নিজের একটা স্বতন্ত্র সঙ্গীতের ধারা তো তৈরী করেছেনই, পাশাপাশি উপমহাদেশের মিউজিকের 'বেঞ্চমার্ক' হিসেবেই নিজেকে করেছেন প্রতিষ্ঠিত। কায়ক্লেশে বড় হয়ে ওঠা, গানকে আঁকড়ে ধরে বিশ্বমঞ্চে ঝলসে ওঠা সেই এ আর রহমানের পঞ্চান্নতম জন্মদিনে রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা...

যে বলিউডি মিউজিক মানেই আমরা ধরে নিই খানিকটা টুকলি, খানিকটা কপি-পেস্ট আর খানিকটা ঘষামাজা, যে বলিউডি মিউজিক মানেই আনু মালিকের চৌর্যবৃত্তির বিস্তর বাড়বাড়ন্ত, ভাবলে অবাক লাগে, সে বলিউডে এ আর রহমান নামেরও একজন আছেন, যিনি বিশ্ব-সঙ্গীতের এমন এক প্রতিনিধি, যাকে নিয়ে পুরো পৃথিবী গর্ব তো করতে পারেই, পাশাপাশি যার সংগীত-বৈচিত্র‍্য নিয়ে গবেষণ করা যেতে পারে নিরন্তর।  

এ আর রহমান! 

সাল ১৯৯২। মুক্তি পায় মনি রত্নমের সিনেমা-  রোজা। মুক্তির পরেই তুমুল সাড়া ফেলা এ সিনেমার সবচেয়ে মুগ্ধকর দিক হয়ে থাকে- গান। যে গানগুলোর সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত আমাদের বিশেষ সে মানুষটি,  যিনি আল্লা রাখা রহমান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, 'রোজা সিনেমার' মিউজিক লিস্ট এতটাই সমৃদ্ধ এবং বলিউডের প্রচলিত ঘরানার বাইরে এসে এ সিনেমায় এমন অনবদ্য কাজ করেন এ আর রহমান, তা যেন রীতিমতো স্থানু করে দেয় উপমহাদেশের আপামর দর্শককে। শীতল কাশ্মীরের প্রেক্ষাপটে এক গল্প, সেখানের গানগুলোও যেন হয়ে থাকে হিমশীতল টুকরো টুকরো বরফকুচি। বোদ্ধামহল থেকে সাধারণ জনস্রোত, সবখানেই নীরব এক বিস্ফোরণ ঘটায় এই সিনেমার গানগুলো। তামিল ভাষাতে। হিন্দিতেও। 

রোজা! 

এই সিনেমার ফলাফলে এ আর রহমান জাতীয় পুরস্কারও পেয়ে যান।  তামিল সিনেমায় 'এক উদীয়ান তারকা' হিসেবেই তখন গণ্য করা হচ্ছিলো তাকে। কিন্তু অবাক করা বিষয় এটাই, হিন্দি সিনেমার বোদ্ধামহল এই সাফল্যকে দেখা শুরু করেন এক 'দূর্ঘটনা' হিসেবে। এই সিনেমার পরে যেখানে এ আর রহমানকে নিয়ে রীতিমতো হুল্লোড় করার কথা, সেখানে তাকে একরকম 'ব্রাত্য' করা হয় বলিউডে। বলিউডি প্রযোজক-পরিচালকেরা সেসময়ে যতটা না ভরসা আনু মালিক কে করতেন, তার সিকিভাগও এ আর রহমানকে করতেন কী না, তাতেও ছিলো বিস্তর সন্দেহ। ফলাফল- এ আর রহমান তখন অনেকটাই চলে যান ব্যাকফুটে। হন্যে হয়ে সুযোগ খুঁজতে থাকেন। খুঁজতে খুঁজতে সুযোগ তিনি পেয়েও যান। তিনি যে বলিউডে রাজত্ব করতে এসেছেন, ভারতের হয়ে মিউজিকে 'অস্কার' পেতে এসেছেন, গ্লোবাল আইকন হতে এসেছেন... সেটিরই যেন দেখা পাওয়া যায় তার ক্যারিয়ারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ 'বোম্বে' সিনেমায়। এ সিনেমার মিউজিক কম্পোজিশন হয় আরো দুর্দান্ত। মানুষ ক্রমশ উপলব্ধি করে, এ আর রহমানের সঙ্গীতে কোনো খুঁত নেই, কোনো দূর্ঘটনা নেই। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় না তাকে। ক্রমশই তিনি হয়ে ওঠেন ইন্ডিয়ান মিউজিকের 'দ্য বিগ থিং।' কিংবদন্তি। 

যদিও অস্কারজয়ী 'স্ল্যামডগ মিলিয়েনিয়ার' এর অসাধারণ মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টের সুবাদেই এ আর রহমান 'গ্লোবাল আইকন' এর খেতাব পেয়েছিলেন, কিন্তু এই বিশেষ অর্জনের পরবর্তীতে  মোটেও থেমে থাকেননি তিনি। অর্জন করেছেন বাফটা, গ্লোডেন গ্লোব, গ্রামি'র মত একের পর এক বৈশ্বিক স্বীকৃতি। নিজের একটা স্বতন্ত্র সঙ্গীতের ধারা তো তৈরী করেছেনই, পাশাপাশি উপমহাদেশের মিউজিকের 'বেঞ্চমার্ক' হিসেবেও নিজেকে করেছেন প্রতিষ্ঠিত। কায়ক্লেশে বড় হয়ে ওঠা, গানকে আঁকড়ে ধরে বিশ্বমঞ্চে ঝলসে ওঠা সেই এ আর রহমানের পঞ্চান্নতম জন্মদিনে রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। শঠতা-অসাধুতার এক ইন্ডাস্ট্রির ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হয়ে তার সৃষ্টিশীল কাজ পৌঁছে যাক কাছে দূরের সকল গন্তব্যে, জন্মদিনে এটাই থাকুক প্রত্যাশা।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা