নাইন্টি নাইন সংস: একইসাথে মেসমারাইজিং এন্ড কনফিউজিং!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
এই সিনেমার গল্প নিয়ে এ আর রহমান ১০ বছর ধরে ঘুরছেন। প্রোডিউসার পান নি তিনি তাই নিজেই পরে প্রোডিউস করার সিদ্ধান্ত নেন। এ আর রহমানের মনে হয় না আর কখনো সিনেমা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থাকবে এরকম অভিজ্ঞতার পরে!
99 Songs এই সিনেমার জন্য অপেক্ষা করছি বছর দুয়েক হল। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এই সিনেমার গল্প এ আর রহমান ১০ বছর ধরে নিয়ে ঘুরছেন। প্রোডিউসার পান নি তিনি তাই নিজেই পরে প্রোডিউস করার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর অভিনেতাদের বাছাই করা হয় ১০০০ জনের অডিশন নিয়ে। তাদের মিউজিক ট্রেনিং দেয়া হয় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে, এক্টিং স্কুলে পাঠানো আরও ভালো কাজ পাবার জন্য। তারপর ২০১৯ এ রেডি হয়ে যায় সিনেমা, সেটা হলে রিলিজ দিতে গিয়ে পেছাতে পেছাতে চলে আসে করোনা। তারপর আরও পিছিয়ে গিয়ে ২০২১ এ রিলিজ পেলো। এ আর রহমানের মনে হয় না আর কখনো সিনেমা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থাকবে এরকম অভিজ্ঞতার পরে!
যাই হোক সিনেমার প্রসঙ্গে আসি। মেসমারাইজড ও কনফিউজড বলার কারণ বলি। মেসমারাইজড এই জন্য যে, ভারতে আমি এরকম সিনেমা আগে দেখি নি। একে তো মিউজিক্যাল, আগাগোড়া। এমন না যে ৬-৮ টা গান। পুরো সিনেমাজুড়েই মিউজিক। এরকম মিউজিক্যাল তো ইন্ডিয়া থেকে দেখিই নি তাঁর উপর যুক্ত হয়েছে সিনেমার প্রেজেন্টেশন। ক্লিশেড গল্প, খুবই ক্লিশেড।
কিন্তু পুরো সিনেমাজুড়ে গল্পের চেয়ে প্রাধান্য বেশি দেয়া হয়েছে সে গল্পের ভেতরকার আবেগের ভিজুয়াল রিপ্রেজেন্টেশনে। আমি গান শুনছি, গান শুনতে শুনতে আমি চলে গেলাম অন্য কোন জগতে। এখানে সে জগতটা যেন নিয়ে এসেছেন রহমান ও পরিচালক। ফিলোসফির সাথে ফ্যান্টাসির অদ্ভুত সংমিশ্রণ ঘটেছে যেন এখানে। সাথে যুক্ত হয়েছে সিম্বলিজম। প্রতি ফ্রেমে ফ্রেমে সিম্বলিক কিছু না কিছু রাখা। প্রতিটা ফ্রেমকে যেন বাঁধিয়ে রাখা যায় সেরকম করে সাজানো। সিনেম্যাটোগ্রাফি অসম্ভব সুন্দর।
মিউজিকের কথা আলাদা করে বলতে গেলে অনেক কথা বলা হয়ে যাবে। অনেক অনেক গান, অনেক অনেক মিউজিক পুরো সিনেমাজুড়ে, কানে প্রশান্তি দিবে; হয়তো কানে লেগে থাকবে না। কিন্তু এ আর রহমানের গানগুলো তো এরকমই, একটু সময় দিতে হয় গ্রো করার জন্য। যখন কানে লেগে যাবে তখন আর ছাড়ানো যায় না।
উপরে মেসমারাইজড পোরশন গেল, এখন কনফিউশনের কথা বলি। আমার ধারণা এ আর রহমান শুধু গল্পটাই দিয়েছেন। স্ক্রিনপ্লেতে তিনি আর হাত দেন নি। কারণ, মূল যে গল্প সেটা ভালো, ক্লিশেড হলেও গল্পে একটা জার্নি আছে। কিন্তু ডিরেক্টর সে জার্নি দেখাতে গিয়ে কখনো তাড়াহুড়ো আবার কখনো খুব ধীর গতিতে এগিয়েছেন। কখনো এবরাপ্টলি নিয়ে গেছেন ফ্যান্টাসিতে, কখনো বেশি ফিলোসফিক্যাল হবার চেষ্টা করেছেন। হয়তো তিনি ভিজুয়ালি বেশি এট্রাক্টিভ করতে চেয়েছেন তাই গল্পের খেই হারিয়ে গেছে মাঝে মাঝেই। শেষে গিয়ে অদ্ভুত একটা দেশাত্ববোধ এনে মেজাজটা খারাপ করে দিয়েছেন। খুবই বিরক্ত হয়েছি যেটা দেখে। এসব জায়গাগুলো যদি না থাকতো সত্যিই একটা ত্রুটিহীন মিউজিক্যাল পাওয়া যেত ইন্ডিয়া থেকে।
এই সিনেমায় এ আর রহমান রক এনেছেন, সুফি এনেছেন, জ্যাজ এনেছেন, ক্ল্যাসিকাল এনেছেন, বিদেশী র্যাপ থেকে শিলং এর আঞ্চলিক সুর সবকিছু নিয়েই খেলেছেন তিনি। অভিনয়ের দিক থেকে ইহান ভাট প্রথম সিনেমা হিসেবে খুব ভালো কাজ করেছেন। ভিজুয়ালি স্টানিং ছিল পুরো সিনেমাটাই। কিছু গ্রাফিক্সের কাজ এমন ছিল যেটা আগে কোন সিনেমাতেই আমি দেখি নি, মিউজিক্যালে তো না ই। আবার কিছু গ্রাফিক্সের কাজ অসম্পূর্ণও মনে হয়েছে।
সব মিলিয়ে 99 Songs একটা এক্সপেরিয়েন্স। যারা মিউজিক পছন্দ করেন, মিউজিককে ম্যাজিক মনে করেন, পছন্দের সুরে সত্যিই চলে যান অন্য কোন জগতে তাদের জন্য অবশ্যই একটা দারুণ এক্সপেরিয়েন্স হতে পারে। বাকিদের একেবারেই মনঃপূত হবার কথা না। ভীষণ অন্যরকম সিনেমা! ভীষণ!