শাওকীরর পরিচালনায় ‘তারুণ্যের আলোক শিখা’ তে অভিনয় করেন সেন্টু। তানভীর মোকাম্মেলের ‘রূপসা নদীর বাঁকে’তে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। খন্দকার সুমন এর পূণর্দৈঘ্য চলচ্চিত্র ‘সাঁতাও’ তে অভিনয় করেছেন তিনি। এটি এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে। টাকা এবং দাগ নামের দুটি নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি। অল্প সময়ে ব্যতিক্রমী বেশকিছু চরিত্রে অভিনয় করলেও ‘বাংকার বয়’ তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরা হচ্ছে।

‘বাংকার বয়’ তে অভিনয়ের সুযোগ কিভাবে এলো, সেটা জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল সেন্টু জানান, "ধীমান ভাই তার ফিকশনে ‘আকবর’ চরিত্রের জন্য মনমতো কাউকে পাচ্ছিলেন না। তখন শান্ত ভাইয়া, যিনি ‘বাংকার বয়’ এর প্রধান এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর তিনি ধীমান ভাইকে ‘তারুণ্যের আলোকশিখা' দেখতে নিয়ে যায় শাওকী ভাইয়াদের অফিসে। সেখানেই তখন ধীমান ভাইয়া আমি এই চরিত্রে জাস্টিস করতে পারবো কিনা জানতে চাইলে সবাই আমার অজান্তেই শান্ত ভাই,শাওকী ভাই, অনীম ভাই, রাফি ভাই, মাসুম ভাই, সনেট ভাই ভরসা দেয় ধীমান ভাইকে যে সেন্টুকে নিয়ে তুমি কাজটা করতে পারো।"

বাংকার বয়ের একটি দৃশ্যে সেন্টু

কিশোরগঞ্জ থেকে চন্দ্রাবতী থিয়েটারের হয়ে প্রতি শুক্রবার বিটিভিতে শো করা সেন্টুর এভাবেই নিজের অজান্তেই ‘বাংকার বয়’তে সুযোগ পাওয়া। সেন্টু আরো জানান, "এখানে মজার এবং মনে রাখার মতো ঘটনা হলো, লুক টেস্টের দিন শ্যুটিং এর সময়কার কস্টিউমস পড়েই আমি ‘লাইট ক্যামেরা অবজেকশন’ এর শুটিং দেখে রাত ১০ টার দিকে বাসায় ফিরেছি তাও হেঁটে।"

এরপরে সেন্টুর একটানা রিহার্সাল শুরু হয় ‘বাংকার বয়’ এর জন্য। প্রথম দিনই মোস্তাফিজুর নূর ইমরান এর সাথে নূর রিহার্সালে যুক্ত হন তিনি। এমনকি একটি কুকুরের সাথে রিহার্সাল করেছেন টানা ৮ দিন। ওজন কমানো, চাপা ভাঙ্গা, চোখের ব্যায়াম, চরিত্রে মিশে যাবার জন্য কথা কম বলা, কম হাসি সহ আরো অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সেন্টুকে। এছাড়া বেশকিছু সিনেমাও দেখিতে হয়েছে তাকে। তারেক মাসুদের মুক্তির গান এই লিষ্টের অন্যতম একটি নাম। এছাড়া ইউটিউবে একটি ভিডিওতে আবু সালেহ নামে একজন ১৩ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস জানার সুযোগ হয় তার যে কিনা একা একটা বাংকার সামলিয়ে ছিলো তাকে দেখে আকবর চরিত্রে পুরোপুরি মানানসই হবার জন্য ভেতর থেকে বাড়তি এক আগ্রহ এবং ভালো করার জন্য উৎসাহী হন সেন্টু।

তারপরে একটা সময় শ্যুটিং শুরু হয় এবং সেখানে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান এর মতো শক্তিশালী অভিনেতার সাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেন তিনি। ‘বাংকার বয়’ ফিকশনে এই দুই অভিনয়শিল্পী রীতিমতো অভিনয় দক্ষতার সফল ছাপ রেখেছেন। ফিকশন শুরুর প্রথম মিনিট থেকেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি হতাশ করবেন না। গলায় ব্যাগ ঝুলিয়ে একটি পাকিস্তানি ক্যাম্পের চারপাশে ঘুরঘুর করা বাঙালী এক কিশোর আকবর চরিত্রে তিনি ছিলেন সাবলীল। বাংলা ভাষায় পাশাপাশি উর্দু ভাষাতেও তিনি সংলাপ ডেলিভারি করেছেন এবং সেসব শুনতে অসুবিধা হয়নি। বিশেষ করে কিছু কিছু দৃশ্যতে তো তার অভিনয় এবং এক্সপ্রেশন ছিলো দেখার মতো। সবমিলিয়ে বলা যায় ‘বাংকার বয়’ আমাদের এমন একজন কিশোর অভিনেতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো যার মধ্যে আছে প্রতিভা, দক্ষতা এবং নজরকাড়া স্ক্রিন প্রেজেন্স। ওটিটির কল্যানে সামনের দিনে আবদুল্লাহ আল সেন্টুর মতো এমন প্রতিভাবান শিল্পী আরো বেশি হাজির হবেন নিজেদের অভিনয় দ্যুতি নিয়ে সেটাই প্রত্যাশা।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা